পাখির চোখ ২০২১ঃ রাজীবেই ভরসা মমতার, সাংগঠনিক স্তরে বাড়ছে দায়িত্ব
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ একে করোনা। তারউপর আমফান। দুর্যোগের রেশ কিছুতেই কাটিয়ে ছন্দে ফিরতে পারছে না পশ্চিমবঙ্গ। তবুও রাজ্যবাসীকে যত দ্রুত সম্ভব এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে বের করে আনতে বদ্ধপরিকর মুখ্যমন্ত্রী।
এই পরিস্থিতির মধ্যেও ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচকে সামনে রেখেই ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে লড়াই শুরু করে দিয়েছে বিজেপি। ৯ জুন পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হাত ধরে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ভার্চুয়াল র্যালিতে একপ্রকার ভোটযুদ্ধের দামামা যে বিজেপি বাজিয়ে দিয়েছে তা স্পষ্ট।
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে ৪২ এ ৪২ এর স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে রাজ্যের শাসকদলের। দিল্লির মসনদ দখলের পাশাপাশি বঙ্গ সাম্রাজ্যেও আধিপত্য বিস্তার করেছে গেরুয়া শিবির।
নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরপরই ঘাসফুল শিবিরের অন্দরে চোরা স্রোতের মত ভাঙন শুরু হয়। তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতা সহ নীচুতলার বহু কর্মী নাম লেখান গেরুয়া শিবিরে।
এহেন বিপর্যয়ের কারণ খুঁজতে এবং দলকে পুনরায় সাংগঠনিক দিক থেকে শক্তিশালী করতে ইলেকশন স্ট্র্যাটেজিস্ট প্রশান্ত কিশোরেই ভরসা রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। সেইসঙ্গে জেলায় জেলায় পর্যবেক্ষকেরও দায়িত্ব দেওয়া হয় দলের মন্ত্রীদের।
তবে লোকসভা নির্বাচনের পর খড়গপুর সদর, কালিয়াগঞ্জ ও করিমপুরে উপনির্বাচনের ফলাফলে বেশ কিছুটা চাঙা হয় ঘাসফুল শিবির। যদিও এর মধ্য দুটি সিটের জয়ের কৃতিত্ব রাজীবের।
এই তিনটি সিটের মধ্যে কালিয়াগঞ্জ বিধানসভায় তৃণমূলের জয় ছিল বঙ্গ রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় চমক। এই কেন্দ্রের ভোটারদের প্রায় ৫২ শতাংশই রাজবংশী সম্প্রদায়ের। এই কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রচারে হাতিয়ার ছিল মূলত এনআরসি ইস্যু৷
লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রে ৫৬ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিল বিজেপি৷ সেখানে মাটি কামড়ে পড়ে থেকে শেষপর্যন্ত কালিয়াগঞ্জ গেরুয়া শিবিরের দুর্গ থেকে ছিনিয়ে আনেন রাজীব।
এছাড়াও করিমপুরে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ১৫ হাজার ৯৮৯ ভোটে জিতেছিলেন তৃণমূল প্রার্থী। ২০১৯ এর উপনির্বাচনে রাজীবের নেতৃত্বে ব্যবধান বাড়িয়ে ২৪ হাজার ১১৯ ভোটে জিতলেন তৃণমলূ প্রার্থী বিমলেন্দু সিংহ রায়।
এই দুটি কঠিন জয়ের পরই নদীয়া জেলার পর্যবেক্ষক তথা রাজ্যের বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় নেত্রীর আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন।
এরপর ফালাকাটা উপনির্বাচনের দায়িত্বও তৃণমূল সুপ্রিমো দেন রাজীবের কাঁধেই। যদিও রাজ্যের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতেই আটকে রয়েছে সেই নির্বাচন পর্ব।
লোকসভার ফল প্রকাশের পর ঘাসফুল ছেড়ে গেরুয়া শিবিরে নাম লেখান দক্ষিণ দিনাজপুরে তৃণমূল নেতা বিপ্লব মিত্র। এরপরই ধস নামতে শুরু করে সংগঠনে। সেই জায়গা থেকে দাঁড়িয়ে পুনরায় দক্ষিণ দিনাজপুরের মাটিতে দলকে সাংগঠনিক দিক থেকে মজবুত করেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রধানমন্ত্রীর রিলিফ ফান্ড থেকে এককালীন ১০০০০ দেওয়ার দাবি মমতার
একই সঙ্গে হাওড়া জেলার কো-অর্ডিনেটর হিসাবে নাম উঠে আসে ভূমিপুত্র রাজীবেরই।
আমফান পরিস্থিতি মোকাবিলায় ফের সেই রাজীবেই ভরসা রাখছেন মমতা, তা স্পষ্ট হয়ে যায় ২১ মে নবান্ন সভাঘরে সাংবাদিক বৈঠকে।
নদীয়ার পাশাপাশি মালদহ, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর পরিদর্শনের দায়িত্ব পড়ে সেই রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাঁধে।
যোগ্য সৈনিকের মতই করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবিধি মেনেই প্রশাসনিক বৈঠকের পাশাপাশি ওই চার জেলায় তিনি বৈঠক করেন দলীয় কর্মীদের সঙ্গেও।
লক্ষ্য, এহেন পরিস্থিতিতে রাজ্যের প্রত্যেকটি মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে যথাসম্ভব সহযোগীতা করা। শুধু তাই নয়, একই সঙ্গে নতুন করে কোনো ঘুণ যাতে না দলের অন্দরে ধরতে পারে সেদিকেও কড়া নজর রাখা।
বিভিন্ন সময়ে দলের বিরুদ্ধে ত্রাণ বিলি থেকে রেশন বন্টনের বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। সেই কঠিন পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে যোগ্য সৈনিক হিসাবে ফের নিজের পরিচয় দেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজনৈতিক মহলের মতে, রাজীবের কাঁধে দায়িত্ব বর্তানোর পর নদীয়া ও দক্ষিণ দিনাজপুরে তৃণমূল নিজেদের জায়গা পুনরুদ্ধারে সক্ষম হয়েছে। একথা দলের অন্দরে স্বীকার করেছেন খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে নিজেদের জয় নিশ্চিত করে মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন হন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সেই সময় সেচ মন্ত্রকের দায়িত্বে ছিল মানস রঞ্জন ভুঁইয়ার হাতে। পরে মুখ্যমন্ত্রী সেই দায়িত্ব তুলে দেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে।
মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করেন তিনি। রাজ্যের বিভিন্ন নদী, খাল পুনর্গঠন, আয়লার পর সুন্দরবন এলাকায় নদীবাঁধ নির্মাণ সহ সেচ দফতরের একাধিক কাজে নিজের দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। সেকথা স্বীকার করেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রীও।
এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি রাজীবকে। বিভিন্ন সময় দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি, দফতরের প্রত্যেকটি কাজে স্বচ্ছতার সঙ্গে পালন করায় অচিরেই নেত্রীর সুনজরে জায়গা করে নেন তিনি।
এনআরসি বিরোধী বুনিয়াদপুরের একটি সভায় গান গাওয়ার জন্য সেই রাজীবের হাতেই মাইক তুলে দিয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী।
মানুষের পাশেই শুধু না। করোনা মোকাবিলায় যখন লকডাউন চলছে সেই মুহুর্তে বারংবার অবলা প্রাণীদের মুখেও খাবার তুলে দিতে দেখা গেছে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
বন দফতরের দায়িত্ব পেয়ে রাজীব সর্বপ্রথম নজর দেন উত্তরবঙ্গের দিকে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন বনাঞ্চল থেকে দামী কাঠ পাচার রুখতে কড়া পদক্ষেপ নেন তিনি।
যেকোনো দফতরে স্বচ্ছ কাজ এবং সাংগাঠনিক দিক থেকে নেতৃত্ব দেওয়া ক্ষমতায় ক্রমেই দলে গুরুত্ব বাড়তে রাজীবের।
তবে রাজনৈতিক মহলের অনেকেই আবার বলছেন, সাংগঠনিক দিক থেকে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার যে ক্ষমতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে রয়েছে তাতে আকৃষ্ট হয়েছে তৃণমূলের যুব সদস্যরাও।
আগামী দিনে রাজীবের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতাকে সামনে রেখেই হয়ত মালদা এবং উত্তর দিনাজপুরের পর্যবেক্ষকের দায়িত্বও রাজীবের কাঁধেই সপে দিতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজনৈতিক কচকচানি দূরে ঠেলে সদা হাস্যময় রাজীব বরাবরই নিশব্দে কাজ করে গিয়েছেন। একইসঙ্গে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি বজায় রেখেছেন। প্রমাণ করে দিয়েছেন পারফরম্যান্সই শেষ কথা।
এই সব বিষয়কে মাথায় রেখেই ২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে সাংগাঠনিক দিক থেকে মুখ্যমন্ত্রী যে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্কোরবোর্ডে অনেকটাই এগিয়ে রাখছেন তা স্পষ্ট।