পুরভোটের আগে প্রকাশ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, রাস্তায় ফেলে মার বিদায়ী কাউন্সিলরকে

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ সামনেই পুরসভা নির্বাচন। দিনক্ষণ ঘোষণা না হলেও জেলায় জেলায় শুরু হয়ে গিয়েছে প্রস্তুতি। লোকসভা নির্বাচনে আশানুরুপ ফল না হওয়ায় জন্য জনসংযোগের অভাব এবং গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকেই দায়ী করেছিলেন ইলেকশন স্ট্র্যাটেজিস্ট প্রশান্ত কিশোর।

এরপর ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচীর মাধ্যমে এলাকায় জনসংযোগ শুরু করার নির্দেশ দেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে কড়া বার্তা দেন দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থকদের।তবে সেই কড়া বার্তাই সার। তার যে বাস্তবায়ন হয়নি ফের প্রমাণ পাওয়া গেল পূর্ব বর্ধমানে।

সোমবার পুরসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই জনসংযোগে বেরিয়েছিলেন ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলর ডঃ শঙ্খশুভ্র ঘোষ। অভিযোগ সেখানেই দলীয় কর্মীদের হাতে নিগৃহীত হন তিনি।

পেশায় চিকিৎসক শঙ্খশুভ্র বাবু জানান, সোমবার শাঁখারি পুকুর এলাকায় একটি বাড়ি থেকে প্রচার কর্মসূচী সেরে বেরোচ্ছিলেন তিনি। সেই সময় স্থানীয় তৃণমূল নেতা মন্টু মজুমদারের নেতৃত্বে অতর্কিতে তার উপর হামলা চালায় কয়েকজন। মাটিতে ফেলে লাঠি, রড দিয়ে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি তাঁকে খুনের চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

শঙ্খশুভ্র বাবুর অভিযোগের ভিত্তিতেই ফের দিনের আলোর মত স্পষ্ট হয়ে গেল দলের অন্তর্কলহ। এই বিষয়ে #TheQuiry ফোনে যোগাযোগ করে বর্ধমান জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ উত্তম সেনগুপ্তের সঙ্গে। যদিও তিনি এই বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি। পাল্টা যোগাযোগ করতে বলেন পূর্ব বর্ধমানে জেলার তৃণমূল সভাপতি ও রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের সঙ্গে।

স্বপনবাবু #TheQuiry কে জানান “শঙ্খশুভ্র বাবুকে বলেছি থানায় অভিযোগ জানাতে।একইসঙ্গে থানাকেও বলেছি ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে সঠিক তথ্য বের করে আনতে।” গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের দাবি উড়িয়ে দিয়ে জোর গলায় তিনি বলেন, “হয়ত কারোর ব্যক্তিগত রাগ ছিল শঙ্খবাবুর উপর। তবে এর সঙ্গে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কোনো যোগ নেই।”

এরপর #TheQuiry বিষয়টি নিয়ে ফোনে যোগাযোগ করেন পূর্ব বর্ধমান জেলার তৃণমূলের সহকারী সভাধিপতি দেবু টুডুর সঙ্গে। তিনি জানান, “বর্ধমানে কোনো রকম গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব হয় না।যদি কোনো কারণে হয়েও থাকে তাহলে তা পরে মিটিয়ে নেওয়া হবে।” তাহলে কী কারণে হামলার শিকার হলেন তিনি? তাঁর কথায়, “বর্ধমানে বিরোধীদের পায়ের তলার মাটি নেই। মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন দল বিজেপি। এটা হয়ত তাদেরই কাজ। বাকিটা তদন্ত সাপেক্ষ।”

শাসকদলের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেই #TheQuiry এর তরফে যোগাযোগ করা হয় পূর্ব বর্ধমানে বিজেপির জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দীর সঙ্গে। তিনি বলেন, “একসময়ে বিজেপির হাত ধরেই তৈরী হয়েছিল তৃণমূল। তারপর তারা বিজেপির হাত ছেড়ে দেয়। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই তৃণমূলের চরিত্র।” তবে পঞ্চায়েত নির্বাচনে যে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটানো হয়েছে, সেই কথা স্মরণ করে আসন্ন পুরসভা নির্বাচনে বিজেপির ভবিষ্যত নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন তিনি। তবে সেই সবকিছুকে উপেক্ষা করে পূর্ব-বর্ধমান, গুসকরা ও মেমারি পুরসভায় গেরুয়া শিবিরের দখলে থাকবে বলে জানান তিনি।

এই বিষয়ে পূর্ব বর্ধমানের সিপিএম নেতা অপূর্ব চ্যাটার্জী #TheQuiry কে বলেন, “রাজনৈতিক দল হিসাবে গত ৬ বছরে তৃণমূলের চরিত্র সম্পর্কে সকলেই ওয়াকিবহাল। নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে তা আরও প্রকট হবে। শুধুমাত্র কাউন্সিলর নন, একজন চিকিৎসকের উপর হামলা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায়না। গত বছরও বর্ধমানে ভোট লুঠ করা হয়েছিল। মানুষ কতটা তৃণমূলকে বিশ্বাস করে সেটাই এখন জানার বিষয়।”

প্রসঙ্গত, ১৮ ফেব্রুয়ারী পুরভোটে দলের নেতাদের মিলেমিশে কাজ করার বার্তা দিতে বর্ধমান ভবনে দলের বৈঠক ডেকেছিলেন পুরমন্ত্রী ওরফে তৃণমূল কংগ্রেসের বর্ধমান জেলার পর্যবেক্ষক ফিরহাদ হাকিম

ফিরহাদের সভাতেই যুব তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদের সদস্য নুরুল হাসান জানান, তিনি তেরো বছর ধরে তৃণমূল কংগ্রেস করছেন। তারপরেই অভিযোগ করেন, দলে থেকে যারা ‘গুছিয়ে নিচ্ছে’ তাদের বিরুদ্ধে দল কোনও পদক্ষেপই করছে না।

এমন কথা শুনে মঞ্চে থাকা স্বপন দেবনাথ পাল্টা অভিযোগ করেন, দলের নাম করে নুরুল কী করেছেন সেকথা তিনি জানেন। এরপরেই তিনি নুরুলকে বলেন সভা ছেড়ে বেরিয়ে যেতে।

এরপর থেকেই ক্রমশ প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে তৃণমূলের অন্তর্কলহ। শঙ্খশুভ্র বাবুর উপর হামলা তার আরও একটি উদাহরণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।

সম্পর্কিত পোস্ট