জামিন পেলেন আশিস মিশ্র, ভোটের মুখে কোন সমীকরণ?
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্ক: জোর যার মুল্লুক তার। সংবিধানের মূল সুর থেকে সরে এসে ভারতের এটাই এখন অবস্থা। অসহায় নিপীড়িতের কথা আর কেউ ভাবে না। বা ভাবার চেষ্টা করলেও সংখ্যাগরিষ্টের মতবাদ যেভাবে সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কব্জা করে নিয়েছে তাতে বিচারের বাণী নিভৃতেই কাঁদছে।
আর তাই মোক্ষম সময়ে জামিনও পেয়ে যান আশিস মিশ্ররা। তাতে প্রাথমিক ক্ষোভ প্রশমনের জন্য শাস্তি শাস্তি নাটকও করাও হয়, আবার নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে বার্তাও দেওয়া যায়।
তখন কৃষক আন্দোলন চলছে। এদিকে ধীরে ধীরে উত্তরপ্রদেশের ভোটের উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে। তবুও কৃষিপ্রধান পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে প্রবেশ করতে পারছেন না বিজেপি নেতা-কর্মীরা। সেই সময় বিক্ষোভকারী কৃষকরা পথ আটকালে তাদের উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনির ছেলে আশিস মিশ্র। এই ঘটনায় চার বিক্ষোভকারী কৃষকের মৃত্যু হয়।
যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেন মন্ত্রীপুত্র। কিন্তু বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক তথ্য-প্রমাণ দেখে শেষ পর্যন্ত বিরোধীদের চাপে তাকে গ্রেফতার করে যোগী আদিত্যনাথের পুলিশ। কিন্তু ছেলের বিরুদ্ধে এইরকম গুরুতর অভিযোগ থাকলেও আশ্চর্যজনকভাবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেননি অজয় মিশ্র।
বৃহস্পতিবার উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম পর্বের ভোট ছিল। সেই দিনই তাৎপর্যপূর্ণভাবে জামিন পেয়ে জেলের বাইরে বেরিয়ে এল ওই মন্ত্রীপুত্র। যদিও বিজেপির দাবি এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। সত্যি কি তাই?
পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের ৫৮ টি আসনে বৃহস্পতিবার ভোট হয়। প্রায় রেকর্ড ৬৫ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পড়ে। কৃষক আন্দোলনের পর এই জায়গাগুলি বিজেপির বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে। তাছাড়া রাজ্যের বাকি অংশেও একাধিক সম্প্রদায় বিজেপির উপর ক্ষুব্ধ। জাতপাতের রাজনীতিতে দীর্ণ উত্তরপ্রদেশে ব্রাহ্মণদের একটা বড় অংশও যোগী আদিত্যনাথের উপর খুশি নয়।
এদিকে কংগ্রেস থেকে জিতিন প্রসাদকে দলে আনলেও উত্তরপ্রদেশে বিজেপি সবচেয়ে বড় ব্রাহ্মণ নেতা হলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনি। সেই তাঁর ছেলে জেলে থাকলে ভোট ময়দানে বিজেপির বিপদ আছে বইকি।
বিভিন্ন সূত্রের খবর বিজেপির একাংশ অভিযুক্ত মন্ত্রীপুত্রকে নিয়ে নরম অবস্থান এর বিপক্ষে ছিলেন। তাঁদের যুক্তি ছিল এতে কৃষকরা আরও ক্ষেপে যাবে। কিন্তু খোদ অমিত শাহ তাদের এই দাবিতে জল ঢেলে দেন। তিনি নাকি পরিষ্কার জানিয়েছেন কৃষকরা এমনিতেও বিজেপিকে ভোট দেবে না। তাই তারা কীসে খুশি হবে সেই কথা না ভেবে বাকি সম্প্রদায়গুলির (পড়ুন ব্রাহ্মণ) দিকে তাকানো উচিৎ!
অর্থাৎ যারা আমার সমর্থক নয় তাদের ন্যায় বিচার দেওয়ার কোনও দায় নেই আমার, এমনই মনোভাব বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের। আর তাই কৃষকদের ভোটের আশা ছেড়ে ব্রাহ্মণদের পাশে পেতেই মন্ত্রীপুত্রের জামিনের ব্যবস্থা হয়।
একবিংশ শতকের ভারতে সংবিধান মেনে বিচার নয়, পক্ষ দেখে ঠিক হয় তুমি ন্যায়বিচার পাবেন না কি আজীবন কেঁদেই যাবে!