নিচুতলার হতাশার প্রতিফলন? দিলীপকে নিয়ে চিন্তা বাড়ছে বিজেপির
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ রাজ্যে বিজেপির প্রধান বিরোধী দল হিসেবে উঠে আসার পিছনে বাম কর্মী সমর্থকদের একাংশের সমর্থন অন্যতম কারণ বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ২০১৬ এর বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই শাসক তৃণমূলের চাপ মোকাবিলা করতে কার্যত ব্যর্থ হয় বাম নেতৃত্ব। ফলে জেলায় জেলায় ‘শেল্টার’ এর জন্য কেন্দ্রের ক্ষমতায় থাকা বিজেপির দিকে ভিড়তে শুরু করেন তাঁরা।
তৃণমূলের মোকাবিলায় সেই সময় অনেকটাই সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন বিজেপি নেতারা। তার ফল বিজেপি ১৯ এর লোকসভা নির্বাচন এবং ২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে পেয়েছে। কিন্তু তৃতীয় তৃণমূল সরকার শপথ নেওয়ার মাস খানেকের মধ্যেই ছবিটা বদলাতে শুরু করে। বিজেপি নেতৃত্বের উপর নিচু তলার ওই কর্মী সমর্থকদের হতাশা বাড়তে থাকে।
২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের পর ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের অভিযোগের সরব হয় বিজেপি। এই নিয়ে তারা আদালতের দ্বারস্থও হয়। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে এই বিষয়ে সিবিআই তদন্ত শুরু হয়। সেই সময় বিজেপির পক্ষ থেকে নিয়ম করে বলা হতো, সন্ত্রাসের জড়িত তৃণমূল নেতাকর্মীরা কেউ ছাড় পাবে না।
দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু অধিকারী, সৌমিত্র খাঁরা বলতেন, সিবিআই কাউকে ছাড়বে না। কিন্তু সিবিআই এর দল ও কেন্দ্রীয় মানবাধিকার কমিশনের টিম রাজ্যে এসে প্রাথমিক তদন্ত করলেও উল্লেখযোগ্য কোনও সাফল্য আসেনি। এমনকি তৃণমূলের কোনও বড় নেতা এই ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের মামলায় ধরা পড়েছেন এমনটাও দেখা যায়নি।
ত্রিপুরা পার্টিতে বড় ঝাঁকুনি দিল তৃণমূল, রাজ্য সভাপতিকে সরানো হল
তাছাড়া চিটফান্ড কেলেঙ্কারি সহ নানান দুর্নীতি ঘটনায় নিচু তলার বিজেপি কর্মী সমর্থকদের একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত। প্রথমে দলের নেতাদের লম্বা চওড়া কথা শুনে তাঁরা ভেবেছিলেন এবার ঠিক তৃণমূলকে ‘টাইট’ দেওয়া যাবে।
কিন্তু বাস্তবে তেমন কিছুই না ঘটায় তাঁদের ক্ষোভ ক্রমশই বাড়ছে। নিচু তলার এই কর্মী সমর্থকদের ক্ষোভের প্রতিফলনে দিলীপ ঘোষের সিবিআই-তৃণমূল সেটিং মন্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের ধারণা।
দিলীপ নানান সময় নানান বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। কিন্তু বাংলায় তাঁর হাত ধরেই যে বিজেপির উত্থানের সূচনা তা অস্বীকার করার উপায় নেই। ফলে নিচুতলার কর্মী সমর্থকদের পালস ভালই বোঝেন মেদিনীপুরের সাংসদ।
বর্তমান পরিস্থিতিতে হতাশায় নিচুতলার বিজেপি কর্মী সমর্থকদের একাংশ আবার বামেদের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছে বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। সম্ভবত দিলীপ ঘোষও এটা বুঝতে পেরেছেন। তাই দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে বার্তা দিয়ে কেন্দ্রীয় এজেন্সিদের সক্রিয় করতে এবং নিচুতলার হতাশা কাটাতে তিনি এমন মন্তব্য করে থাকতে পারেন বলে অনেকে মনে করছেন।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের অবশ্য ধারণা, সুকান্ত-শুভেন্দুদের নেতৃত্বে বাংলায় বিজেপি যে পথে চলছে তা পছন্দ নয় দিলীপ ঘোষের। নিজের হাতে সাজানো ‘সংসার’ ভেঙে যাচ্ছে দেখেই আরএসএসের অনুমতি নিয়ে তিনি এইভাবে সরাসরি দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে নিশানা করতে শুরু করেছেন। তবে মূল কারণ যাই হোক, দিলীপ যে রাজ্য বিজেপির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বিজেপিরও অন্যতম মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে উঠেছেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।