হার মানছে বয়স, ৮২-র যুবক ‘বিমান’-এ নয়া উড়ানের স্বপ্ন বামেদের
নয়ন রায়
বয়স ৮২। উল্টে দিলে ২৮। ৮২-র গুরুগম্ভীর যুবককে নিয়ে আবোল তাবোল না বলাই ভালো। পাকা চুলে বলিষ্ঠ কন্ঠে শিরদাঁড়া সোজা রেখে রাজনীতির ময়দানে চালিয়ে ব্যাটিং করছেন। তিনি বিমান বসু।
এই বয়সেও হাতে বালতি নিয়ে ত্রিপুরায় বিজেপির হাতে আক্রান্ত বাম কর্মীদের হয়ে কলকাতায় অর্থ সংগ্রহ করছেন। গটগট করে হেঁটে যাচ্ছেন। বিমান বাবুর এহেন উদ্যোগ দেখে মানুষের স্বতঃস্ফুর্ত সাড়া। পথচলতি আমজনতা থমকে যাচ্ছেন বিমান বসুকে দেখে।
কেউ বলছেন কমরেড। কেউ বলছেন বিমান দা। কেউ আবার আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন ওই লাল বালতিতে। সিপিএম পার্টি আর্থিক দিক থেকে এখনো এরাজ্যে শীর্ষে। তাহলে বালতি হাতে পথে নামতে হবে কেন?
আসলে বামপন্থীদের এটাই জনভীত্তি। বলা ভালো বামপন্থীদের রাজনৈতিক কালচার এটি। যখন এরাজ্যে বামফ্রন্ট ক্ষমতায়, ছিল তখনও বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের সময়ে পথে নেমেছিল।
সেই সময় বাংলা শুধু বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ নির্মাণ ছাড়াও রাজ্যের বিভিন্ন সময় বিশেষ কর্মসূচির ময়দানে চাঁদা সংগ্রহ করাটা তাদের কাছে রাজনৈতিক ভিত্তি বলে মনে করতেন। আজও করেন।
তাই ত্রিপুরার বামফ্রন্ট কর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার পর পথে নেমে বিমান বসু যেভাবে অর্থ সংগ্রহ করছেন, তাতে তাঁর বয়সকে অবশ্যই শ্রদ্ধা জানাতেই হবে। এমনটাই মনে করছেন নেটিজেনরাও।
পাশাপাশি নেটিজেনরা একথাও বলছেন এ রাজ্যে বামফ্রন্টের রক্তক্ষরণ অব্যহত। তা সত্ত্বেও পথে কেন ? এটাই বামফ্রন্ট বা সিপিআইএমের আসল কৌশল মানুষের কাছে পৌঁছবার। যদিও এরাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতার সিংহাসনে বসলেও বিরাশির বিমান বসুকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও শ্রদ্ধার চোখে দেখেন।
তৃণমূলের বাড়বাড়ন্তে নিষ্ক্রিয় হচ্ছে কংগ্রেস
কারন এই রাজনৈতিক সন্ন্যাসীকে মমতা একা কেন, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের সময় প্রচারে বলেছিলেন বিমান দাকে দেখে শ্রদ্ধা হয়। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর এই পথে নেমে ত্রিপুরার বাম কর্মীদের পাশে দাঁড়াবার জন্য উদ্যোগ নতুন প্রজন্মকে কমিউনিস্ট আন্দোলনে প্রভাবিত করবেই।
অতি বড় নিন্দুকেরাও বিমান বসু সম্পর্কে কটূক্তি মন্তব্য করতে বিরত থাকেন। কারণ তাঁর সততা এবং রাজনৈতিক সংগ্রাম সকলের জানা। তাই তো রক্তক্ষরণে পরেও কিছুটা হলেও বিমান বসুর মতো রাজনৈতিক সন্ন্যাসীকে দেখে দল উদ্বুদ্ধ হবে এটাই স্বাভাবিক।
অবশ্য এ রাজ্যের শাসক দল মনে করেন বামফ্রন্ট আর কোনদিন ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারবে না। কিন্তু ইতিহাসে সীলমোহর দেওয়ার অধিকার কারও নেই। কেউ বলতে পারেনা ভবিষ্যতে কোথায়। রাজনীতিতে সিংহাসন চিরস্থায়ী নয়। ভাবুন যদি কোন একদিন বামফ্রন্ট যদি ফিরে আসে ফিনিক্স পাখির মত তাহলে কেমন হবে?
সময়ের উপর সবকিছু ছেড়ে রাখতে হয়। আর বিমান বসুর মতো সন্ন্যাসী থাকলে সিপিআইএম-র নতুন প্রজন্ম এবং বর্তমান প্রজন্ম উদ্বুদ্ধ হবে এটাই স্বাভাবিক। এখন দেখার বামফ্রন্ট বা সিপিএম ঘুরে দাঁড়াতে পারে কিনা।
বিমান বসুর ছবি হয়তো নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়নি। কিন্তু যেটা হয়েছে এই বয়সে রাস্তায় নেমে আর পাঁচটা কমিউনিস্ট নেতার সঙ্গে রীতিমতো টেক্কা দিতে পারেন সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন।