রাম মন্দিরের ভিত্তি স্থাপনে ঠাকুরনগরের জল-মাটি ব্যবহার না করার অভিযোগ, বিজেপি তৃণমূল রাজনৈতিক চাপানউতোর

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে ঠাকুর নগরের মাটি ও কামনা সাগরের ব্যবহার না করার অভিযোগে মতুয়াদের একাংশের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বনগাঁয় মতুয়াদের এক কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে এব্যাপারে মতুয়া মহাসংঘের নেত্রী মমতা ঠাকুর মতুয়াদের আরেক অংশের নেতা ও বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে তাঁকে ‘বিভীষণ’-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন। শান্তনু ঠাকুরের উদ্যোগেই ঠাকুরনগরের মাটি ও জল অযোধ্যায় পাঠানো হয়েছিল বলেও মমতা ঠাকুর মন্তব্য করেন।

প্রাক্তন তৃণমূল এমপি ও মতুয়া নেত্রী মমতা ঠাকুর বলেন, ‘মতুয়া ধর্মের পীঠস্থান ওড়াকান্দি ও ঠাকুরনগরের ঠাকুর বাড়ি। ঠাকুরনগরের মতুয়াধামের মাটি ও কামনা সাগরের জল নিয়ে যে অপমান করেছে সেজন্য সারা ভারত ও পৃথিবীর মতুয়া গর্জে উঠেছে। আমরা সকলেই চাই তাঁকে (শান্তনু ঠাকুর) বহিষ্কার করা হোক।

তিনি আরও বলেন, শান্তনু ঠাকুর বলছেন যে তারা ওখান থেকে (অযোধ্যা) ঠাকুরনগরের মতুয়াধামের মাটি ও কামনা সাগরের জল প্রত্যাখ্যান করেনি। এব্যাপারে আমাদের দাবি, ওখানে (অযোধ্যায়) যে ট্রাস্ট আছে তারা বলুন এখানকার জল ও মাটি নিয়েছে কি না। এব্যাপারে শান্তুনু ঠাকুরের বিরুদ্ধে সর্বত্র বিক্ষোভ এবং কুশপুতল পোড়ানো হবে।’

মমতা ঠাকুরের অভিযোগ, শান্তনু ঠাকুর মতুয়া সমাজ ও হরিগুরুচাঁদ ঠাকুরকে অমর্যাদা করেছেন।

বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক ও তৃণমূল নেতা গোপাল শেঠ বলেন, মতুয়াদের পবিত্র মাটি-জলকে প্রত্যাখ্যান করে যেভাবে অপমান করা হয়েছে আমরা তা কোনোভাবেই মেনে নেব না।

জম্মু-কাশ্মীরের ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণের বর্ষপূর্তির দিনেই লেফটেন্যান্ট গর্ভনর পদ থেকে বিদায় নিলেন গিরিশ চন্দ্র মুর্মু

এ নিয়ে মতুয়া মহাসংঘের বনগাঁ মহকুমার যুগ্মসম্পাদক আইনজীবী প্রসেনজিৎ বিশ্বাস বলেন, ‘যারা ওড়াকান্দি ও ঠাকুরনগরের জল-মাটি নিয়ে রাজনীতি করছেন তাদের বিরুদ্ধে যেন সারা দেশের মতুয়া সমাজ গর্জে ওঠে। কারা ঠাকুরনগরের মাটি ও জল চেয়েছিল এবং কারা তা প্রত্যাখ্যান করলেন তা প্রকাশ্যে আসুক। তা না হলে যারা এটাকে নিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’

গোটা বিষয়টি মতুয়াদের জন্য অত্যন্ত অমর্যাদাকর। লকডাউন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এনিয়ে গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে এবং শান্তনু ঠাকুরকে বয়কটের ডাক দেওয়া হবে বলেও মতুয়া নেতা ও আইনজীবী প্রসেনজিৎ বিশ্বাস মন্তব্য করেন।

এদিকে, যার বিরুদ্ধে মতুয়াদের একাংশের ক্ষোভ ও অভিযোগ, সেই মতুয়া নেতা ও বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর ফেসবুক লাইভে বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘কিছু সংবাদমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়াতে অপ্রচার হচ্ছে যে শ্রীধাম ওড়াকান্দি এবং শ্রীধাম ঠাকুরনগরের পবিত্র মাটি ও জল রাম মন্দিরের কাজে গৃহীত হয়নি। কিন্তু আমার মনে হয় এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং সম্পূর্ণ অপপ্রচার। যা কোনও রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে।’ ঠাকুরনগরের মাটি ও জল রাম মন্দির নির্মাণের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে বলেও তাঁর দাবি।

যদিও মতুয়া নেতা প্রসেনজিৎ বিশ্বাসের দাবি, অযোধ্যার ভূমিপুজো ও শিলান্যাসের মতো এতবড় কর্মসূচিতে দেশের কোন কোন জায়গা থেকে মাটি ও জল গিয়েছে তার তালিকা নিশ্চয় সেখানকার কর্তৃপক্ষের কাছে যথাযথভাবে সংরক্ষিত আছে। সেখানকার নিশ্চিত তথ্য দিয়েই শান্তনু বাবুকে প্রমাণ দিতে হবে যে ঠাকুরনগরের জল ও মাটি ব্যবহার করা হয়েছে।

বুধবার সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্যও একটি টিভি চ্যানেলের টক-শোতে অযোধ্যার ভূমিপুজোর অনুষ্ঠানে ঠাকুরনগরের পবিত্র মাটি ও কামনা সাগরের জল প্রত্যাখাত হয়েছে, ওঁরা গ্রহণ করেননি বলে মন্তব্য করেন।

এভাবে উভয়পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দাবিতে মতুয়াদের একাংশের মধ্যে যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

সম্পর্কিত পোস্ট