রাজনৈতিক কোন্দলের পাশাপাশি পরপর শুট আউট, প্রশাসনের মাথাব্যথার কারণ ব্যারাকপুর

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ বাম জামানার শেষ দু’বছর বাদ দিলে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল জুড়ে ছিল সিপিএমের শ্রমিকনেতা তড়িৎ তোপদারের দাপট। বলা হত তাঁর দাপটে সেখানে বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খায়! তবে এরই মাঝে ভাটপাড়ায় নিজের কেরামতি দেখিয়েছিলেন অর্জুন সিং। ২০০১ সাল থেকে তিনি সেখানে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে টানা জিতে আসেন।

তাঁর হাত ধরেই ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে সিপিএমকে হটিয়ে রাজত্ব কায়েম করে তৃণমূল। ধীরে ধীরে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের রাজনীতি অর্জুন সমর্থক ও অর্জুন বিরোধী এই দুই শিবিরে বিভক্ত পড়ে। এই নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে ঝামেলা-বিবাদ নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কিন্তু দেখা যাচ্ছে গোটা ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল জুড়েই বোমা বন্দুকের দাপট এতটাই প্রবল হয়েছে যে রাজনৈতিক পরিসর ছাড়িয়েও যখন তখন সেখানে শুট আউট হচ্ছে। ফলে চিন্তা বেড়েছে প্রশাসনের।

অর্জুন সিং তৃণমূলের থাকাকালীন তাঁর বিরোধীরা বিজেপি ও সিপিএম এই দুই দলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। এমনকি তৃণমূলে যারা প্রবল অর্জুন বিরোধী ছিলেন ২০১৬ এর পর থেকে তাঁরা ধীরে ধীরে বিজেপিতে যোগ দিতে শুরু করেন। কিন্তু ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে ক্ষুব্ধ অর্জুন বিজেপিতে আসতেই সমীকরণ বদলে যায়।

পরেশের জার্সি বদলে চমকপ্রদ ‘ডিল’ মেয়ের চাকরী? মমতার মন্ত্রীসভা থেকে বহিস্কারের জল্পনা তীব্র

গেরুয়া শিবিরে থাকা অর্জুন বিরোধীরা তখন আবার তৃণমূলে ফিরতে শুরু করে। বর্তমানে অর্জুনের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে জল্পনা তীব্র হয়েছে। মনে করা হচ্ছে তিনি ফের তৃণমূলের ফিরতে পারেন। সেক্ষেত্রে তৃণমূলে থাকা অর্জুন বিরোধীরা আবার বিজেপি-সিপিএমের দিকে চলে যেতে পারে বলে বিভিন্ন মহলের অনুমান।

পরস্পরের প্রতি তীব্র বিদ্বেষের সূত্র ধরেই গত কয়েক বছরে একের পর এক রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর খুন দেখেছে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল। বিজেপির যুব নেতা মনিশ শুক্লা সহ শাসক-বিরোধী বিভিন্ন শিবিরের একের পর এক নেতাকর্মীরা কখনও শুট আউটে, কখনও বোমা বিস্ফোরণে মারা গিয়েছেন।

কখনও খড়দহ জগদ্দল পানিহাটি নৈহাটি ব্যারাকপুরে মজুত করে রাখা বোমা বিস্ফোরণে নিরাপরাধ কিশোররা মারা গিয়েছে, আবার বোমা বানাতে গিয়েও অনেকের হাত-পা উড়ে গিয়েছে। তবে ব্যারাকপুরের বিখ্যাত বিরিয়ানি দোকানে শুট আউটের যে ঘটনা ঘটল তা চমকে দেওয়ার মতো।

এখনও পর্যন্ত তদন্তে যে সমস্ত তথ্য উঠে এসেছে তা থেকে জানা যাচ্ছে পুরোপুরি ব্যক্তিগত ঝামেলার জেরে দিনে দুপুরে এই ঘটনা ঘটেছে। এতে একটা বিষয় পরিষ্কার ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে বোমা-বন্দুক অত্যন্ত সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। ঝামেলা হলে যে কেউ যখন তখন বন্দুক নিয়ে অন্যকে নিশানা করছে।

বগটুই কাণ্ডের পর মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন রাজ্য থেকে সমস্ত বোমা-বন্দুক উদ্ধার করবে পুলিশ। প্রথম এক সপ্তাহ নানা জায়গা থেকে বোমা-বন্দুক উদ্ধারের খবর জানা গিয়েছিল। তারপর আবার সব যেকে সেই। কিন্তু এতে যে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে কোন‌ও প্রভাব পড়েনি তা পরিষ্কার। ফলে সাধারণ মানুষ প্রবল আতঙ্কে ভুগছে। আমজনতাকে নিরাপত্তা দিতে হলে ব্যারাকপুরকে বারুদ মুক্ত করতে হবে অবিলম্বে।

সম্পর্কিত পোস্ট