বেলাগাম গো-পাচার, শাসকের প্রশ্নে তোলপাড় সংসদ

নয়ন রায়

গরু পাচার কাণ্ড নিয়ে নির্বাচনের আগে থেকেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। প্রকাশ্য দিবালোকে বা রাতের অন্ধকারে প্রশাসনের নজরে ফাঁকি দিয়ে কারবার চলছেই। যাভনিয়ে একাধিকবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।

চলতি সপ্তাহের বাদল অধিবেশনে বালুরঘাটের বিজেপি সাংসদ ডঃ সুকান্ত মজুমদার এবং জলপাইগুড়ির সাংসদ ডঃ জয়ন্ত রায় ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে গরু পাচারের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন তুলে ধরেন। শাসকের প্রশ্নেই ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সংসদ।

প্রথমত , ভারত -বাংলাদেশ সীমান্তে গরু চোরাচালানের যেসব ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে, সেগুলোর সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য ও গত দুই বছরে গরু পাচার কাণ্ডের সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয়েছে যাদের তা পেশ করা হোক।

দ্বিতীয়ত, ভারত -বাংলাদেশ সীমান্তে যে সমস্ত গরুর হাটে অবৈধ ভাবে গোপাচারের বাণিজ্য চলে, তা রোধে গৃহীত প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ কি কি নেওয়া হয়েছে তা পেশ করা হোক।

তৃতীয়ত, তাঁরা জানতে চান, ভারত -বাংলাদেশ সীমান্তে বেড়া দেওয়ার যে কাজ চলছিল তা প্রতিটি রাজ্য অনুযায়ী সম্পন্ন হয়েছে কি ?

চতুর্থত, ভারত -বাংলাদেশ সীমান্তের বেড়া দেওয়ার কাজ নদী তীরবর্তী এলাকায় এখনো শেষ হয়নি। নির্ধারিত সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা শেষ হবে কি ?

পঞ্চমত ,গত দুই বছরে অবৈধ ভাবে যারা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে এসেছে সেই সংখ্যা যারা ভারত কত ?

ষষ্ঠত ,ভারত -বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া মানুষ ও বিএসএফ কর্মীদের পশুর অবৈধ চোরা চালান কাণ্ডে জড়িত থাকার খবর বা তথ্য পাওয়া গেছে কি?

সপ্তমত, যদি তাই হয় তবে তার বিবরণ এবং সরকারের তরফে গৃহীত পদক্ষেপ কি কি নেওয়া হয়েছে?

অষ্টমত, এই বিষয়ে অন্যান্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে?

দুই সাংসদের এই প্রশ্নে ফের কেন্দ্রীয় সরকারকে চেপে ধরেন বিরোধীরা। গরু পাচারকান্ডে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে এনামুল হককে। এই মুহূর্তে সিবিআই হেফাজতে রয়েছেন তিনি।

জানা গেছে , এরাজ্যে মূলত গরুগুলি আসে হরিয়ানা এবং উত্তর প্রদেশ থেকে। সেগুলো সরাসরি গয়া-বেনারস- আসানসোল- ধানবাদ – অন্ডাল হয়ে ইলামবাজার পেরিয়ে সাঁইথিয়া হয়ে মুর্শিদাবাদে গিয়ে পৌঁছচ্ছে। মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর, জলঙ্গি, রঘুনাথগঞ্জ লালগোলা ও ধুলিয়ানে সক্রিয় এই গো পাচারকারিরা।

এছাড়াও রাঁচির বাজার থেকে কম দামে গরু কিনে নিয়ে আসা হয়। জামশেদপুর হয়ে ঝাড়গ্রাম ও দাঁতনের উপর দিয়ে সেই গরু গুলি নিয়ে ধুলাগড় পেরিয়ে দক্ষিণেশ্বর ও বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে সোজা পৌঁছে যাচ্ছে বসিরহাট সহ উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন ঘাটে।

বসিরহাট-১, বসিরহাট-২, দেগঙ্গা, স্বরুপনগর,হারোয়ার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে সেগুলি পাচার হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশে। সীমান্ত এলাকায় পদ্মার বুকে কলার ভেলায় করে গরু গুলিকে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। সঙ্গে থাকে বিভিন্ন রকম কোড। এদৃশ্য একাধিকবার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দেখেছে গোটা দেশের মানুষ।

গোটা প্রক্রিয়া নিয়ে একাধিকবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। জোর দেওয়া হয়েছে সীমান্ত নিরাপত্তায়। তাতেও লাগাম টানা যায়নি গো পাচার কাণ্ডে। নতুন করে বিজেপি সাংসদের প্রশ্ন তাই আলোড়ন শুরু করেছে। এই কাণ্ডে তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই। কোনো রাজনৈতিক যোগসুত্র রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এনামুলের সঙ্গে কোন কোন হেভিওয়েটের পরিচয় ছিল তার তালিকা তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।

বড় রাজনৈতিক পরিবর্তন, তৃণমূলে যোগ দিলেন বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি

বাংলাদেশের রাজশাহী, ঢাকা, কাটল এলাকায় মূলত গরু গুলি পাচার করা হয়। পশ্চিমবঙ্গের গরু পাচারকারকাণ্ডে মুর্শিদাবাদ , নদীয়া, উত্তর ২৪ পরগনা স্বর্গরাজ্য। এই সমস্ত এলাকার বিস্তীর্ণ সীমান্ত দিয়ে কয়েক কোটি টাকার ব্যবসা চলে। এনামুলকে গ্রেফতার করার পর বিএসএফের এক আধিকারিককে গ্রেফতার করা হয়। উঠে আসে এক চাটার্ড একাউন্টেন্ট এর নাম।

এ রাজ্যে নির্বাচনের আগে বিরোধীরা তৎপর হয়ে ওঠে গরু পাচার কাণ্ড নিয়ে। নির্বাচনের আগে যে সিবিআই তৎপরতা দেখা গিয়েছিল ভোট মিটতে তাতে ভাটা পড়েছে। একদিকে যখন লাগাতার পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সহ পেগাসাস ইস্যুতে কেন্দ্রকে চাপে ফেলতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিরোধীরা ঠিক তখনই দুই বিজেপি সংসদের বেকায়দায় পড়েছে শাসক শিবির।

প্রশ্ন উঠবেই, কেন বারবার অভিযোগ করা সত্বেও গরু পাচার কান্ড নিয়ে তদন্ত গতি পাচ্ছে না? কেন বারবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ব্যর্থ হচ্ছেন সীমান্তে সুরক্ষা দিতে ? এখন দেখার দুই সাংসদের প্রশ্নের জবাবে কি উত্তর দেয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।

সম্পর্কিত পোস্ট