রাজনীতি বুঝিনা , আমি সামান্য শিল্পী, যে ডাকবেন সাড়া দেব- স্বীকারোক্তি বাসুদেব বাউলের

দ্য কোয়ারি ডেস্ক :  শাহকে ভোজনে আপ্যায়নকারী বাসুদেব বাউল ৯ দিনের ব্যবধানে মমতার পদযাত্রায় সামিল ।

সেই ট্র্যাডিশন আজও চলছে। শুরু হয়েছিল উত্তরবঙ্গের হতদরিদ্র পরিবার মাহালি দম্পতিকে দিয়ে।আর মঙ্গলবার সেই বৃত্তে জুড়ে গেলেন দিন কয়েক আগে অখ্যাত থেকে বিখ্যাত হয়ে যাওয়া বোলপুরের বাউল শিল্পী বাসুদেব বাউল।

২০ ডিসেম্বর নিজের বাড়ির দাওয়ায় যিনি দেশের পরাক্রমশালী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে মধ্যাহ্নভোজনে আপ্যায়ন করেছিলেন, তিনিই এদিন পা মেলালেন মমতার মিছিলে। মন খুলে গাইলেন, ‘তোমায় বক্ষ মাঝে রাখব, ছেড়ে দেব না।’

তবে কী রাজনৈতিক ডিগবাজি খেলেন মাঠে-ঘাটে ঘুরে মানুষের গান গাওয়া বাউল শিল্পী বাসুদেব বাউল? ইদানিং প্রচারের আলোকবৃত্তে থাকা শিল্পী নিজে অবশ্য রাজনৈতিক ডিগবাজি খাওয়া মানতে চাননি।

বাসুদেব বাউলের সরল-স্বীকারোক্তি, ‘অতশত রাজনীতি বুঝি না। আমি সামান্য শিল্পী। যে ডাকবেন, তাঁর ডাকেই সাড়া দেব। অমিত শাহ বাড়িতে এসেছিলেন। তাঁকে খাইয়েছি। তেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডেকেছেন, এখানেও এসেছি।’

যদিও বাউল শিল্পীর সেই সরল স্বীকারোক্তিতেও রাজনীতির তরজা থামেনি। বরং বিজেপি আর তৃণমূল নেতারা নতুন করে রাজনৈতিক তরজায় জড়িয়েছেন।

http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/tmc-leader-shootout-in-howrah/

গত ২০ ডিসেম্বর দু’দিনের রাজ্য সফরে এসে শেষের দিন অর্থাৎ ২০ ডিসেম্বর বোলপুরে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। দুপুরে রতনপল্লীর বাসিন্দা বাউল শিল্পী বাসুদেব বাউলের বাড়িতে পাত পেড়ে খেয়েছিলেন। আর তাতেই কেল্লাফতে।

সারা দেশজুড়ে সংবাদ শিরোনামে চলে এসেছিলেন ‘নুন আনতে পান্তা ফুরনোর জোগাড়’-এর উপক্রম অখ্যাত বাউল শিল্পী। সেদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সামনে পেয়ে নিজের সঙ্গীত প্রতিভার সাক্ষ্যও রেখেছিলেন বাসুদেববাবু। গান শুনিয়েছিলেন অমিত শাহ সহ বিজেপি নেতাদের। সেই গানে মাথা নেড়ে তাল-ও ঠুকেছিলেন দেশের পরাক্রমশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।

নিজের দুর্দশার কথাও শোনাতে চেয়েছিলেন অমিত শাহকে। কিন্তু সেই সুযোগ হয়নি। তাই সফর শেষে সাংবাদিকদের কাছে নিজের আক্ষেপ তুলে ধরেছিলেন শিল্পী।

বিষন্ন কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘ভেবেছিলাম, মেয়েটার উচ্চ শিক্ষার ব্যাপারে সাহায্য চাইব। কিন্তু তা বলার সুযোগই হলো না।’

মেয়ের উচ্চশিক্ষা নিয়ে বাসুদেববাবুর আক্ষেপ ঘোচাতে এগিয়ে এসেছিলেন বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। অমিত শাহের সভার পরের দিনই বাউল শিল্পীকে পাশে বসিয়ে ঘোষণা করেছিলেন, তাঁর মেয়ের উচ্চশিক্ষার দায়িত্ব তিনি নিচ্ছেন।’

অমিত শাহের পাল্টা হিসেবে এদিন বোলপুরের লজ মোড় থেকে জামবুনি পর্যন্ত চার কিলোমিটার পদযাত্রা করেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই রোড শোয়ে অংশ নিয়েছিলেন হাজারের বেশি বাউল শিল্পী। কিন্তু সেই ভিড়েও উজ্জ্বল হয়ে উঠল বাসুদেব বাউলের উপস্থিতি। শুধু হাঁটলেনই না, গানও ধরলেন। শুধু পদযাত্রায় হাঁটতে-হাঁটতে গাইলেন না।

পদযাত্রা শেষে জামবুনিতে রবীন্দ্র মূর্তির পাদদেশে পথসভা করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সভা শেষে বাসুদেবকে ডেকে নেন মমতা। অনুরোধ জানালেন, গান শোনানোর।

তৃণমূল নেত্রীর সেই অনুরোধে সাড়া দিয়ে উদাত্ত কণ্ঠে বাসুদেব গান ধরেন, ‘তোমায় হৃদ মাঝারে রাখব, ছেড়ে দেব না, সোনার দিদিরে বক্ষ মাঝে রাখব, ছেড়ে দেব না। ছেড়ে দিলে সোনার দিদি আর তো পাব না। দিদিকে আপন করে রাখব, ছেড়ে দেব না। দিদিকে আমরা সবাই বক্ষ মাঝে রাখব, ছেড়ে দেব না।’ গানে খুশি হয়ে বাউল শিল্পীকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন মমতা।

সম্পর্কিত পোস্ট