স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে চিকিৎসা না মেলায় স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন, মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ অসহায় পরিবার

দ্য কোয়ারি ওয়েবেডস্কঃ মালদায় স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের সুবিধা না মেলায় স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন জানিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রকে চিঠি লিখলেন এক গৃহবধূ। হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার বারোডাঙ্গা গ্রামে এই ঘটনার খবর প্রকাশ্যে আসতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।

দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত পিংকি দাস। প্রায় ১০  বছর আগে পার্শ্ববর্তী তুলসীহাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের মিরজাতপুর গ্রামের রঞ্জিত দাস এর সঙ্গে বিয়ে হয় তার। ছোট দুই সন্তান রয়েছে। কিন্তু পিংকির অভিযোগ বিয়ের ২ বছর পর থেকেই স্বামী প্রচন্ড অত্যাচার করত।

স্বামীর অত্যাচারে শ্বশুর বাড়ি ছেড়ে দুই সন্তানকে নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরেই রয়েছেন বাবার বাড়িতে। মা পেশায় দিনমজুর। বাবা ভ্যান চালক। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও সরকারি থেকে বেসরকারি সমস্ত হাসপাতালে ঘুরে চিকিৎসা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত থেকে গিয়েছেন তিনি। তাই চিকিৎসা না পেয়ে সপরিবারে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন করেছেন পিংকি দেবী।

একপ্রকার বাধ্য হয়েই চিকিৎসার জন্য প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে অসহায় দরিদ্র ওই পরিবার। অসুস্থ মেয়ে এবং অসহায় দরিদ্র মা-বাবা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কাতর আবেদন জানিয়েছেন প্রশাসনের মাধ্যমে।

মাথা এবং সারা শরীরে ব্যথা সহ বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে পিংকির। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড রয়েছে তাদের। কিন্তু একমাস ধরে বিভিন্ন সরকারী এবং বেসরকারী হাসপাতালে ঘুরেও মেলেনি চিকিৎসা।

অবশেষে হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নং ব্লকের বিডিওর দ্বারস্থ হয় অসহায় এই পরিবার। বাবার ভ্যানে করেই অসুস্থ পিংকিকে নিয়ে যাওয়া হয় ব্লক অফিসে অভিযোগ জানাতে। সেখানে পিংকির মা লক্ষ্মী দাস অভিযোগ জানান। আবেদন জানান যাতে তার মেয়ের চিকিৎসাটুকু হয়।

লড়াই হবে ত্রিশঙ্কু, আসনরফা নিয়ে এখনই মুখ খুলতে নারাজ বাম-কংগ্রেস

অসুস্থ পিংকি দাসের কথায়, “সারা শরীর এবং মাথায় প্রচন্ড ব্যথা। সারা শরীরে জ্বালা করে। আমার স্বামী আমাকে দেখেনা। আমার কিছু হয়ে গেলে ছোট দুই সন্তান অনাথ হয়ে যাবে। দরিদ্র বাবা-মায়ের পক্ষে চিকিৎসা করা সম্ভব না। স্বাস্থ্য সাথী কার্ড আছে। কিন্তু চিকিৎসা পাচ্ছিনা। মমতার সরকার তো সকলকে ফ্রিতে চিকিৎসা দেয়। আমিও আবেদন জানাচ্ছি যাতে আমিও চিকিৎসা পাই।”

হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নং ব্লক তৃণমূল সভাপতি মানিক দাস বলেন,”ঘটনাটি সত্যি বেদনাদায়ক। আমি হরিশ্চন্দ্রপুর হাসপাতালে যোগাযোগ করেছি। পরে চাঁচলে রেফার করা হয়। সেখানেও যোগাযোগ করেছি। আমি তাদের উপদেশ দিয়েছে কলকাতায় পিজি হাসপাতালে যেতে। আমরা সেখানে সম্পূর্ণ রকম চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেব। অসহায় মানুষের পাশে তৃণমূল কংগ্রেস সব সময় আছে।”

হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নং ব্লকের বিডিও অনির্বাণ বসু বলেন,”আমরা একটা অভিযোগ পত্র পেয়েছি।তবে তাতে পরিষ্কারভাবে কিছু নেই। আমাদের বিস্তারিত ভাবে জানতে হবে। প্রশাসন অবশ্যই পাশে দাঁড়াবে। আর যেসব হাসপাতাল স্বাস্থ্যসাথী লিস্টের অন্তর্ভুক্ত সেখানে গিয়ে চিকিৎসা না পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলায় সমস্ত ব্যাপারটি জানানো হবে।”

‘পিসি যাও যাও যাও’, বঙ্গ বিজেপির নতুন প্রচার

এদিকে ভোটের মুখে এই ঘটনা নিয়ে তৃণমূলকে কটাক্ষ করতে ছারেনি বিজেপি। বিজেপি নেতা রূপেশ আগরওয়াল বলেন, “তৃণমূল সরকারের সম্পূর্ণটাই ভাঁওতাবাজি। কেন্দ্র সরকারের আয়ুষ্মান যোজনা থেকে মানুষকে বঞ্চিত করে রেখেছে। এদিকে সংবাদমাধ্যম খুললেই স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে ভুরি ভুরি অভিযোগ প্রতিদিন উঠে আসছে। হরিশ্চন্দ্রপুর বারোডাঙ্গা গ্রামের একটি পরিবার চিকিৎসা না পেয়ে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন করেছে। এর থেকে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না।”

সম্পর্কিত পোস্ট