শুভেন্দু-সুকান্ত গ্রেফতার, দিলীপকে ছুঁলো না পুলিশ, নবান্ন অভিযান শেষে বিজেপিতে বিতর্ক তুঙ্গে
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ ব্যর্থতা এবং সাফল্য, একটি ফলাফলের ব্যাখ্যা যদি একসঙ্গে ই এই দুটোই হয় তবে তাকে কী বলা যেতে পারে? বিজেপির নবান্ন অভিযান এই বিচিত্র সমীকরণের আদর্শ উদাহরণ হতে পারে।
প্রথমেই দেখে নেওয়া যাক বিজেপির নবান্ন অভিযান কেমন ছিল
বিজেপির এই নবান্ন অভিযানের তিনজন সেনাপতি ছিলেন। তাঁদের মধ্যে থেকেই অঘোষিত কমান্ডার ইন চিফ ছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু ম্যাচের শুরুতেই উটকো ঝামেলায় জড়িয়ে খোদ তিনিই ময়দান থেকে আউট হয়ে গেলেন! এদিন বেলা ১২ টার মধ্যেই গ্রেফতার হয়ে যান শুভেন্দু। তারপর লালবাজারে বসেই ফেসবুক লাইভ করেন। এদিনের অভিযানে এটাই তাঁর যোগদান।
তবে সাঁতরাগাছি যেতে গিয়ে কলকাতার পিটিএসে শুধু গ্রেফতার হওয়া নয়, তার আগে ‘ডোন্ট টাচ মি’ বলে মহিলা পুলিশ কেন গায়ে হাত দিয়েছে সেই নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রবল শোরগোল ফেলে দেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। কিন্তু সন্ধে হওয়ার আগেই তাঁর এই মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড়ের গতিতে ভাইরাল হয়ে পড়েছে। আজ যেখানে তিনি ম্যান অব দ্যা ম্যাচের মুকুট পরতে পারতেন, সেখানে ব্যাঙ্গাত্মক মিমের শিকার। এর যাবতীয় দায় নিঃসন্দেহে শুভেন্দুরই।
এদিকে হাওড়ায় মিছিলকে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব ছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। কিন্তু পুলিশ তাঁকে সহকর্মীদের কাছে পৌঁছতে বাধা দিতে পারে বুঝে সোমবার সারারাত হাওড়া স্টেশনের ভিআইপি ওয়েটিংরুমে থাকেন। সুকান্তর এই কৌশলী পদক্ষে রাজনৈতিক মহলের নজর কেড়েছে।
পরে তাঁর নেতৃত্বে মিছিল শুরু হয়ে নবান্নের দিকে যাওয়ার সময় পথ রোধ করে পুলিশ। সেখানে কার্যত তুলকালাম বেধে যায়। পুলিশকে লক্ষ্য করে বিজেপি কর্মী সমর্থকরা ইট ছুড়তে শুরু করলে জল কামান, কাঁদানে গ্যাস, বেপরোয়া লাঠিচার্জ করে জমায়েত ছত্রভঙ্গ করে দেয় হাওড়া কমিশনারেটের পুলিশ।
ইডি-সিবিআইয়ের অতি সক্রিয়তার বিরুদ্ধে বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ করবে সরকার
তাঁর নেতৃত্ব দিন মিছিল লড়াকু মেজাজ ধরে রাখায় সুকান্ত নিশ্চয়ই প্রশংসিত হবেন। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁকে গ্রেফতার করে শিবপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে তিনি যে দিলীপ ঘোষ তা কোনও না কোনওভাবে প্রমাণ করতেই হবে! মঙ্গলবারের নবান্ন অভিযানে সবচেয়ে বিতর্কিত কাজটা করেছেন বিজেপির এই সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি। সুকান্ত মজুমদারের নেতৃত্বে হাওড়ায় যখন বিজেপি কর্মী সমর্থকরা পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করছে, যখন খোদ রাজ্য সভাপতি ময়দানে আছেন, সেইসময় হঠাৎই দিলীপ ঘোষ ঘোষণা করলেন আজকের নবান্ন অভিযান শেষ! ঘড়ির কাঁটায় তখন ২ টো বেজে ৪০ মিনিট হয়েছে।
এদিন দিলীপ ঘোষের পারফর্মেন্স ছিল কেমন?
শুভেন্দু অধিকারী ও সুকান্ত মজুমদারকে জমায়েতের নিরিখে রীতিমতো টেক্কা দিয়েছেন দিলীপ ঘোষ। কলেজ স্ট্রিট থেকে নবান্ন অভিমুখী মিছিলের নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধে। সেই মিছিল রীতিমতো সফল। সবচেয়ে বেশি বিজেপি কর্মীর জমায়েত এখানেই হয়েছিল। কিন্তু ওই মিছিলের ‘মুড’ নবান্ন অভিযানের পরিবর্তে অনেক বেশি উচ্ছ্বাস ও আনন্দে ভরপুর ছিল। লড়াই অপেক্ষা প্রচারের মেজাজে ছিলেন দিলীপের নেতৃত্বাধীন বিজেপি কর্মী সমর্থকরা।
কলেজ স্ট্রিট হয়ে বেশ কিছুটা পথ পেরিয়ে এই মিছিল হাওড়া ব্রিজের কাছাকাছি পৌঁছলে পুলিশ পথ আটকায়। এই সময় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বিজেপি কর্মী ও কলকাতা পুলিশ। মাথা ফেটে যায় কলকাতার প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র মিনাদেবী পুরোহিতের। হঠাৎই মিছিলের সামনে দাঁড়িয়ে পুলিশের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে নবান্ন অভিযানে দাড়ি টানার কথা ঘোষণা করেন দিলীপ ঘোষ। অথচ কর্মীরা তখনও লড়াইয়ের মেজাজে ছিল। ফলে আশাহত হয়ে দ্রুত ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে।
তবে সাঁতরাগাছিতে জড়ো হওয়া বিজেপি কর্মীরা রীতিমতো নাকানিচোবানি খাওয়ান পুলিশকে। লোহার ব্যারিকেড ও জলকামান ছুড়ে পথ আটকালে গেরিলা কায়দায় রেল স্টেশনকে ‘বেস পয়েন্ট’ করে তোলেন এখানকার বিজেপি কর্মীরা। এরপরই পর্যায়ক্রমে পুলিশকে পাথর ছুড়ে স্টেশনে লুকিয়ে পড়তে থাকেন তাঁরা। তাঁদের সামলাতে ব্যারাকপুর কমিশনারেট থেকে অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে আসতে হয়।
সাঁতরাগাছির মিছিলের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল শুভেন্দু অধিকারীর। ম্যাচ শুরু হওয়ার আগেই তিনি আউট হয়ে গেলেও বাকি ‘ব্যাটসম্যানরা’ রীতিমতো তাক লাগিয়ে দেন। অনেকে সাঁতরাগাছি রং ঘটনায় নিখুঁত পরিকল্পনার ছাপ দেখছেন!
তবে দিলীপ ঘোষের ‘অভিযান শেষ’-এর ঘোষণা ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে। খোদ রাজ্য সভাপতি যখন লড়ে যাচ্ছেন, সেই সময় তিনি কেন এই ঘোষণা করলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সূত্রের খবর, দিলীপের ঘোষণায় বেশ ক্ষুব্ধ শুভেন্দু-সুকান্ত। সেই সঙ্গে দিলীপ ঘোষকে পুলিশ কেন গ্রেফতার করল না তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। কোন ‘সমীকরণে’ তাঁর গায়ে একটা আঁচড়ও পড়ল না রাজ্য রাজনীতিতে এই প্রশ্ন ক্রমশ বড় হয়ে উঠছে।
তবে এবারের নবান্ন অভিযানে জলকামান থাকলেও, সেখান থেকে সাদা জলই বেরিয়েছে। এবার আর বেগুনী, গোলাপী জল দেখা যায়নি! এদিকে, বিজেপির দাবি তাদের শতাধিক কর্মী আহত হয়েছে। যদিও নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
বিজেপির এদিনের নবান্ন অভিমানকে যথারীতি ফ্লপ বলে দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মেদিনীপুরের বৈঠকে তিনি বলেন, “বিজেপির বেলুন চুপসে গিয়েছে। ওদের নবান্ন অভিযানে লোক হয়নি।”
দিনের শেষে একটা বিষয় পরিষ্কার, নেতারা গোল্লা পেলেও সাঁতরাগাছি ভালোমতো ছাপ রেখে গেল রাজ্য রাজনীতিতে।