নজরে মালদা ও মূর্শিদাবাদ, গোষ্ঠীকোন্দল রুখতে ৭ জনের বিশেষ কমিটি
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ ভোটের ঢাঁকে কাঠি পড়ে গিয়েছে। একদিকে শুভেন্দু অধিকারীর দলবদল। অন্যদিকে আজ আনুষ্ঠানিকভাবে আব্বাস সিদ্দিকীর নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ রাজ্য রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
বিধানসভা নির্বাচনে সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্ক যথেষ্ট বিপাকে ফেলেছে রাজ্যের শাসক শিবিরকে। তারই মাঝে আব্বাস সিদ্দিকীর নতুন রাজনৈতিক দল ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বটে।
এসবের মাঝেই আজ মালদা ও মুর্শিদাবাদ জেলা নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল ভবন থেকে ভার্চুয়ালি এই বৈঠকে যুক্ত করা হয় মালদা এবং মুর্শিদাবাদ জেলাকে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সি , প্রশান্ত কিশোর সহ রাজ্যেের একাধিক শীর্ষ নেতৃত্ব।
উপস্থিত ছিলেন মালদা এবং মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের নেতৃত্বরা। তবে এই দিনের বৈঠকে গড়হাজির থেকে গেলেন মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোশারফ হোসেন। যিনি আবার বকলমে শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ বলেও শোনা গিয়েছে।
শুভেন্দু অধিকারীর দলত্যাগের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই দুই মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম জেলার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। পাশাপাশি মালদা এবং মুর্শিদাবাদ জেলাতে লোকসভা নির্বাচনের সময় পর্যবেক্ষক ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী । তাই এই দুটি জেলার সাংগঠনিক দায়ভারও মুখ্যমন্ত্রী নিজের হাতেই রাখতে চাইছেন অন্তত আজকের বৈঠক থেকে তা স্পষ্ট।
‘সারনা’ ধর্মকে সামনে রেখে ২০২১ সালে জনগণনার দাবিতে বিক্ষোভে শামিল আদিবাসি সেংগেল অভিযান কমিটি
মালদা এবং মুর্শিদাবাদ জেলায় বিস্তীর্ণ অংশে শাসক শিবিরের গোষ্ঠী কোন্দলের ছবি প্রায়শই উঠে আসে সংবাদের শিরোনামে । বারবার এই দুই জেলার নেতৃত্বদের কড়া বার্তা দিয়েও কোন লাভ হয়নি। এই বৈঠকে বসে প্রথম থেকেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে স্পষ্ট ভাষায় নেতৃত্বকে সতর্ক করতে দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রীকে।
গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রুখতে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। এই কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন মইনুল হাসান, খলিলুর রহমান, সুব্রত সাহা, জাকির হোসেনের মতো নেতৃত্বরা। সাতজনের কমিটির মাথায় রাখা হয়েছে ফিরহাদ হাকিম এবং সুব্রত বক্সীকে। যারা এই কমিটির ওপর নজরদারি চালাবেন।
এদিন প্রায় ঘণ্টাখানেক এই দুটি জেলা নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূল ভবনের ভেতর যখন এই বৈঠক চলছে তখন বাইরে একদল তৃণমূল সমর্থক বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। যদিও কি কারণে এই বিক্ষোভ তা এখনও স্পষ্ট ভাবে জানা যায়নি।
অন্যদিকে আজ বৈঠকে মোশারফ হোসেন উপস্থিত না থাকলেও তার বিরুদ্ধে এখনই কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্তে পৌঁছয়নি শাসক শিবির। তৃণমূলের অন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত মোশারফ হোসেনের কার্যপ্রণালীর ওপর নজরদারি চালাবে তৃণমূল। তারপরেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত মালদা এবং মুর্শিদাবাদ জেলা জুড়ে লোকসভা নির্বাচনের পর বদলে গিয়েছে পরিস্থিতি। বেড়েছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। রাস হালকা হয়েছে সংগঠনের। তাই বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই আরো কঠিন হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।
তৃণমূল-বিজেপি-বাম-কংগ্রেস এই চার রাজনৈতিক দলের চতুর্মুখী মারপ্যাঁচের মাঝেই হাজির হয়েছে আব্বাস সিদ্দিকী এবং মিমে যৌথ দল ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট। কাজেই সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্ক এবার বেশ কিছুটা হলেও যে তাদের দিকে যাবে সেকথা বেশ স্পষ্ট।
যতই তৃণমূলের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায় সেই তথ্য উড়িয়ে দিন না কেন, মুর্শিদাবাদে বাংলার মাটিতে নতুন করে তৃণমূলের রাশ টানা যথেষ্ট কষ্টকর হবে বলে মনে করছেন রাজ্যের রাজনৈতিক মহল।