বুথ ফেরত সমীক্ষা বদলে বিহারে এনডিএর প্রত্যাবর্তন

।। শুভজিৎ চক্রবর্তী ।।

সাপ-লুডোর খেলায় শুরু থেকে এগিয়ে থাকা মহাজোটকে পিছনে ফেলে ভোররাতে বিহারের নির্বাচনের ফলাফলে এগিয়ে গেল এনডিএ। ম্যাজিক ফিগার পেরিয়ে বিহারের অংশীদার হচ্ছে বিজেপি-জেডিইউ-ভিআইপি-হাম জোট। সোয়ানে সোয়ানে লড়াই করেও শেষরক্ষা করতে পারলেন না মহাজোটের প্রার্থী তেজস্বী যাদব।

যদিও বিহারেও একক বৃহত্তম দল হল আরজেডি। ‘ইভিএম কারচুপি’ হয়েছে দাবী আরজেডির। এদিন নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জমা করেন আরজেডি এবং কংগ্রেস নেতৃত্ব। অন্যদিকে গণনা প্রক্রিয়া শেষের আগে জয়ের দাবী করেন এনডিএ শিবিরের নেতারা।

করোনা আবহে দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা বিহারে। করোনার কারণে ইভিএমের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ভোট গণনায় অনেক সময় লেগে যায়। মধ্য রাত অবধি পৌঁছায় ভোট গণনা প্রক্রিয়া।

১২৫ টি আসন পেয়ে সরকার গঠনে প্রথম হয় এনডিএ। বিজেপি পেয়েছে ৭৪ টি আসন , যা দ্বিতীয়। জনতা দল ইউনাইটেড ৪৩ , হিন্দুস্থানী আওয়ামী মোর্চা ৪টি, বিকাশশীল ইনসান পার্টি ৪টি।

অন্যদিকে মহাজোটে তেজস্বী যাদবের আরজেডি পেয়েছে ৭৫ টি আসন। যা এবারের নির্বাচনে সর্বাধিক। কংগ্রেস ১৯ টি, সিপিআই ২টি, সিপি(আই)এম ২টি, সিপিআই (এম এল) ১২টি। মোট ১১০ টি আসন পেল মহাজোট।

উল্লেখযোগ্য ফলাফলে নজর কেড়েছে মিম। বিহার থেকে ৫টি আসন পেয়েছে তাঁরা। বিএসপি পেয়েছে ১ টি আসন। চিরাগ পাসোয়ানের লোক জনশক্তি পার্টি পেয়েছে ১ টি আসন। নির্বাচনের ফলাফল যাই-ই হোক না কেন বিহারে বিপুল পরিমাণে গেরুয়া ঝড় যে নরেন্দ্র মোদির জয় তা স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে।

http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/bihar-election-result-sushil-modi-met-nitish-kumar/

ক্ষমতায় আসবেন নীতিশ কুমার! সেই প্রশ্ন এখন বিহারের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে।  কারণ, এই মুহূর্তে তৃতীয় শক্তিশালী দল হিসাবে উঠে আসছে জেডিইউয়ের নাম। গতবারের তুলনায় এবারের নির্বাচনে ভোট ব্যাঙ্কের অঙ্ক কমে যাওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য বিজেপি শিবিরের কাউকে দেখতে চাইছেন গেরুয়া শিবিরের নেতারা।

যদিও ম্যাজিক ফিগারের খেলায় বিহারে ‘ডবল ইঞ্জিনের সরকার’ গঠন হবে এটুকু আশাবাদী বিহারের মানুষ। আর ম্যাজিক ফিগার ধরে রাখতে মুখ্যমন্ত্রী পদে নীতিশকে রাখাটাই শ্রেয় হবে বলে মনে করছেন গেরুয়া শিবিরের নেতারা।

তাই মঙ্গলবার সন্ধ্যে বেলায় নীতিশ কুমারের বাসভবনে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদি সহ একাধিক নেতৃত্ব।

লকডাউন,পরিযায়ী শ্রমিক, স্বাস্থ্য ব্যাবস্থা এবং বেকারত্ব সহ একাধিক ইস্যুকে সামনে রেখে মুখোমুখি লড়াই এবারের নির্বাচনে। সেইসঙ্গে রয়েছে বিহারের বন্যা দুর্গত এলাকাগুলির দুর্বল পরিকাঠামো ।

এই সমস্ত ইস্যুগুলিকে হাতিয়ার করেই নির্বাচনী ময়দানে লড়াই করেছেন তেজস্বী যাদব। সেইসঙ্গে বিহারের ‘নল জল যোজনা’ কারণে যে দুর্নীতি হয়েছে, সেই কথাও তুলে ধরেন মহাজোটের প্রচারকরা।

কিন্তু নির্বাচনের ফলাফলে মহাজোটের হারের পিছনে বুথে স্তরের কর্মীদের গাফিলতি রয়েছে। দলীয় একাংশের মতে, তেজস্বীর ১০ লক্ষের প্রচারের কথা মানুষের কাছে পৌঁছলেও ইস্তেহার পত্রে উপস্থিত বাকি সমস্ত কথা সাধারণ মানুষের কাছে উপস্থিত হয়নি। এছাড়াও দলের মিসম্যানেজমেন্ট এনডিএ শিবিরকে জায়গা করে দিয়েছে।

অন্যদিকে বিহারে গত ১৫ বছরের ‘সুশাসন’-এর কথা উল্লেখ করে এবারের নির্বাচনে প্রচার করছেন এনডিএ শিবিরের নেতারা। কিন্তু রাজনৈতিক মহলের মতে মুখ্যমন্ত্রী পদে নীতিশ কুমারকে রেখেই লিটমাস টেস্টকরাতে চাইছে বিজেপি।

কারণ, পাটনা এবং তার আশেপাশে আরজেডি প্রার্থী তেজস্বী যাদবের ছবি দেখা গেলেও, মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী নীতিশ কুমারের ছবি সেভাবে দেখা যায়নি। কারণ বিহার নির্বাচন থেকে পুর্ব ভারতে বিজেপির অবস্থান বুঝে নিতে চাইছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এই ২০২০ এর নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে নীতিশ কুমারকে প্রোজেক্ট করলেও বিহারে ভবিষ্যতের বীজ বপন করতে চাইছে গেরুয়া শিবির। আর নীতিশ কুমারের পরিবর্ত মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন তারই ইশারা দিচ্ছে।

পাশাপাশি এনডিএ শিবিরের অন্যতম শরিক লজপা প্রধান চিরাগ পাসোয়ান এবারের নির্বাচনে সরাসরি নীতিশ কুমারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর আগেও একাধিকবার মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের একাধিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে মন্তব্য করতে দেখা গিয়েছে চিয়াগ পাসোয়ানকে।

http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/bihar-election-result-nitish-kumar-said-last-election-and-bjp-emerge-as-bihar-powerful-party/

কিন্তু রাজনৈতিক মহলের মতে, বিহারের নির্বাচনে এলজেপি আলাদা করে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিলেও চিরাগ পাসোয়ানের ইমেজ শুধুমাত্র একজন দিল্লির নেতা হিসাবেই। তাঁর জন্য লড়াই কঠিন হবে সেটা আগে থেকেই বোঝা গিয়েছিল।

একইসঙ্গে মুখে যতই ‘নরেন্দ্র মোদির হনুমান’ বলুন না কেন, লজপা আলাদা করে লড়াইয়ের নীতি বিরোধীদের জায়গা করে নিতে সাহায্য করেছে। সেইসঙ্গে লজপার একলা চলো নীতিতেই লড়াইয়ের ময়দানে পিছিয়ে পড়েছে জেডিইউও।

বিহারের নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য ফলাফল এসেছে সিপিআই(এম এল) এর কাছ থেকে। রাজনৈতিক মহলের মতে, বিহারের দলিত ভোট ব্যাঙ্কের জন্য বারবার নজর থাকে বামপন্থী দলটির। এবারের নির্বাচনে সিপিআই(এম এল)-কে মহাজোটের অংশ করে তেজস্বী বিরাট পরিবর্তন আনল তেজস্বী।

সম্প্রতি তেজস্বী শিবির থেকে দেওয়া ছেড়ে যাওয়া জীতেন রাম মাঝীর হিন্দুস্থানী আওয়ামী মোর্চার তুলনায় বিহারে বেশী শক্তিশালী সিপিআই(এম এল) তা প্রমাণ হয়ে গেল।

একইসঙ্গে পড়শি রাজ্যে নির্বাচনী ময়দানে বাম দলের পরিবর্তনের হাওয়া বাংলাকে পজিটিভ এফেক্ট দেবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

অন্যদিকে গত বারের তুলনায় এবারেও কংগ্রেসের ভোটের হার কমে যাওয়ায় প্রশ্ন উঠছে দেশের সবচেয়ে পুরাতন দলের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে। ভবিষ্যৎ কংগ্রেসের জন্য ‘আচ্ছে দিন’ আসতে চলেছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তবে বিহারের ক্ষেত্রে কি হতে পারে তা এখনই বলা সম্ভব নয়।

ঘর বাঁচাতে দু’দিন আগে থেকেই এআইসিসির দুই নেতা, রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা এবং অবিনাশ পান্ডেকে বিহারে পাঠিয়েছেন সোনিয়া গান্ধী। বিহার থেকে ৫ টি আসনের পর এবার কি বাংলার পথে এগোতে পারে আসাদুদ্দিন ওয়েইসির অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন? নজর থেকবে এদিকেও।

http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/bihar-election-result-nda-lead-on-bihar-election/

সব মিলিয়ে বলা চলে, গত পাঁচ বছরের হিসেব নিকেশ করেই এবারের নির্বাচনের রিপোর্ট কার্ড পেশ করেছে বিহারের জনতা। যদিও রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা আগেই করে দিয়েছেন নীতিশ কুমার। তাই এনডিএ জিতলেও মুখ্যমন্ত্রী পদে নীতিশ কুমার থাকবেন কি না তা এখনই বলা সহজ নয়।

তবে বিহারের জনগণের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির খোলা চিঠি আভাস দিচ্ছে আগামী পাঁচ বছরে বিহারের রাজনীতিতে বিরাট বদল আসতে চলেছে ।

সম্পর্কিত পোস্ট