ফ্যাসিস্ট আন্দোলনের বিরুদ্ধে একমাত্র লড়তে পারেন মমতাইঃ আইনুল হক
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ একসময়ের বাম নেতা । বাম থেকেই রাম। সব কে সাথ সব কা বিকাশ মোদী জি যা বলেছিলেন, আসলে হয় নি। তাছাড়া মমতা একমাত্র ফ্যাসিস্ট বিরোধী মুখ শুধু না। উন্নয়নের স্রোতও।
দীর্ঘ দিন বর্ধমান পুরসভার চেয়ারম্যান পদে ছিলেন।ফলে বর্ধমানের রাজনীতির মাটি টা জানেন। ৪৩ বছর রাজনৈতিক জীবন।বামেরা এখন দিশাহীন।সেই শক্তি ওদের আর নেই।তাই মমতা একমাত্র পারে বিজেপি কে কুপোকাত করতে। মুখোমুখি আইনুল হক।
অনেকেই বলছেন তৃণমূলে এখন ক্ষয়িষ্ণু রাজনীতি শুরু হয়েছে। বিজেপির অবস্থাও একই রকম। আপনি দীর্ঘদিন বামফ্রন্টের সঙ্গে যুক্ত ছিলে নিচ্ছেন এখানে?
উত্তর: আমি দীর্ঘদিন বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম । বামপন্থী ঘরানাতেই আমার বেড়ে ওঠা। ছাত্র রাজনীতি থেকে জেলার সংগঠন মজবুত করতেও আমি কাজ করেছি। দীর্ঘ ২৫ বছর প্রশাসনিক কাজকর্মের সঙ্গে আমি ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ছিলাম। বর্তমানে বাংলার রাজনীতিতে একে অপরের ঘাড়ে দোষ চাপানোর পালা চলছে। এখানে ধর্মীয় মেরুকরণ এর কোন জায়গা ছিল না। বিজেপি সেই কাজটাই করেছে। ২০১৬ সালে বিজেপির ভোটের পার্সেন্টেজ ছিল যা ছিল ২০১৯ এ যদি হিসাব করে দেখা যায় তার থেকে কম দেখা যাবে। কারণ বামেদের যে ভোটটা কমেছিল বিজেপির সেই ভোটটা বেড়েছিল। আবার বিজেপির যখন ভোট কমলো বামেদের তখন ভোট বাড়লো। পাশাপাশি, আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে যে তৃণমূলের ভোট অনেক কমে গেছে কিন্তু সেটা নয় তৃণমূলের ভোট বেড়েছে।
তাহলে কি ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনের সময় বিজেপির সঙ্গে বামেদের কোন যোগাযোগ ছিল বলে আপনি বলছেন?
উত্তর: যোগাযোগ তো ছিলই না হলে ভোটটা গেল কি করে ! তারাতো তৃণমূলকে ভোটটা দিল না। বিকল্প হিসেবে তারা ভোটটা দিল বিজেপিকে। আমার কিছু পুরনো বামপন্থী বন্ধু আছে যারা এখনো বলে, মিটিং মিছিলে বামফ্রন্টের লোক বাড়ছে। যারা মিছিলে হাঁটছে তারাও ভোট দেয় না সিপিএমে। যত পার্টি মেম্বার ছিল তার কত শতাংশ মিছিলে হাটে? আগে সকালে বলতো সিপিএম পরিবার থেকে কখনোই ভোট ভাঙ্গানো যায় না। কিন্তু এর পরিবর্তন ঘটল ২০২৮ তে। বাবা-মা সিপিএম করে, পরিবারের ছেলেমেয়েরা ভোট দিচ্ছে তৃণমূলে।
আপনি ২০১৬ সালে প্রার্থী হলেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তারপর আপনি যোগ দিলেন বিজেপিতে। তাহলে যাদের সঙ্গে এতদিন ধরে লড়াই করলেন, আজ তাদের সঙ্গে এসে কি করে বাম বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করছেন?
উত্তর: ২০১৬ সালের মানুষের মধ্যে এফেক্ট করেছিল সবকা সাথ সবকা বিকাশ। সেইসঙ্গে অ্যাড হয়েছিল বিশ্বাস শব্দটা। তবে ২০১৯ এ এসে দেখা গেল বিষয়টা পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে। রাম মন্দির আজকের দাবি নয়। গোটা দেশজুড়ে ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি শুরু হয়ে গিয়েছে।
আমি আপনার কথা মেনে নিলাম ২০১৯ সালে আপনি ভোট করিয়েছেন । ২০২১ সালে যখন আপনি আবার ভোট করাতে যাবেন তখন আমজনতাকে কি বলবেন?
উত্তর: আমি ভুল করেছিলাম। রাজনীতিতে ভুল সবাই করে। আমি মনে করি সেই ভুলটাকে সংশোধন করা দরকার। তার জন্য আমি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেছি । কারণ আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি মৌলবাদের বিরুদ্ধে কেউ যদি লড়তে পারেন সেটা একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং তিনি লড়াইটা করছেন। এটা নিয়ে কোনো দ্বিধা বা সংশয় নেই। বিহারে এক কাজ করছে তেজস্বী যাদব । যদি আমরা অন্যান্য রাজ্য গুলোর দিকে দেখি লড়াইটা লড়ার কথা ছিল কংগ্রেসের। কিন্তু কংগ্রেস পারছেনা। বার বার ফেল করছে। একই অবস্থা বামপন্থীদের। আর আজকে বাংলা দখল এর জন্য মোদী – শাহ – নাড্ডা বারবার আসছেন। বাংলায় এসে থেকে যাচ্ছেন। খেয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আমি দলটার মধ্যে থেকে দেখেছি দলটা কি ভয়ঙ্কর দল।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফ্যাসিবাদী আন্দোলনের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন এটা একদম ঠিকই , কিন্তু সামনে বিধানসভা নির্বাচন চলে এসেছে।দলের মধ্যে একটা টালমাটাল অবস্থা। বিজেপির পঞ্চপান্ডব বাংলা ঘুরছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াইটা কতটা কঠিন হবে বলে আপনি মনে করছেন?
উত্তর: এটা মিডিয়ার কাজ। মিডিয়া বিষয়টাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। আর বিজেপি নিজেদের সুবিধার্থে পারেনা এমন কোন কাজ নেই। তাই জন্য মিডিয়াকে ব্যবহার করছে । আমরা অনেকগুলো টার্ম শুনেছি ইয়োলো জার্নালিজম পেইড নিউজ এগুলো সবটাই বিজেপির সঙ্গে প্রপারলি মিলে যায়।
বর্ধমানের মাটিতে আপনি থেকে রাজনীতিটা করছেন। আইনুল হক কে ঘিরে বর্ধমান বাসির অনেক আশা চাহিদা । কিভাবে মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষা মেটাবেন?
উত্তর: বর্ধমান বাসীর কাছে নতুন করে আমার পরিচয় দেওয়ার কিছু নেই। কারন মানুষ আমাকে চেনে। আমিও অতীতে যে কাজ করেছি এখন যে কাজ করছি মানুষ আমাকে বিশ্বাস করেন বলেই সব সময় আমার সঙ্গে থেকেছেন। আমি বিশ্বাস করি আগামী দিনে মানুষ আমার সঙ্গে থাকবে। আমার কোন সমস্যা হবে না তাদের আশা আকাঙ্খাগুলো পূরণ করতে।
একুশের বিধানসভা ভোট কিন্তু টাফ ফাইট হবে। যতই আপনি বিজেপিকে গুরুত্ব দিতে চাইছেন না কেন তৃণমূল বনাম বিজেপির লড়াইটা কিন্তু খুব একটা সহজ হবে না
উত্তর: দু-একটা আসন হয়তো হেরফের হতে পারে। কিন্তু ভোটটা কখনোই ভাগ করা যাবে না। সকালে দিলীপ ঘোষ যা বলছেন বিকেলে সূর্যকান্ত মিশ্র ও সুজন চক্রবর্তী সেই এক কথাই বলছেন। এটা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। বামপন্থীরা কি বলছেন সেটা বড় কথা নয় ।আমি মনে করি যারা প্রকৃত বামপন্থী তারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। তাই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়তে হলে এমন শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে যারা সম্মুখ সমরে লড়াইটা করতে পারবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এটা একমাত্র পারবেন তাই তার সঙ্গে থাকা সকলেরই প্রয়োজন। এটাই মূল কথা। বাকিটা ভোটের পর জানতে পারবেন।