Bogtui massacre: রোজগার বন্ধ, সেই রাতে প্রাণে বাঁচলেও এবার ভাতে মরার জোগাড় বগটুইবাসীর!

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্ক:সিবিআই তদন্তের মাঝেই বগটুই গণহত্যায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ল। এখনও অগ্নিদগ্ধ আরও তিনজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁদের অবস্থা স্থিতিশীল হলেও শেষ পর্যন্ত কী হবে তা বলা যাচ্ছে না।

ফলে আক্রান্ত মিহিলাল শেখ, ফটিক শেখ, শেখলালরা চোখের জল পুরোপুরি মুছে উঠতে পারেননি। আবার কাউকে হারাতে না হয় এই ভয় তাঁদের কুরে কুরে খাচ্ছে। আতঙ্ক এতটাই তীব্র রাজ্য প্রশাসন সম্পূর্ণ নিরাপত্তার আশ্বাস দিলেও গ্রামে ফিরতে পারেননি তাঁরা।

এখানে ওখানে আত্মীয়স্বজনের বাড়ি থাকছেন আক্রান্তরা। তবু তো আক্রান্তরা কিছুটা হলেও ক্ষতিপূরণ পেয়েছে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে। কিন্তু সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছে সরাসরি আক্রান্ত না হওয়া বগটুইয়ের সেই বাসিন্দারা যারা এখনও ওই গ্রামে থেকে গিয়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে সংসারের হাঁড়ি চড়বে কী করে সেটাই তাঁরা ভেবে পাচ্ছেন না।

Modi-WB’s BJP MP meet :প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে আমন্ত্রণ বাংলার বিজেপি সংসদের, কিন্তু কেন…

ওই মর্মান্তিক ঘটনার পর এক সপ্তাহ পার হল। কিন্তু অশান্তির আশঙ্কা থেকে গ্রামবাসীদের পাশাপাশি প্রশাসনও পুরোপুরি মুক্ত নয়। ফলে বগটুই ঘিরে রেখেছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ। যে গ্রামে আগের সেভাবে পুলিশের দেখাই পাওয়া যেত না সেখানে আজ দু’হাত ছাড়া ২৪ ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকছেন পুলিশকর্মীরা।

এর উপর ২৫ জনের সিবিআই দলের নিরাপত্তার জন্য‌ও বেশ কিছু কেন্দ্রীয় বাহিনীর আনাগোনা শুরু হয়েছে। তাদের হাতে অত্যাধুনিক অস্ত্র ও জলপাই ছাপ পোশাক দেখে আরও সিঁটিয়ে গিয়েছে মানুষ।

এদিকে আর যাতে অশান্তি না হয় তাই বিকেল চারটের সাড়ে চারটের পরই গ্রামের সমস্ত দোকানপাট বন্ধ করে দিচ্ছে পুলিশ। অন্ধকার নামলেই খাঁ খাঁ করছে গোটা এলাকা।

গ্রামের রাস্তায় প্রায় কারোর দেখা পাওয়া যায় না। বগটুই লাগোয়া দু-তিনটি গ্রামেও প্রায় একই অবস্থা। সেখানকার মানুষ‌ও তীব্র আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।

বগটুইয়ে ভাদু শেখের অট্টালিকা বাড়ি বড়ই বেমানান। চারিদিকে হতদরিদ্র গ্রামবাসীদের বসবাস, তার‌ই মাঝে ভাদুর বাড়ি যেন রাজমহল। ভাদুও তাঁদের মতোই ছিল। কিন্তু হঠাৎই তার আর্থিক প্রতিপত্তি বাড়তে শুরু করে।

গ্রামবাসীদের প্রায় সবার দাবি, সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই দু’হাতে কামাতে শুরু করেছিল সদ্য প্রয়াত ভাদু। মূলত বালি খাদান, পাথর খাদান ও কয়লা খাদানের একটা বড় চক্র নিয়ন্ত্রণ করত ভাদু-আনারুলরা, এমনই অভিযোগ উঠে আসছে গ্রামের আনাচ-কানাচ থেকে।

এই চোরাচালানের হিস্যা নিয়েই যত গণ্ডগোল। তার জেরেই এই ভয়াবহ ঘটনা ঘটে বলে বগটুইয়ের মানুষের দাবি। ভাদুর স্ত্রী ও বাবাও এই কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন।

কিন্তু পুলিশ এখন কড়াকড়ি শুরু করেছে। বিশেষ করে সিবিআই গণহত্যার তদন্ত করতে গিয়ে বীরভূমের বেআইনি বখলি-পাথর খাদানের বিষয়টি যেভাবে খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে তাতে শাসক দলের নেতাদের পাশাপাশি পুলিশ কর্তারাও সাবধান হয়ে গিয়েছেন।

এই সময় বেআইনি কারবার যে রমরম করে চালানো যাবে না সেটা পরিষ্কার। এদিকে বালি খাদান-পাথর খাদানেই কাজ করে মূলত পেট চলত বগটুইয়ের মানুষের। কিন্তু সেসব এখন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রোজগার পাতিও একরকম বন্ধ। তার উপর বগটুইয়ে বাড়ির শুনে বাইরে কোথাও সহজে কাজ দিতে চাইছে না, এমনই দাবি অসহায় গ্রামবাসীদের।

এই অবস্থায় প্রাণে বেঁচে গিয়েও ভাতে মরার জোগাড় বগটুইবাসীর। সেইসঙ্গে যাদের বিবাহযোগ্য মেয়ে আছে তাদের চিন্তা যেন আরও বেশি। গ্রামের নাম শুনে আর কেউ মেয়েদের বিয়ে করতে চাইবে না বলে আশঙ্কায় ভুগছেন মা-বাবারা।

সেদিনের রাতের ওই ভয়াবহ ঘটনায় মিহিলালদের পরিবারের এক মেয়ে ও তার সদ্য বিবাহিত স্বামীও মারা গিয়েছেন বলে খবর! এই বিষয়টি জানাজানি হতেই চিন্তা আরও বেড়েছে।

বেআইনি রোজগারের স্বর্গরাজ্য বীরভূমের সমস্যাটা আসলে অনেক গভীরে। তাই সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর এই বিষয়ে ভাবনা চিন্তার প্রয়োজন আছে। তবে বগটুইকে বাঁচাতে হলে সবার আগে এখানকার মানুষগুলোকে বাঁচাতে হবে। সেই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন। না হলে গোটা গ্রাম মৃত্যুপুরীতে পরিণত হতে পারে।

সম্পর্কিত পোস্ট