বিজেপি থেকে ঘর-ওয়াপসি দাপুটে নেতা বিপ্লব মিত্রের

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার দাপুটে নেতা বিপ্লব মিত্র বিজেপি ছেড়ে ফের তৃণমূলে ফিরলেন। শুক্রবার তৃণমূল ভবনে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূল কংগ্রেসে ফিরলেন। বৃহস্পতিবারই তাঁর তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কথা থাকলেও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রর মৃত্যুতে সেটি বাতিল হয়।

এরপর বিপ্লববাবু ও তাঁর ভাই প্রশান্ত মিত্রের ঘরে ফিরলেন। বিপ্লববাবুকে প্রাক্তন তৃণমূল কংগ্রেস জেলা সভাপতি এবং তাঁর ভাই প্রশান্ত মিত্র গঙ্গারামপুর পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান।

তাঁদের এই ‘ঘর ওয়াপসি’তে রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত, তৃণমূলের একেবারে প্রথম দিককার সঙ্গী দক্ষ সংগঠন বিপ্লব মিত্রের ভূমিকার কথা মাথায় রেখে ফেরানো হল তাঁকে। এর জেরে অবশ্য বড়সড় ধস নামল দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা বিজেপিতে।

তৃণমূলের প্রথম দিন থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গী পোড়খাওয়া রাজনীতিক বিপ্লব মিত্র। দীর্ঘদিন সামলেছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা সভাপতির পদ। পরবর্তী সময়ে নাট্যকর্মী অর্পিতা ঘোষে সেই জেলার দায়িত্ব পাওয়ার পরই দ্বন্দ্বে শুরু।

অর্পিতা ঘোষ-বিপ্লব মিত্রের অন্তর্দ্বন্দ্বের কথা তৃণমূলের অন্দরে সুবিদিত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও অর্পিতার উপর নির্ভর করে এ বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন একাধিকবার।

কিন্তু শেষমেশ উভয়ের মতান্তর আর মেটেনি। উনিশের লোকসভায় জেলায় দলের খারাপ ফলাফলের পর অভিমান নিয়েই বিপ্লব মিত্র সদলবলে তৃণমূল ছেড়ে বেরিয়ে যান, যোগ দেন গেরুয়া শিবিরে।

বিজেপি ছাড়ার কারণ জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমরা বরাবর দক্ষিণপন্থী রাজনীতি করে এসেছি। বিজেপি–তে গিয়ে মানসিকভাবে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারছিলাম না। নীতি আদর্শের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য রয়েছে। কাজ করা যাচ্ছিল না। সেখানে সবটাই নিয়ন্ত্রণ গুজরাট ও দিল্লি থেকে। তাই নিজের দলেই ফিরে এলাম।

২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন বিপ্লব। ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে হেরে যান।

নিজে লড়ছেন করোনার সঙ্গে, চলবে ৫০ টাকায় ডায়ালিসিস ‘সংকল্প’ প্রতিজ্ঞা ফুয়াদের

২০১৯–এর লোকসভা নির্বাচনে বালুরঘাট কেন্দ্র থেকে অর্পিতা ঘোষ হেরে যান। সেই সময় দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা সভাপতি ছিলেন বিপ্লববাবু।

লোকসভা নির্বাচনে তাঁর কাজে দল সন্তুষ্ট হয়নি। তাঁকে জেলার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে, অর্পিতাকে জেলা সভাপতি করা হয়। বিপ্লববাবু ও তাঁর ভাই বিজেপি–তে চলে যান। জেলাতে তাঁরা কাজ করার খুব একটা সুযোগ পাচ্ছিলেন না।

ইতিমধ্যে দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা পরিষদের কয়েকজন সদস্য বিজেপি–তে যোগ দিয়ে ফিরে আসেন ফের তৃণমূলে। সম্প্রতি অর্পিতাকে জেলা সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে গৌতম দাসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। গৌতম, বিপ্লববাবুর ঘনিষ্ঠ অনুগামী বলে পরিচিত।

সম্প্রতি একুশের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে তিনি দক্ষিণ দিনাজপুরের দলীয় সংগঠনে বদল এনেছেন। তার প্রথম ধাপ অর্পিতা ঘোষকে জেলা সভানেত্রী পদ থেকে সরিয়ে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া। নতুন জেলা সভাপতি গৌতম ঘোষ। আর তারপরপরই বিপ্লব মিত্র এবং তাঁর ভাইয়ের তৃণমূলে ফেরা।

রাজনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা, বিপ্লব মিত্রদের ফেরার পথ প্রশস্ত করতেই অর্পিতা ঘোষকে সরানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে যাই হোক, দীর্ঘদিন দলের দক্ষ সংগঠক ফিরে আসায় দক্ষিণ দিনাজপুরে শাসক নেতৃত্বে শক্তি ফিরল বলে মনে করা হচ্ছে। উলটোদিকে, গেরুয়া শিবির দুর্বল হয়ে পড়ল বেশ খানিকটা।

তৃণমূল ভবন থেকে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ২১-এ জুলাইয়ের ভার্চুয়াল সভা থেকে যাঁরা তৃণমূল ছেড়ে চলে গিয়েছেন, তাঁদের দলে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

যাতে এক সঙ্গে অতিমারী করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করা যায়। তিনি জানান, জেলা স্তরে অনেকেই জননেত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে ফিরে এসেছেন। যেমন বিপ্লব মিত্র ঘরে ফিরে এসেছেন।

সম্পর্কিত পোস্ট