পরিবর্তনের ভরকেন্দ্রে সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রাম, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর লেখনীর নিশানায় তৃণমূল – বিজেপি
সহেলী চক্রবর্তী
ঠিক যেভাবে আজ থেকে ১০ বছর আগে পরিবর্তনের ডাকে উদ্বেল হয়ে উঠেছিল বাংলা। এবারের নির্বাচনেও খানিকটা সেই ঝড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কর্মসংস্থানের দাবিতে , শিল্পের দাবিতে বারবার সোচ্চার হয়েছেন রাজ্যের আমজনতা।
একুশের নির্বাচনেও বড়ই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রাম। বলা ভালো পরিবর্তনের পরিবর্তনের ডাকে ফের নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুরে ভর করতে চাইছে বিজেপি। তখনই আরো একবার নীরবতা ভেঙে কলমের আঁচড়ে গর্জে উঠলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। মনে করিয়ে দিলেন তাঁর বলা সেই আপ্তবাক্য, “কৃষি আমাদের ভিত্তি শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ” ।
সিঙ্গুরের জমি থেকে টাটা দিয়ে চলে যাওয়া এ রাজ্যের যুবসমাজের জন্য কতটা ক্ষতিকর হবে সেদিন ভবিষ্যদ্বাণী করে দিয়েছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। কেটে গিয়েছে ১০ বছর। তার পরেও সিঙ্গুরে হাল ফেরাতে পারেনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রুক্ষ মাটি এবং বড় বড় ঘাসে ওই জমিতে চাষের সম্ভাবনা যোজন যোজন দূরে। দুটো নির্বাচন কেটে গেলেও এখনো পর্যন্ত বর্তমান শাসকদলের সিঙ্গুর নিয়ে কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
বরং যে মাস্টারমশাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিঙ্গুর আন্দোলনের মুখ ছিলেন তিনি এখন শিল্পের পক্ষে হয়ে যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। এবারে বিজেপি প্রার্থীও তিনি। তৃণমূল প্রার্থী বেচারাম মান্না। এদের মাঝেই লড়াই করবেন সংযুক্ত মোর্চার সমর্থিত প্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্য।
রাজনৈতিক মহলের মতে, সিঙ্গুর নিয়ে যে স্বপ্ন তৎকালীন বাম সরকার দেখেছিল ১০ বছর পর সেই স্বপ্ন ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠল বুদ্ধবাবুর লেখনীতে।তাই লড়াইটা সৃজনের পক্ষে বেশ সহজ হবে বলেই মনে করছেন তারা।
তৎকালীন পুলিশ মন্ত্রী এদিনের লিখিত বিবৃতিতে সেসময় বিরোধীদলের কুটিল চিত্রনাট্য এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন।
তিনি লিখেছেন “সেসময়ের কুটিল চিত্রনাট্যে চক্রান্তকারীরা আজ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়ি করছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ হারিয়েছে বাংলার যুব সমাজ। সরকারি ক্ষেত্রে নিয়োগ নেই। বাংলার মেধা ও কর্ম দক্ষতা আমাদের সম্পদ। তা আমাদের ছেড়ে অন্য রাজ্যে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে।”
বুদ্ধবাবুর কথাগুলি যেন বর্তমানে ভারতীয় জনতা পার্টির লাইনে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে যখন নির্বাচনের কেন্দ্রবিন্দুতে নন্দীগ্রাম আবারও উঠে এসেছে তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অধিকারী পরিবার একে অপরকে নন্দীগ্রামের আন্দোলন নিয়ে পাল্টা আক্রমণ করতে পিছপা হচ্ছেন না।
সম্প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরাসরি বলেছেন ২০০৭ সালের ১৪ ই মার্চ বাপ-ব্যাটার অনুমতি নিয়েই নন্দীগ্রামে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ছিল। এখানেই থেমে থাকেনি তৃণমূল নেত্রী। হাওয়াই চটি পরা পুলিশ ঢোকানোর দায় এদিন চাপিয়ে দিয়েছেন অধিকারী পরিবারের ঘাড়ে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই তথ্য সামনে আনতে নতুন করে ময়দানে নেমে পড়েছে বামেরা। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এদিনের চিঠিতে দুর্নীতি, তোলাবাজি সিন্ডিকেটরাজ, মহিলাদের নিরাপত্তা, সমাজবিরোধীদের দৌরাত্ম্য নিয়ে সরাসরি আক্রমণ করেছেন তৃণমূলকে। এদিনের চিঠিতে পরিবর্তনের ডাক দিয়েছেন বুদ্ধবাবুও।
তিনি আশাবাদী যে সব নতুন প্রজন্মের হাজার হাজার যুবক-যুবতী ছোট মাঝারি বৃহৎ শিল্প কর্মসংস্থানের দাবী নিয়ে পথে নেমেছে তারাই পারবে বিপদকে রুখে বর্তমান পরিস্থিতির অবসান ঘটিয়ে নতুন সরকার তৈরি করে বাংলার গৌরবকে ফিরিয়ে আনতে।
উল্লেখ্য বামফ্রন্ট কংগ্রেস ও আইএসএফ এর সংযুক্ত মোর্চার ওপর ভরসা রেখেছেন বুদ্ধবাবু সে কথা তার বিবৃতির মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন তিনি। এবারের ঐতিহাসিক ব্রিগেড সমাবেশে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে শারীরিক অসুস্থতার কারণে চিকিৎসকরা তাঁকে অনুমতি দেননি। পরিবর্তে লিখিত বার্তা দিয়েছিলেন বুদ্ধবাবু।
এরাজ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে সপ্তদশ বিধানসভা নির্বাচন। এবারের নির্বাচন হবে ৮ দফায়। প্রথম দফার নির্বাচন শেষ। বাকি আরো ৭ দফা নির্বাচন। পয়লা এপ্রিল দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে এপিসেন্টার নন্দীগ্রামে লড়াই করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারী। তারই মাঝে সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত প্রার্থী মীনাক্ষী মুখার্জির লড়াই।
তার আগে দোল পূর্ণিমার পরপরই বুদ্ধবাবুর লিখিত বিবৃতি নতুন করে যুবসমাজকে অক্সিজেন যোগাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
একইসঙ্গে নন্দীগ্রামে এখনো যারা লাল ঝান্ডাকে আঁকড়ে ধরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন হারানো জমি পুনরুদ্ধার করতে বুদ্ধবাবুর বার্তা তাদের সেই অঙ্গীকারের পালে নতুন ঝড় তুলবে। মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।