ব্রিগেডের মঞ্চে অনুপস্থিত থাকবেন বুদ্ধবাবু, লিখিত বার্তাই প্রেরণা যোগাবে কর্মী সমর্থকদের

নয়ন রায়

কমরেড বলবো নাকি বুদ্ধবাবু বলবো! এটা বেশ কঠিন। আচ্ছা কমরেডই বলি। আপনি ব্রিগেডের জনসভায় পৌঁছতে পারছেন না। আপনি লিখেছেন আপনি গৃহবন্দী। শ্বাসকষ্টের সমস্যা দীর্ঘদিনের সঙ্গী আপনার। ডাক্তারবাবুর পরমর্শে আপনাকে শেষপর্যন্ত অদম্য ইচ্ছাশক্তির কাছে আটকে যেতে হল।

এমন একটা সময় আপনি গৃহবন্দি সেই সময় আপনাকে বামেরা ছাড়াও জোটের প্রয়োজনে ছিল। আসলে আপনি ব্রিগেডে থাকা মানে বামজনতার উচ্ছাস উড়ে যেত ফানুসের মত। ব্রিগেডের ময়দান জুড়ে শুধু মাথা আর মাথা। তার মধ্যে উল্লাসটা হতো কমরেড বুদ্ধবাবু আছেন আমাদের সঙ্গে।

এবার হলো না কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। যেটা হলো বিষণ্ণ মন আর উদাস চিও খুঁজবে আপনি ব্রিগেডে নেই। আছেন পাম অ্যাভিনিউয়ে বাড়িতে ঘরবন্দী। শরীর সঙ্গ দিচ্ছে না আপনার। আসলে কমরেড কি বলুন তো, আপনি মানে সেই সাদা চুল, কুচি দেওয়া ধুতি। আর বার বার মাথার ওপর হাত। তাতেই মাত কমরেড।

আপনি থাকলে টুম্পা গান দরকার হত না কমরেড। আপনি যেখান থেকে শুরু করতেন বাম লাইন সেখানে দানা বাঁধত। কমরেড আপনি মানে নস্টালজিক মুহূর্ত। এ নতুন করে বলার দরকার নেই। তবে কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আগামীকাল ব্রিগেডে ধুলো উড়বে ভিড় হবে।

পাঁপড় ভাজা আর বাদাম ভাজা বিক্রি করতে যারা আসবেন তারা হয়ত এখনো জানেন না আপনি আসছেন না। ওরাও কিন্তু মিছিলের অংশ। কারণ মজদুর আর শ্রমজীবী মানুষ তো কাল থাকবে আপনার জন্য। তারা মাঠে এসে যখন শুনবে আপনি আসছেন না, মানসিকভাবে খানিকটা বিষন্ন তো হবেই। তাই কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আপনি শুধু বাম নেতা নন। আপনি শ্রমজীবী মেহেনতি মানুষ ও প্রান্তিক প্রতিটি স্তরের মানুষের নেতা।

কেউ মানুক আর না মানুক বামপন্থীরা যতই আধুনিক হোক না কেন যতই টুম্পা গানের বাজার গড়ে উঠুক না কেন আপনি এলে আগামীকাল ব্রিগেডের চেহারা পাল্টে যেত। অসুস্থ থাকায় কবি সুকান্তের ভাইপোকে আগামীকাল ঘরবন্দী হওয়া ছাড়া উপায় নেই। আপনি কাল ব্রিগেডে সমাবেশের পর কিছু লিখবেন। আপনার চোখ থাকবে টিভির পর্দায়।

হাজার হাজার মানুষের উল্লাস, ইনক্লাব জিন্দাবাদ স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠবে ব্রিগেডের ময়দান। জোটের পক্ষে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রত্যেকটি দল বার্তা দেবে। আপনি তখন টিভির পর্দায় চোখ রেখে কিছু লেখার চেষ্টা করবেন। এর আগে বামেরা যত সমাবেশ করেছে কখনো জ্যোতি বসু বা হয়তো কখনো আপনি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য উপস্থিত থেকেছেন।

আপনার সঙ্গে যদি জ্যোতি বসুর তুলনা করা উচিত নয়। যেটা উচিত সেটা হল আধুনিক বামপন্থার পথ ধরে যারা আসবে সবাই আপনাকে মিস করবে। আপনার কর্মী থেকে সমর্থক, নেতা থেকে জোটের সঙ্গীরা আপনার অভাব অনুভব করবে। সংবাদমাধ্যমও বাদ যাবেনা। ব্যাক্তিগত স্তরে সংবাদমাধ্যমের প্রতিটি সাংবাদিকের রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকে।

তাই যারা বামমনস্ক তারা সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে অবশ্যই মিস করবেন আপনার বক্তৃতা। এটাতো ঘটনা, আপনি যখন মঞ্চে থাকেন, গোটা মঞ্চ তখন জমে ওঠে। এমনিতেই বসন্তকাল। দুপুরের রোদ উঠবে। তাই আপনি ব্রিগেডের মঞ্চে না থাকায় বামেরা কিছুটা হলেও নিস্তেজ হবে। নেতৃত্বরা মঞ্চ থেকে আপনার লিখিত বার্তা শোনাবে। আপনার বার্তা শুনে তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার চেষ্টা করবে।

২০২১ এর ভোটে বামেরা হারবে না জিতবে এই নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলবেই। কিন্তু তা স্বত্তেও ব্যক্তি কখনো কখনো রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এটা স্বীকার করুন বা না করুন জ্যোতি বসুর পর নেতা হিসেবে আপনি অবশ্যই কমিউনিস্টদের মার্গ দর্শন। এটা তারা জানেন। তারা মানেন।

আপনাদের দলে পার্টি লাইন শেষ কথা। তা সত্বেও কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সমাবেশে থাকবে না তবু বসন্তের দমকা হাওয়া কাল হবে। আপনার বার্তা লাখো মানুষকে ব্রিগেড সমাবেশে পৌঁছে দেবেন নেতৃত্বরা। যা রাজনৈতিকভাবে বাংলায় তাপ উত্তাপ বাড়বে।

তাই কমরেড আপনি গৃহবন্দী হলেও বাংলার মানুষের কাছে মনবন্দি হননি। তারজন্যই আপনি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ভাল থাকুন। সুস্থ থাকুন। লড়াইটা টিভির পর্দায় দেখুন। দেখুন আপনার বামপন্থী আদর্শে অনু্প্রানিত কর্মী সমর্থকরা কিভাবে পথে-ঘাটে লড়াই করছেন। তখন না হয় অন্য আলোচনা হবে। আর যদি পরাজিত হয়। তখন সমালোচনার ঝড় বইবে। এটা অবশ্যই রাজনৈতিক অঙ্গ। আজকে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা না করাই ভালো।

কালকে আপনার অনুপস্থিতি গোটা ব্রিগেডকে ভারাক্রান্ত করবে এটাই বাস্তব সত্য। এটা মেনে নিয়েই জোটের সঙ্গীরা এবং আপনার দলের কর্মী সমর্থক সবাই আপনার লিখিত বার্তা শুনে গ্রামেগঞ্জে ফিরে যাবে। আজ এখানেই শেষ করলাম। কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আপনি ভালো থাকুন।

সম্পর্কিত পোস্ট