Arvind Kejriwal : বিরোধী শিবিরের মুখ কেজরিওয়াল? কংগ্রেসের ব্যর্থতায় ভাবতে শুরু করেছে আমজনতা

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ এবার কি তবে নরেন্দ্র মোদি বনাম অরবিন্দ কেজরিওয়াল ( Arvind Kejriwal )? আপের পাঞ্জাব জয়ের পর এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। পরিসংখ্যান বলছে বিজেপির বাইরে একমাত্র কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টি এই মুহূর্তে একাধিক রাজ্যে ক্ষমতায় আছে। কিন্তু কংগ্রেসের যা বেহালদশা তাতে ২০২৩ এর বিধানসভা নির্বাচনের পর তারা আদৌ রাজস্থানের ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে।

সেক্ষেত্রে সবেধন নীলমণির মতো একমাত্র ছত্তিশগড় তাদের ভরসার জায়গা হয়ে থাকতে পারে। এই রাজ্যটিতে এখনও পর্যন্ত কংগ্রেসের অবস্থা তুলনামূলকভাবে ভালো। যথেষ্ট জনপ্রিয়তা আছে মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলের। এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠতে পারে কংগ্রেস তো এখনও আপের সমসংখ্যক রাজ্যে ক্ষমতায় আছে, তাহলে অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে এতটা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে কেন?

দিল্লি দিয়ে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের ( Arvind Kejriwal ) দৌড় শুরু হয়। এটা ঠিক দিল্লি পূর্ণাঙ্গ রাজ্য নয়, সেখানে অনেক কিছু কেন্দ্রীয় সরকারের উপর নির্ভর করে। অতীতে বিভিন্ন সময় দেখা গিয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ উঠলেই কেজরিওয়াল সরকার তা কেন্দ্রের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে। দাবি করেছে দিল্লি পূর্ণাঙ্গ রাজ্য না হওয়ায় তাদের হাত-পা বাঁধা, কিছু করতে পারছে না।

সে দিক থেকে দেখতে গেলে পাঞ্জাব আপের কাছে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে। এই প্রথম তারা একটি পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের ক্ষমতায় এল। এখানে রাজ্যের বিষয়গুলি সরাসরি কেন্দ্রের উপর নির্ভরশীল নয়। তারা পাঞ্জাবে কীভাবে পাঞ্জাবে প্রশাসন চালায় সেদিকে নজর থাকবে সারা দেশের। সফল হলে কেজরিওয়ালের ( Arvind Kejriwal ) প্রভাব অন্যান্য রাজ্যেও ছড়িয়ে পড়ার সমুহ সম্ভাবনা আছে। আর যদি ব্যর্থ হয় তবে কী হবে সেটা ভবিষ্যৎই বলবে।

কিন্তু এই মুহূর্তে দিল্লি এবং পাঞ্জাবের বাইরে উত্তর ও পশ্চিম ভারতের আরও বেশকিছু রাজ্যে আপের ( Arvind Kejriwal ) যথেষ্ট প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে। হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ, গুজরাটে তাদের প্রভাব আছে। এবারের ভোটেও তারা গোয়ায় খাতা খুলেছে। আগামীদিনে সৈকত রাজ্যে আপ ভালো কিছু করতেই পারে।

দেখা যাচ্ছে আপ ( Arvind Kejriwal ) যখন ক্রমশ দেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে তখন কংগ্রেস ক্রমশই পিছু হটছে। পাঞ্জাবে তাদের ক্ষমতাচ্যুত হওয়াটাই একমাত্র বিষয় নয়। পঞ্চনদের রাজ্যে দেশের সর্ব প্রাচীন রাজনৈতিক দলটি যেভাবে পরাজিত হয়েছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

এমনকি সম্ভাবনা জাগিয়েও উত্তরাখণ্ডে তারা ক্ষমতা দখল করতে পারেনি। উত্তর-পূর্বের মণিপুরে তাদের অবস্থা আরও ভয়াবহ। প্রধান বিরোধী দলের জায়গাও ধরে রাখতে পারেনি। কংগ্রেসের থেকে এনপিপি, জেড(ইউ), এনপিএফ বেশি আসন বেশি আসন পেয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রীদের হারার ভোট, পাঞ্জাব থেকে উত্তরাখণ্ড এক ছবি

ভয়াবহ অবস্থা উত্তরপ্রদেশে। মাস ছয়েক আগে থেকে প্রিয়াঙ্কা গান্ধিকে ভোট ময়দানে নামিয়েও লাভ হয়নি। উল্টে দেশের সর্ববৃহৎ রাজ্যটিতে মাত্র ২.৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে কংগ্রেস। বিধায়ক সংখ্যা ৭ থেকে ২ তে নেমে এসেছে! সব মিলিয়ে বলা যায় পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটে ভয়াবহ ভরাডুবির মুখে পড়েছে কংগ্রেস।

Arvind Kejriwal

লোকসভা ভোটের আগে বিভিন্ন সময় মিলিয়ে কর্ণাটক, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগড়ের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলিতে নির্বাচন হওয়ার কথা। কর্নাটকের বিজেপির অবস্থা যথেষ্ট খারাপ। কিন্তু কংগ্রেস কি আদৌ নিজেদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মিটিয়ে দক্ষিণের একমাত্র রাজ্য থেকে বিজেপিকে পরাস্ত করতে পারবে?

গতবার মধ্যপ্রদেশে সরকার গঠন করেও যেভাবে বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়েছিল, তার বদলা কি এবার নিতে পারবে কংগ্রেস? রাজস্থানে অশোক গেহলট ও শচীন পাইলটের মধ্যে দ্বন্দ্ব মিটিয়ে আদৌ কি ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে কংগ্রেস?

এইরকমই গুচ্ছ গুচ্ছ প্রশ্ন উঠছে কংগ্রেসকে ঘিরে। ভালো করে খতিয়ে দেখলে বোঝা যাবে অন্তর্দ্বন্দ্ব সামলাতেই আগামী দিনে অনেকটা সময় কেটে যাবে কংগ্রেস নেতৃত্বের। অপরদিকে পাঞ্জাব দখল করে কেজরিওয়ালের ( Arvind Kejriwal ) ভাবমূর্তি এই মুহূর্তে সেন্সেক্সের চেয়েও ঊর্ধ্বমুখী!

কেজরিওয়ালকে নিয়ে আপে মধ্যে কোন‌ও অসন্তোষের খবর নেই। ভারতীয় রাজনীতিতে নতুন দলগুলির মধ্যে আপ প্রশ্নাতীতভাবে সবচেয়ে সফল। সেইভাবে কোন‌ও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের খবর নেই। বরং দলটির ভাবমূর্তি অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন। দুর্নীতির প্রশ্নে চ্যালেঞ্জ করবে এইরকম কোন‌ও পরিস্থিতি এখনও পর্যন্ত তৈরি হয়নি।

কংগ্রেসের মুখ কে হবে এই নিয়ে যখন বিতর্ক তুঙ্গে, তখন নিষ্কলুষ ভাবমূর্তি ও দলীয় নেতৃত্বের প্রশ্নহীন সমর্থন অরবিন্দ কেজরিওয়ালের অন্যতম পুঁজি। খুব সংগত কারণেই আমজনতার মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়েছে মোদির মোকাবিলা কেউ যদি করতে পারে তবে সেটা অরবিন্দ কেজরিওয়াল!

এতো তাড়াতাড়ি এই নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছনো বেশ কঠিন। কারণ এখনও দেশের বেশিরভাগ রাজ্যে আপের সাংগঠনিক অস্তিত্ব নেই। সবচেয়ে বড় কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো কেজরিওয়াল কিন্তু ভারতীয় রাজনীতির ময়দানে খুব একটা পুরোনো নন। তবু আমজনতার একটা বড় অংশ যে মোদি বিরোধীতার প্রশ্নে কেজরিওয়ালকে ( Arvind Kejriwal ) ঘিরে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই।

এক্ষেত্রে আগামী দেড় বছর খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময়ের মধ্যে যে রাজ্যগুলিতে নির্বাচন আছে সেখানকার ফলের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে ২৪ এর লোকসভা ভোটে কেজরিওয়াল বিরোধী শিবিরের মুখ হয়ে উঠবেন কিনা!

সম্পর্কিত পোস্ট