‘সিজ ফায়ার করো, আদমী মর গেয়া’, অসম পুলিশকর্তার আবেদনের পরেও চলেছে গুলি
দ্য কোয়ারি ডেস্ক: অসম মিজেরাম পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ ও গুলিচালানোর ঘটনায় যেন রীতিমতো যুদ্ধক্ষেত্র ছিল দুই রাজ্যের সীমানা। মিজোরামের দিক থেকে চলছে অনবরত গুলি। আর রক্তাক্ত অসম পুলিশকর্মীদের দেহ পড়ে যাচ্ছে একের পর এক। ভয়াবহ সেই মুহূর্তের ভিডিও ছড়িয়েছে।
ভাইরাল হওয়া এই ভিডিওতে শোনা যাচ্ছে কেউ একজন বারবার হিন্দিতে গুলি চালানো বন্ধের জন্য অনুরোধ করছেন। তিনি বলছেন, সিজ ফায়ার করো, এক আদমী মর গেয়া, সিজ ফায়ার করো…।’
এই ভিডিও থেকে অসমের কাছাড় জেলার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের দাবি, গুলি চালানো বন্ধের জন্য অনুরোধকারী হলেন কাছাড়ের পুলিশ সুপার বৈভব নিম্বলকর চন্দ্রকান্ত। যদিও এই ভিডিওর সত্যতা খতিয়ে দেখেনি দ্য কোয়ারি।
সোমবার অসম ও মিজোরাম আন্ত:রাজ্য সীমানায় দুষ্কৃতি হামলা ও দুই রাজ্যের পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ ঘিরে রক্তাক্ত পরিস্থিতিতে গোটা দেশ স্তম্ভিত। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার অভিযোগ, লাইট মেশিনগান থেকে গুলি চালায় আক্রমণকারী মিজোরামের পুলিশ। যদিও মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা ও মিজো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি অসম পুলিশ হামলা শুরু করেছিল।
অসমের কাছাড় জেলার লায়ালপুরে যে সংঘর্ষ হয়েছে তাতে অসম পুলিশের ৫ জন কর্মী মৃত। ৬৭ জন গুলিবিদ্ধ। গুলিতে জখম হন কাছাড়ের পুলিশ সুপার বৈভব নিম্বলকর চন্দ্রকান্ত। জেলাসদর শিলচরে চিকিৎসা চলছিল। পরে তাঁকে হেলিকপ্টার যোগে মুম্বইয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি এখনও সংকটজনক। জখম অন্যান্য পুলিশকর্মীরা চিকিৎসাধীন।
আন্ত:রাজ্য এই সীমানা যুদ্ধে অসম ও মিজো পুলিশের রণংদেহী অবস্থান নিয়ে দুই রাজ্য সরকার পরস্পরকে দোষারোপ করছে। দুই রাজ্যের মুখ্যসচিবদের নয়াদিল্লিতে তলব করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি উত্তর পূর্বাঞ্চল সফর করে ফেরার পরেই এই রক্তাক্ত ঘটনা ঘটে যায়।
৩১ জুলাইয়ের মধ্যে দিতে হবে অতিরিক্ত হলফনামা জমা, রাজ্যের ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় নির্দেশ আদালতের
অসম ও মিজোরাম সীমানা আপাতত বন্ধ। ক্ষুব্ধ কাছাড়বাসী মিজোরামের দিকে যাওয়া ট্রেন লাইন আটকে রেখেছেন। মিজোরামের বিরুদ্ধে তাঁরা অর্থনৈতিক অবরোধ শুরু করেছেন।
অসম কেটে মিজোরাম তৈরির পর থেকে দুই রাজ্যের ১৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমানা নিয়ে বারবার সংঘর্ষ হয়েছে। অসমের বরাক উপত্যকার তিনটি জেলা হাইলাকান্দি, করিমগঞ্জ ও কাছাড়বাসীরা হলেন বাংলাভাষী। তাঁদের অভিযোগ, মিজোরামের দিক থেকে চরম বাঙালি বিদ্বেষী হামলা ও উস্কানি দেওয়া হয়। মিজো পুলিশের মদতে দুষ্কৃতিরা হামলা চালায়। আর অসমের মধ্যেও বাঙালি বিদ্বেষী মনোভাবের শিকার হতে হয়।
কাছাড়ে বারবার জাতিবিদ্বেষী হামলা হলেও দুই রাজ্যের পুলিশের পারস্পরিক অবস্থান ও গুলি চলার জন্য ৫ পুলিশের মৃত্যুর পর থেকে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। মিজোরামের দিকেও আতঙ্কিত সেই রাজ্যের বাসিন্দারা।
স্বাধীনতার পর আর কোনও রাজ্যে এমন আন্ত:রাজ্য পুলিশ সংঘর্ষ হয়নি। সোমবারের ঘটনার পরে বুধবারও পরিস্থিতি গরম। শিলচর, হাইলাকান্দি, করিমগঞ্জে চলছে বিক্ষোভ। বিরোধী কংগ্রেসের অভিযোগ, সরকার কত অসহায় এ তারই প্রমাণ। অসম ও মিজেরামে সরকারের শরিক বিজেপি। ফলে বিজেপির বিরুদ্ধে জাতিগত বৈষম্য ছড়ানোর অভিযোগ উঠছে।