বছর ঘুরলেও কাশ্মীরের স্থিতিশীলতা প্রশ্নাতীত
শুভজিত চক্রবর্তী
“যতদিন জম্মু-কাশ্মীর কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল হিসাবে থাকবে ততদিন বিধানসভায় লড়ছি না। সাফ জানিয়ে দিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ।
গত বছরের ৫ অগাস্ট। মোদি টু পয়েন্ট ও সরকারের সবথেকে বড়ো ঘোষণা। জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৫(এ) এবং ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়া। গোটা জম্মু-কাশ্মীরকে ভেঙে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখের জন্ম দেওয়া।
গত বছর পর থেকে জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে কম আলোচনা হয়নি। সংসদের ভিতরে এবং সংসদের বাইরে বিস্তর আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছেন রাজনৈতিক নেতা থেকে আম জনতা। তবুও জম্মু-কাশ্মীরের সামগ্রিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে করছেন না রাজনৈতিক মহলের অনেকেই।
পিডিপি নেতা এবং প্রাক্তন মন্ত্রী নাইম আখতার দ্য ওয়ারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে নিয়ে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ গঠনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার চেষ্টা করছিল বিজেপি সরকার।
তিনি আরও বলেন, জম্মু-কাশ্মীর থেকে শুধু৩৭০ ধারা তুলে নিলেই উৎসব শুরু করলে হবে না। যেদিন জম্মু-কাশ্মীরে সেনা মোতায়েন করার কোনও প্রয়োজন হবে না, সেদিন সরকারের উচিত দিনটিকে উদযাপন করা।
গত বছর ৫ অগাস্টের আগে জম্মু-কাশ্মীরের যতজন নেতাদের ডিটেনশনে রাখা হয়েছিল তাদের মধ্যে একজন পিডিপি নেতা নাইম আখতার।
গত মাসেই মুক্তি পেয়েছেন তিনি। ২০১৫ থেকে ২০১৮ অবধি বিজেপির সঙ্গে সরকার গঠন করে মুখ্যমন্ত্রী পদে থেকেও এখনও মুক্তি পাননি পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি। বরং ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তার ওপর পাবলিক সেফটি এক্ট লাগু করা হয়।
সাক্ষাৎকারে আখতার বলেন, বিজেপির প্রধান উদ্দেশ্য ছিল জম্মু-কাশ্মীরকে সম্পূর্ণভাবে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করা। ভবিষ্যতে আর কোনও সময় এই রাজ্য থেকে মুসলিম মুখ্যমন্ত্রী যাতে না নির্বাচিত হয় সেই চেষ্টাই করছে বিজেপি।
জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়ার আগে বহু সক্রিয় রাজনৈতিক নেতাদের বন্দি করা হয়েছে। টুইটারে দাবী করেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহ।
এখনও অবধি বহু নেতাদের ডিটেইন করে রাখা হয়েছে। সংসদে যে সমস্ত কারণ দেখানো হয়েছিল যেমন জঙ্গি দমন, জম্মু-কাশ্মীরের উন্নয়ন, এক বছর পর জম্মু-কাশ্মীরে সেই সমস্ত কিছুর দেখা নেই দাবী প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর।
উৎসব ও সামাজিক অনুষ্ঠান থাকায় লকডাউন প্রত্যাহার ২ ও ৯ আগষ্ট
সুপ্রিম কোর্টে এই মামলা উপস্থিত হলে জম্মু-কাশ্মীরের পরিবর্তন গ্রহণযোগ্য নয়, এমনটাই তুলে ধরা হবে। টুইটারে সাফ বার্তা জম্মু-কাশ্মীর ন্যশনাল কনফারেন্সের।
নির্বাচনী লড়াইয়ে অংশগ্রহণ থেকে সরে দাঁড়ানো নিজের ব্যক্তিগত বলে দাবী করেছেন ওমর আবদুল্লাহ। দল এবং দলীয় নেতাদের আলাদা সিদ্ধান্ত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত কয়েক দশক ধরে নির্বাচনী ইস্তেহারে জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার কথা উল্লেখ করে আসছে বিজেপি। ২০১৯ এর নির্বাচনে সেই লক্ষ্য নিয়েই ঘুটি সাজাতে শুরু করেন মোদি-শাহ।
দেশের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য এবং সংসদে লড়াইয়ের জন্য গেরুয়া শিবিরের প্রয়োজন ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং অমিত শাহের মত ধুরন্ধর রাজনীতিবীদের। এই দুটোকে হাতিয়ার করে গত বছর ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়া হয়৷ এর আগে
জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়ার আগে অমরনাথ যাত্রা বাতিল করে সরকার। এরপর ৪ অগাস্ট গুপকার রোড থেকে বন্দি করা হয় একের পর এক রাজনৈতিক নেতাদের।
৫ অগাস্ট জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়ার পরেই রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়। একাধিকবার বিরোধী নেতারা শ্রীনগর বিমানবন্দরে উপস্থিত হলেও তাদেরকে আটকে দেওয়া হয়।
শুধুমাত্র জাতীয় স্তরে নয়, আন্তর্জাতিক স্তরেও কাশ্মীর নিয়ে আলোচনা কম হয়নি। আন্তর্জাতিক মঞ্চে একাধিকবার কাশ্মীর ইস্যুতে কোণঠাসা করার চেষ্টা করেছে পাকিস্তান৷ কিন্তু চিন ছাড়া কাউকেই পাশে পায়নি তারা।
সম্প্রতি লাদাখ সীমান্তে ভারত এবং চিনের গরমাগরম পরিস্থিতি এবং গালওয়ান ভ্যালিতে রক্তক্ষরণের ঘটনা পুরানো ইতিহাসকে খানিকটা উস্কে দিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়া এবং দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিবর্তনের ছবি চিন ভালোভাবে নেয়নি। তাই ভারতের ওপর লালচোখ দেখিয়ে জবাব দিতে চাইছে তারা।
যদিও কাশ্মীরের সমস্যা বহুদিনের। কিন্তু কাশ্মীর নিয়ে মোদি সরকারের চিন্তাভাবনা তাদেরকেই ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে। যার ফলশ্রুতি হিসাবে ঝাড়খন্ড, মহারাষ্ট্র এবিং হরিয়ানার বিধানসভা নির্বাচনে পর্যদুস্ত হয়েছে গেরুয়া শিবির। ঝাড়খন্ড এবং মহারাষ্ট্রে ক্ষমতাশালী বিজেপি কে সরিয়ে নিজের পায়ের তলার মাটি শক্ত করেছে কংগ্রেস৷
রাজনৈতিক মহলের মতে, আগামীদিনে জম্মু-কাশ্মীরের উন্নতি প্রশ্নাতিত। সেইসঙ্গে কাশ্মীর ইস্যুকে হাতিয়ার করে বিজেপি নির্বাচনী প্রচার করবে কিনা সেনিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।