নীতিশের সন্ন্যাস পাটলিপুত্রে গেরুয়া বসন্ত, রাজনৈতিক ‘টেলিপ্যাথি’

 || শুভজিৎ চক্রবর্তী || 

বিহার নির্বাচনে প্রাথমিকভাবে লড়াই তেজস্বী যাদব বনাম নীতিশ কুমার ধরে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনী ময়দানে চিরাগ পাসোয়ানের এন্ট্রি সমস্ত ফর্মুলা পাল্টে দেয়। ত্রিশঙ্কু লড়াইয়ে এলজেপির অবস্থান কোথায় তা শুরু থেকেই বলা কঠিন ছিল। কিন্তু নিজেকে ‘মোদির হনুমান’ বলে দাবী করা চিরাগ পাসোয়ান যে এনডিএ শিবিরে ছিলেন তা শুরু থেকেই স্পষ্ট ছিল। এমনকি একাধিক আসনে এলজেপি জেডিইউয়ের ভোট কেটে নিয়ে যাবে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। আর নির্বাচনী ফলাফলে সেটাও স্পষ্ট হয়ে যায়। বরং নতুন চমকে বিহারের একক বৃহত্তম দল হিসাবে উঠে আসে গেরুয়া শিবির। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে তবে কি এনডিএ শিবিরের ফাটল ভোট কমালো নীতিশ কুমারের? গেরুয়া ঝড়ের দাপটে কুপকাত পড়শি রাজ্য?

এমনিতেই এনডিএ শিবিরে থাকলেও আদবানী শিবিরের সঙ্গে নীতিশের সখ্যতা যতটা ছিল তা মোদি শিবিরের সঙ্গে গড়ে ওঠেনি। সেজন্যই গতবারের নির্বাচনের পর এনডিএ ছেড়ে মহাজোটের মুখ্যমন্ত্রী হন তিনি। বিহারের মাটিতে পলিটিক্যাল ফ্যাক্টর নীতিশ কুমার, সেটা প্রমাণ হয়ে গিয়েছিল।

তৃতীয় দফার নির্বাচনী প্রচারমঞ্চ রাজনৈতিক সন্ন্যাসের কথা ঘোষণা করেন নীতিশ কুমার। এটাই তাঁর শেষ বিহার নির্বাচনী পরচার বলেন বর্ষীয়ান জেডিইউ নেতা। মঙ্গলবারের ফলাফল এনডিএ শিবিরের দিকে ঝুঁকলে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে বিজেপি কোন পদক্ষেপ নেয় সেটাও দেখার রয়েছে। কারণ, এবারের ফলাফলে ব্র্যান্ড নীতিশ কাজ করেনি। বরং বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়ের কথায়, এবারের নির্বাচনে মোদির ইমেজকে ব্যবহার করা হয়েছে। সেকারণেই কি ফলাফলের নিরিখে জেডিইউকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গেল বিজেপি?

মুখে বিজেপির সঙ্গে সরকার গড়ার আশ্বাস দিলেও চিরাগের পক্ষে বাস্তবে তা সম্ভব নয়। কারণ দুই দলের যৌথ ভোটে ম্যাজিক ফিগার পার সম্ভব নয় । এনডিএ শিবিরে থাকলেও জাতীয় রাজনীতিতে রঙ বদল করে একাধিকবার সরকারের ক্ষমতায় থেকছেন প্রয়াত রামবিলাস পাসোয়ান। দিল্লির দরবারে রামবিলাস পুত্র চিরাগের গ্রহণযোগ্যতা থাকলেও বিহারের মাটিতে তিনি দুর্বল। এরই মাঝে দু’পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে চলার জন্য শুরু থেকেই মুখে কুলুপ এঁটেছে বিজেপি। যদিও শুরু থেকেই এনডিএ মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী নীতিশ কুমারকে সামনে রেখেই প্রচার করেছেন নরেন্দ্র মোদি সহ বিজেপি নেতারা। কিন্তু নীতিশের সন্ন্যাসের সিদ্ধান্ত এবং বিহারের মাটিতে বৃহত্তম পার্টি হিসাবে বিজেপির উত্থান, পুরোটাই ‘টেলিপ্যাথি’।

এখন থেকেই বিহারে মুখ্যমন্ত্রীর নতুন মুখ খোঁজা শুরু করবে গেরুয়া শিবির। সেই তালিকায় প্রথমেই উঠে আসছে সুশীল মোদির নাম। উপমুখ্যমন্ত্রী পদ পেলেও বিহার এনডিএর যোগস্থাপনে শুরু থেকেই গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তাঁর। আদবানী থেকে শুরু করে নরেন্দ্র মোদি মহলেও বিশেষ চর্চা হয়েছে সুশীল মোদিকে নিয়ে। নতুন মুখ্যমন্ত্রী পদে কি তিনিই আসবেন? পাটলিপুত্রের শহরে নতুন রাজনৈতিক বসন্তের অপেক্ষায় গোটা দেশ।

সম্পর্কিত পোস্ট