একুশে বদল কি আসন্ন ! জনতার দিকেই চোখ থাকবে রাজনৈতিক মহলের
সর্নিকা দত্ত
তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, পুরোনো বিধায়কদের একুশে ফের টিকিট দেওয়া হবে। মমতা বন্দোপাধ্যায় সামনে যতই বলুন পুরোনোরা সবাই ভোটে দাঁড়াবেন , রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটা আসলে একটা ললিপপ।
দলের অন্দরের খবর, উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ ও কলকাতা থেকে শহরতলি সর্বত্রই মুখ বদলের ডাক।কারণ জেলা থেকে ব্লক, অঞ্চল বা টাউন সর্বত্রই দুর্নীতি যে ক্রমেই বাসা বাঁধতে শুরু করেছে তা দিনের আলোর মত পরিস্কার হয়ে গিয়েছে করোনা ও আমফান পরবর্তী পরিস্থিতিতে।
চাল চালান থেকে দামি গাড়ি। পায়ে দামি জুতো। প্রাসাদসমান বাড়ি । এই সবকিছুকেই ক্রমে অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন তৃণমূলের বেশ কিছু নেতা। একথা আমরা বলছি না, বলছেন আমজনতা। যা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তৃণমূল সুপ্রিমো।
বিরোধীরা যাই বলুন, মানুষের জন্য কাজ করতেই তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি করেছিলেন তিনি। আজ সেই লক্ষ্যই কোথায় যেন প্রশ্নের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে।
তাই আপাদমস্তক খোলনলচে বদলে দলকে শুদ্ধিকরণের পথে নিয়ে যেতে চান নেত্রী স্বয়ং। তিনি নিজেও জানেন এমনটা না করা গেলে লোকসভার মতো ভরা ডুবি হতে পারে একুশেও।
তাই মুখের পরিবর্তন না করে অন্য উপায় নেই তাঁর হাতে। করোনা ও আমফানের মতো দুর্যোগে জেলা ও রাজ্য নেতাদের আচার আচরণে দল বিরক্ত।
করোনা কাঁটা, এবার বুথে বুথে একুশে জুলাই পালন করবে তৃণমূল
গ্রামের ভোটাররা এদের ওপর ক্ষুব্ধ। এতে আদতে নষ্ট হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রহণযোগ্যতা। যে নেত্রী সবার আগে মানুষের কথা ভেবে সাধারণের জন্য বিনামূল্যে রেশনের কথা ঘোষণা করেছেন। সেই দলের উপরই এখন অভিযোগ রেশন দুর্নীতির।
যিনি চেয়েছেন আমফান পরবর্তী পরিস্থিতিতে রঙ না দেখে তাঁর দল প্রত্যেকটি দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াক। সেই দলের নেতাদের বিরুদ্ধেই উঠছে ত্রাণ চুরির অভিযোগ। এটা দলনেত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্যেও ভীষণ দুঃখের।
তিল তিল করে মানুষের জন্য আন্দোলন করে, মৃত্যুর মুখ থেকে বার বার ফিরে এসেছেন বাংলার অগ্নিকন্যা। তবে কোনো কিছুর বদলেই জনস্বার্থকে কখনো উপেক্ষা করেননি তিনি।আর সে কারণেই বাংলার মানুষ তাঁকে সবসময় চোখের মনি করে রেখেছেন।
কিন্তু এখন সেই ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে কিছু সংখ্যক কর্মী ও সমর্থকদের জন্য। এই অবস্থায় পুরনো মুখদের সামনে রেখে আদৌ কি একুশের বৈতরণী উদ্ধার সম্ভব?
সিপিএম জামানার বিখ্যাত সেই শুদ্ধিকরণ তত্ত্ব মনে আছে সকলের। খাদের কিনারায় এসে সেই শুদ্ধিকরণ তত্ত্ব শেষ পর্যন্ত বাঁচাতে পারেনি বামফ্রন্ট সরকারের পতনকে। জনপ্রিয়তার শিখরে থাকা ব্র্যান্ড বুদ্ধ বাবু সেদিন শুনতে পাননি জনতার মনের কথা। আর তাই ভুল স্বীকার করার পরেও মানুষ তাঁর প্রতি বিশ্বাস রাখেনি।
৩৪ বছরের বাম সাম্রাজ্যের পতন ঘটিয়ে ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল সরকার। এখন অনেকেই বলছে, আজকের মা-মাটি-মানুষের সরকারের অবস্থা অনেকটা সেরকমই। পঞ্চায়েতে ভোট লুঠ, করোনায় রেশন লুঠ, আর আমফান ত্রাণ লুঠ। এমন একের পর এক অভিযোগে মানুষও কিন্তু ক্ষুব্ধ।
ইদানিং তৃণমূলের অন্দরেও সেই একই সুর। শুদ্ধিকরণে জোর দিচ্ছেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বরাও। তাহলে বদল কি এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা?
দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায় ব্যক্তিগত আলোচনায় বারবার একটা কথা বলেন। মানুষকে প্রতারণা করলে, শত ভুল করেছি বলার পরেও মানুষ তাদের ক্ষমা করেনা। ভোটে হেরে তার মূল্য দিতে হয়। আর সে কারণেই অতীতে কংগ্রেস সরকারকে এ রাজ্য থেকে চলে যেতে হয়েছিল। একই ভাবে পতন হয়েছিল বাম সরকারেরও।
এখন প্রশ্ন, তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের পতন কি সেভাবেই হবে?
এতদুর আসার পর একটা কথা না বললেই নয়। অতীতের রাজ্য রাজনীতি আর বর্তমানের পরিস্থিতি এক নয়। বাম কংগ্রেস তৃণমূলের রাজনীতির সঙ্গে গেরুয়া শিবিরের রাজনীতিকে গুলিয়ে ফেলা বোধহয় সঠিক কাজ হবে না।
বিগত সময় যেভাবে রাজ্য রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির আধিক্য ঘটেছে, যেভাবে মিথ্যা প্রচার, সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেওয়ার ঘটনা বাংলার মানুষ দেখেছে তা কিন্তু সত্যিই চিন্তার বিষয়।
এখানে সাম্প্রদায়িক বিভেদ অতীতে এত তীব্রভাবে কখনোই দেখা যায়নি। এর জন্য অবশ্যই দায়ী বিজেপি। একইসঙ্গে এটাও সত্যি কেন্দ্রের এই শাসক দল রাজ্যের ক্ষমতা দখলের জন্য মরিয়া। এক্ষেত্রে তুল্যমূল্য লড়াই বাস্তবে কতটা সম্ভব সে বিষয়েও প্রশ্ন থাকছে।
আমফান দুর্নীতিঃ শোকজ হাওড়ার ৫ নেতা
অতীতে অন্য রাজ্যের রাজ্যের ভোটে দেখা গিয়েছে, নির্বাচনের রায় তাদের বিরুদ্ধে গেলেও ঘোড়া কেনা বেচা করে ক্ষমতা দখল করেছে বিজেপি। বাংলার ভবিষ্যত কী হবে তা এখনই বলা মুশকিল।
সবচেয়ে বড় কথা লোকসভা ভোটে, ১৮ টি সিট পাওয়ার পরেও এ রাজ্য একটি পূর্ণ মন্ত্রীও পায়নি। আর রাজ্যের উন্নয়নের কাজে বিজেপি সাংসদদের ভূমিকা সকলেরই জানা।
এই অবস্থায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে মানুষকে। কারণ তাদের হাতেই নির্ধারিত হবে একুশে রাজ্যের ভবিষ্যত। মনে রাখতে হবে আখেরে গণতন্ত্রে মানুষই শেষ কথা বলে।