নন্দীগ্রামে প্রার্থী মমতাঃ জামানত বাজেয়াপ্ত করার হুঁশিয়ারী কনিষ্কর, “হারার আগেই হেরে গেছেন”মন্তব্য বৈশাখীর
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ ‘হাম কিসিসে কম নেহি’ ডায়লগটি কমবেশি সবারই শোনা। বিধানসভা নির্বাচনের আগে কার্যত সেটাই প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লেগেছে শাসক-বিরোধী সমস্ত রাজনৈতিক দল। ১৮ জানুয়ারি রাজ্যজুড়ে যেন এক পালাবদলের ইতিহাসের সূচনা হল।
একদিকে শুভেন্দুর গড়ে দাঁড়িয়ে নাম না করে অধিকারী পরিবারকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লেন মমতা। ঠিক তখনই মমতার খাসতালুকে দাঁড়িয়ে নাম করেই তৃণমূল সুপ্রিমোকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী।
অন্যদিকে আজই অভিষেকের গড় ডায়মন্ড হারবারে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শোভন চট্টোপাধ্যায়ের মিছিল। রাজ্যজুড়ে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাজো সাজো রব। এখানে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নন্দীগ্রাম থেকে বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা করে।
পাঁচ বছর পর আজ নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সভা করলেন। নাম না করে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত নিশানা করেছেন অধিকারী পরিবারকে। তবে এও বুঝিয়ে দিয়েছেন সুদে-আসলে লড়াইয়ের ময়দানে তিনিও বুঝে নেবেন।
তাই এবারের নির্বাচনে ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে তো বটেই তিনি লড়বেন নন্দীগ্রাম থেকেও। শাসক শিবির যেমন মনে করছে মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণা বিজেপিকে ব্যাকফুটে ফেলে দিয়েছে। তাদের মতে এই চ্যালেঞ্জ বিজেপিকে তো বটেই। সেই সঙ্গে সরাসরি নিশানায় শুভেন্দুকেও রাখছেন তারা।
তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় সরব হয়েছেন অনেকেই। কটাক্ষ করে তারা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী ভবানীপুর থেকে গো হারান হারবেন, তাই জায়গা বদল করে নিচ্ছেন নন্দীগ্রামে।
দ্য কোয়ারি কে দেওয়া একান্ত সাক্ষৎকারে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি সুপ্রকাশ গিরি বলছেন, বিরোধীদের কথায় আমরা কান দিইনা। ২৯৪ টি কেন্দ্রের প্রার্থী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই। কাজেই তিনি যেখান থেকেই দাঁড়ান সেখান থেকেই তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা ঝাঁপিয়ে পড়ে লড়াই করবেন এবং তাঁকে জেতাবেন। আর শুভেন্দু অধিকারী নন্দীগ্রামে তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে ফ্যাক্টর নয়।
তোমরা প্রধানমন্ত্রী হও, রাষ্ট্রপতি হও, কিন্তু দয়া করে বাংলাকে বিক্রি করতে যেও না- বার্তা মমতার
দ্য কোয়ারি কে পাল্টা বিজেপি নেতা তথা শুভেন্দু অনুগামী কনিষ্ক পন্ডা বলছেন, ভবানীপুর থেকে পালিয়ে এসে নন্দীগ্রামে দাঁড়িয়ে রাজনীতির অভিমুখ ঘোরানোর চেষ্টা করছেন তিনি। ১৩ বছর পর নন্দীগ্রামের কথা তার মনে পড়েছে। যদিও তিনি যে সময় সভা করতে এসেছেন সেখানে লোক হয়নি ।আমাদের এখানে এখন সবাই পিঠেপুলি উৎসবে ব্যস্ত। দুপুর বেলা ঘুমানোর সময়। কেউ বাড়ি থেকে বের হননি। এসএসসি, টেট কোন নিয়োগ নেই। ১৩ বছরে নন্দীগ্রামের কোনো উন্নয়ন হয়নি। মমতার ছবি মেদিনীপুরের কোনো কাজে লাগে না। যেখান থেকে দাঁড়াবেন সেখান থেকে ওনাকে হারাবো। ওনার জামানত বাজেয়াপ্ত করে রাজ্য থেকে উৎখাত করে দেবো। এটা আমাদের চ্যালেঞ্জ।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের নেতা অখিল গিরি দ্য কোয়ারি কে জানিয়েছেন, বিরোধী রা পাগলের মতো কথা বলছেন। শুভেন্দু অধিকারী যদি বাপের ব্যাটা হন, তাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নন্দীগ্রামে দাঁড়িয়ে দেখান। কনিষ্ক পন্ডা কী বলল তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না।
পাল্টা বিজেপি নেত্রী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় দ্য কোয়ারিকে জানান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হেরে যাওয়ার আগেই হার স্বীকার করে নিয়েছেন। যখন শোভন চট্টোপাধ্যায় কলকাতার বুকে বিজেপির হয়ে ময়দানে নামছেন, তখনই ভয় পেতে শুরু করেছেন তিনি। আর কোন জেলার কোন কোন জায়গা থেকে উনি দাঁড়াবেন সেটাও ওনাকেই ঠিক করতে হবে।
বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এই প্রথমবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নির্বাচনের আগে এত নার্ভাস দেখাচ্ছে। ওনার দলের লোকেরা এতদিন ধরে যা যা দুষ্কর্ম করেছেন আর উনি তাদের প্রশ্রয় দিয়েছেন। এবার ওনাকে ফল ভুগতে হবে। ওনার অপশাসনের সময় হাজির। বাংলার মানুষ বাকি টা বলতে পারবেন আমি আর কিছু বলবো না।
পাল্টা বাম নেতা সুশান্ত ঘোষের কথায়, উনি কলকাতা থেকে পালাচ্ছেন। পরে কোথায় পালাবেন সেটা উনি ভালো করে জানেন। তবে উনি স্বাধীন মানুষ। ওনার যেখান থেকে খুশি উনি দাঁড়ান। এর বেশি আমার কিছু বলার নেই।
হিম্মত থাকলে নন্দীগ্রাম থেকে ভোটে দাঁড়ান শুভেন্দু: সৌগত
দক্ষিণ কলকাতা জনসভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। কালীঘাটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে ঢিলছোঁড়া দূরত্বে রাসবিহারী এভিনিউ-এর মঞ্চে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নন্দীগ্রামের দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন তিনি।
শুভেন্দু অধিকারী দিলীপ ঘোষকে নিয়ে ওপেন চ্যালেঞ্জ করে বলেন, শুনে রাখুন মাননীয়া আপনাকে যদি নন্দীগ্রামে হাফ লাখ ভোটে হারাতে না পারে তাহলে রাজনীতি ছেড়ে দেবো।
রাজনৈতিক মহলের মতে ২০২১ এর নির্বাচন টানটান উত্তেজনাময়। এখন থেকেই জমে উঠেছে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। ক্লাইম্যাক্সে আর কী কী অপেক্ষা করছে আমজনতার জন্য? সেটা একটা একটা করে দিন যত পার হবে তত মেঘ সরিয়ে আকাশ পরিষ্কার হবে।