ধর্ম নামক বাঘের পিঠে চড়ে বসেছেন মমতা! তাই গঙ্গাসাগর মেলা বন্ধ করা তাঁর পক্ষে অসম্ভব
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ প্রকৃত উন্নয়ন না হলেও রাজ্য সরকার ফলহীন কিছু পদক্ষেপ নেয়। আর এখানেই ঘটে গোড়ায় গণ্ডগোল। রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়ের একাংশ এইসব ঘটনায় তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু তোষণের রাজনীতি করার অভিযোগ তুলতে শুরু করে। বিজেপি যেন এরকমই কোনও এক সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। তারা মানুষের ভাবাবেগ উস্কে দিয়ে সহজেই রাজ্যের প্রধান বিরোধী পরিসর দখল করে নেয়।
বলা যেতে পারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্যই বাংলায় বিজেপির উত্থানের এই মাহেন্দ্রক্ষণ তৈরি হয়েছিল। এর ফলে বঙ্গ রাজনীতিতে বাকি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি পিছনে চলে গিয়ে এক ধর্মীয় আবর্ত মুখ্য হয়ে ওঠে। বিজেপি তাদের রাজনৈতিক লাইন মেনে উগ্র হিন্দুত্বের পক্ষে সুর চড়াতে শুরু করে।
অন্যদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল পাল্টা বিজেপির ভয় দেখিয়ে একচেটিয়াভাবে সংখ্যালঘুদের নিজেদের দিকে টেনে নেয়। পাশাপাশি বাংলার মধ্যবিত্ত শ্রেণী বিজেপির উগ্র হিন্দুত্বের রাজনীতিতে বিরক্ত হয়ে এক প্রকার বাধ্য হয় তৃণমূলকে সমর্থন করতে।
এই পরিস্থিতিতে ধর্ম নিয়ে রাজনীতির পরবর্তী ধাপে পা রাখেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সর্বধর্ম তুষ্টিকরণের সিদ্ধান্ত নেন। সংখ্যালঘু ধর্মগুলির পাশাপাশি সংখ্যাগুরু হিন্দুদেরও নানানভাবে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেন যে তিনি তাদেরও একজন। সেই কারণেই বেশ কয়েকবার মুখ্যমন্ত্রীকে প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে বলতে শোনা গিয়েছে, আমি ব্রাহ্মণ বাড়ির মেয়ে, আমিও হিন্দু!
সত্যি বলতে বাংলার কোনও মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্য মঞ্চে দাঁড়িয়ে নিজের পরিচয় হিসেবে ধর্মকে প্রাধান্য দেবেন এটা এক দশক আগেও ভাবা দুষ্কর ছিল!
এদিকে বিপুল সংখ্যায় না হলেও বাংলায় খ্রিষ্টানরা এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলার রাজনীতি ও অর্থনীতিতে তাদের যথেষ্ট প্রভাব আছে। এটা পরিষ্কার, তুষ্টিকরণের পথে হাঁটার জন্যই চিকিৎসকদের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ২৫ ডিসেম্বর ও ১ জানুয়ারির উৎসবে কোনও নিষেধাজ্ঞা চাপায়নি রাজ্য সরকার।
আচ্ছা আপনি কী মনে করেন ২৫ ডিসেম্বর যদি পার্কস্ট্রিট সহ রাস্তার হুল্লোড়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করতেন মুখ্যমন্ত্রী তবে খ্রিস্টানরা তাঁর উপর ক্ষেপে যেত? এর উত্তর- না। খ্রিস্টানরা সাধারণত ২৫ ডিসেম্বর চার্চে আরাধনার মধ্য দিয়ে দিনটা কাটান।
রাস্তাঘাটের এই যে ব্যাপক ভিড় দেখা যায় এগুলি সবই অন্যান্য ধর্মের বাঙালিদের। আসলে ২৫ ডিসেম্বরের উৎসবে মেতে ওঠার ছাড়পত্র দিয়ে গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসানো মানুষকে পাশে থাকার বার্তা দিতে চেয়েছিলেন মমতা। কারণ তাঁর দলের, সমর্থক কুলের বড় অংশই যে গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসানো মানুষজন!
২৫ শে ডিসেম্বরের ভ্রান্তির পরিণাম যে কত ভয়াবহ তা ইতিমধ্যেই টের পাওয়া গিয়েছে। মাত্র সাত-আটটা দিনের ব্যবধানে রাজ্যে দৈনিক সংক্রমন ছয় হাজারের গণ্ডি ছাড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়েই রবিবার দুপুরে রাজ্য সরকার নির্দেশিকা জারি করে একগুচ্ছ বিধিনিষেধ ফিরিয়ে আনে।
প্রত্যাশিত মতো যাবতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে। এমনকি লোকাল ট্রেন চলাচলে বেশ কিছু বিধিনিষেধ জারি করেছে রাজ্য। আবার ফিরে এসেছে নাইট কারফিউ। কিন্তু গঙ্গাসাগর মেলা হবে!
অথচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এই মুহূর্তে যে কোনও ধরনের মেলা, বড় রাজনৈতিক জমায়েত এগুলি করতে নিষেধ করছেন। এই পরিস্থিতিতে সবার আগে গঙ্গাসাগর মেলা বন্ধ হওয়াটা স্বাভাবিক ঘটনা ছিল। কিন্তু তা হল না।
কেন হল না?
আসলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সতর্কতার না মেনে ইতিমধ্যেই খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের পবিত্রতম দিন ২৫ ডিসেম্বরের উৎসবে ছাড়পত্র দিয়ে বসেছে সরকার। এই পরিস্থিতিতে গঙ্গাসাগর মেলা বাতিল করলে হিন্দু ভাবাবেগে আঘাত লাগার বিষয়টি তুলে ধরে নিশ্চয়ই ঝাঁপিয়ে পড়বে বিজেপি। আর এইরকম ইস্যু এখন বাংলার মানুষের মনে যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। কারণ সেই ধারাটি সযত্নে নিজের হাতে তৈরি করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়!
অতএব যতই বাড়ুক সংক্রমণ, চালু থাকুক গঙ্গাসাগর মেলা। কারণ সব বুঝে নিজের রাজনৈতিক ক্ষতি স্বীকার করে নেবেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আসলে এই রাজনৈতিক ক্ষতি যে সে নয়, এ একেবারে গোড়া থেকে তাঁর ভিত নড়িয়ে দিতে পারে!
ধর্ম নামে বাঘের পিঠে অনেক আগেই চড়ে বসেছেন মমতা। সেই সময়ে বুঝেই হোক আর না বুঝে, বাংলার মানুষ বাধা দেননি। তার পরিণাম আজকের এই তুঘলকি কাণ্ড!