“রক্ত দিয়ে প্রমান করেছিলো লড়াই-এর ময়দান ছেড়ে ছাত্র পরিষদ পালিয়ে যায় না”

পার্থ প্রতীম বিশ্বাস সম্পাদক, পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি

সালটা ১৯৮৪। আমি তখন শিবপুর দীনবন্ধু কলেজের ছাত্র এবং অবশ্যই ছাত্র পরিষদের সক্রীয় সদস্য। সে বছর কলেজে স্টুডেন্টস হেল্থ হোম এর নতুন শাখা খোলা হলো। কলেজে তখন এসএফআইএর শাসন। হেল্থ হোম উদ্বোধন করলেন তৎকালীন বাম রাজত্বের স্বাস্থমন্ত্রী রামনারায়ন গোস্বামী।

কলেজে সেদিনের সেই অনুষ্ঠানে রক্তদান শিবিরও হয়েছিলো। তখনকার দিনে কাঁচের বোতলে রক্ত নেওয়া হতো। সদ্য উৎঘাটিত হেল্থ হোমের নতুন ঘরে আয়োজিত রক্তদান শিবিরে মাত্র চল্লিশ জন রক্তদাতা রক্ত দিতে পারবে।

এসএফআই নিজেদের ছেলেদের দিয়ে রক্তদান শিবির এলাকাটা ঘিরে রেখেছে আর একে একে ৩৯জন এসএফআই সদস্য রক্ত দিয়েছে। সকলেই যে আমাদের কলেজের তা কিন্তু নয়। বাইরের ছেলে এমনকি তৎকালীন বি.ই. কলেজ থেকেও রক্ত দিতে এসেছে এসএফআই এর সদস্যরা। কিন্তু ছাত্রপরিষদ ব্রাত্য।

তাহলে! ছাত্র পরিষদ কি রক্ত দেবে না, দিতে পারবে না? আসলে এসএফআই চেয়েছিলো প্রচারের সুযোগটা একাই নিয়ে নিতে। চুপি চুপি আমি শেষ রক্তদাতা হবার জন্য লাইন দিলাম। আমার আগে দুজন দাঁড়িয়ে। একে একে তারা প্রাথমিক পরীক্ষায় ফেল করলো।

হঠাৎই এসএফআইএর পার্থ নন্দী আমাকে দেখতে পেয়ে ছুটে এসে আমাকে কনুই দিয়ে গুঁতো মেরে সরিয়ে দিয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে পড়লো। এরপর প্রাথমিক পরীক্ষায় পাশও করে গেলো।

‘ছাত্র দরদী ‘ রাজ্যপাল জেইই ও নিট নিয়ে চুপ কেন প্রশ্ন তৃণমূল সাংসদ নুসরতের

যাঃ কি হবে! ছাত্র পরিষদকে তো রক্ত দিতেই হবে। আমি বেডের পাশে দাঁড়িয়ে চোখ বুঁজে আমার ঈশ্বরকে ডাকতে লাগলাম। আমাকে একটা সুযোগ করে দাও হে ঈশ্বর।

ওদিকে পার্থ নন্দী বেডে শুতেই দ্বিতীয়বারের জন্য ওর প্রেশার মাপা হলো। নাহ্ ওর প্রেশার হাই হয়ে গেলো। পারলোনা রক্ত দিতে। ডাক্তারবাবু ওকে বেড ছেড়ে দিতে বললেন।

সাথে সাথেই আমি শুয়ে পড়লাম। মন শক্ত করে চোখ বন্ধ করে আবারও ঈশ্বর কে বললাম, আমাকে পাশ করিয়ে দাও হে ঈশ্বর! তারপর আর কিছু জানিনা। বুঝলাম যখন আমার হাতে সুঁচ ফোটানো হলো। রক্ত বেরিয়ে বোতল ভরতে লাগলো।
সেটা ছিলো আমার জীবনে প্রথম রক্ত দেওয়া।

শেষ মুহুর্তে হলেও ছাত্র পরিষদ হারেনি। রক্ত দিয়ে প্রমান করেছিলো, লড়াইএর ময়দান ছেড়ে ছাত্র পরিষদ পালিয়ে যায় না। আর সে লড়াইয়ে শেষমুহুর্ত পর্যন্ত লড়ে জয়ী করবার জন্য আজও আমি আমার ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করি।

সম্পর্কিত পোস্ট