Congress : জাতীয় রাজনীতির দায় বহন করতে গিয়ে রাজ্যে রাজ্যে ফাঁকা হচ্ছে কংগ্রেসের ঘর
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ অধীর চৌধুরী ( Adhir Chowdhury), আবদুল মান্নানদের (Abdul Mannan) কাছে এ যেন শাঁখের করাত অবস্থা। না পারছেন তৃণমূলকে (TMC) পুরোপুরি গ্রহণ করতে, না পারছেন উগরাতে! আর সেই ফাঁকতালে গলে বাংলায় ক্রমশ ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে কংগ্রেসের ঘর।
তবে এই দোদুল্যমানতার দায় অধীর চৌধুরীদের নয়। কংগ্রেসের ( Congress ) সর্বভারতীয় নেতৃত্বে টানা একটি নির্দিষ্ট অবস্থান নিতে না পারায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। সাংগঠনিক স্তরেও দল বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে। শুধু বাংলা নয়, অন্যান্য রাজ্যেও ক্রমশ ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে দল!
বাংলায় (West Bengal) প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখতে হলে বিজেপি (BJP) বিরোধীতার পাশাপাশি তৃণমূল নিয়েও সমান হারে সুর চড়াতে হবে কংগ্রেসকে। তাছাড়া সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ইডি-সিবিআইকে ব্যবহার করে বিরোধীদের চাপে রাখা, বিপদে ফেলার যে অভিযোগ আছে রাজ্যে সিআইডি-পুলিশকে ব্যবহার করে গাঁজা কেস, বোমা রাখার মিথ্যে মামলা দিয়ে কংগ্রেস ( Congress ) কর্মী-সমর্থকদের জেলে ভরে দেওয়ার একই অভিযোগ বারেবারে উঠেছে।
Next Pak PM : ঘোষণা হয়ে গেল পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর নাম!
Congress
সর্বভারতীয় স্তরে একের পর এক কংগ্রেস নেতা বিজেপির আক্রোশের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ। কর্নাটকের ডিকে শিবকুমার (DK Shivkumar), মধ্যপ্রদেশের কমলনাথ (Kamalnath), পাঞ্জাবের সদ্য প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চরঞ্জিৎ সিং চন্নির ভাই(Charanjit singh Channi), তামিল নেতা চিদম্বরম ও তাঁর ছেলে, গত কয়েক বছরে একের পর এক কংগ্রেস নেতার বাড়িতে হানা দিয়েছে আয়কর, ইডি, সিবিআই। দিনের পর দিন তাঁদের জেরার সম্মুখীন হতে হয়েছে, জেলেও যেতে হয়েছে কাউকে কাউকে।
এআইসিসি (AICC) বরাবর অভিযোগ করেছে, কংগ্রেসকে দুর্বল করতে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে ব্যবহার করছে বিজেপি। এই একই অভিযোগ করেছে বাংলার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। তাদেরও অনেক নেতাকে গত কয়েক বছরে বারবার কেন্দ্রীয় এজেন্সির জেরার মুখে পড়তে হয়েছে, জেলেও যেতে হয়েছে কাউকে কাউকে।
এদিকে বারবার অভিযোগ উঠেছে, সরকারের থাকার সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে নিচুতলার একাধিক কংগ্রেস কাউন্সিলর, পঞ্চায়েত সদস্যদেরও প্রায় একই উপায়ে নানান ‘সাজানো’ মামলায় ফাঁসিয়ে নিজেদের দিকে টেনে নিয়েছে তৃণমূল। বলা যেতে পারে কেন্দ্রীয় স্তরে বিজেপির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোই রাজ্যস্তরে তির হয়ে বিঁধেছে তৃণমূলের গায়ে!
এই পরিস্থিতিতে বাংলার কংগ্রেস ( congress ) কর্মীদের পাশে দাঁড়াতে হলে অধীর চৌধুরী, আব্দুল মান্নানদের গলায় তীব্র তৃণমূল বিরোধীতার সুর শোনা যাবে এটাই স্বাভাবিক। না হলে তপন কান্দুদের (Tapan Kandu) পরিবার কেন বিশ্বাস করবে কংগ্রেসকে! কিন্তু সর্বভারতীয় রাজনীতির বাধ্যকথায় খুব দ্রুত অধীর চৌধুরীদের লাগাম টেনে ধরতে পারে এআইসিসি!
সদ্যসমাপ্ত পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনে কংগ্রেসের বেহাল অবস্থা প্রকট। তাই বিজেপি বিরোধিতার প্রশ্নে কংগ্রেসের ‘দাদাগিরি’ আর চলছে না। এই পরিস্থিতিতে শরদ পাওয়ারের মতো প্রবীণ বিরোধী নেতারা কংগ্রেস হাইকমান্ডকে বারবার তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতা করে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন।
অভিষেক মনু সিংভি (Abhishek Manu Singhvi), কপিল সিব্বলদের(Kapil Sibbal) মতো ‘উঁচুতলার’ সুখী কংগ্রেস নেতারাও চান রাজ্য রাজ্যে সংঘাত এড়িয়ে সব বিরোধী দল একজোট হোক। এক্ষেত্রে তারা সরাসরি তৃণমূলের সঙ্গে বিবাদ মিটিয়ে নেওয়ার কথা প্রকাশ্যেই বলছেন।
হয়তো জাতীয় রাজনীতির বাধ্যবাধকতায় সোনিয়া গান্ধী(Sonia Gandhi) শেষ পর্যন্ত তৃণমূলের প্রতি নরম হওয়ারই পরামর্শ দেবেন অধীর , মান্নানদের। কিন্তু উচ্চ নেতৃত্বের এই পরামর্শ নিচুতলার কংগ্রেস কর্মীরা শুনবেন তো? সেক্ষেত্রে বাংলায় কংগ্রেসের যেটুকু অস্তিত্ব আছে তাও মুছে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। যে কয়জন নেতা এখনও দলে আছেন তাঁরাও আগামী দিনে তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন।
এক্ষেত্রে মনোভাব হবে, যাদের দ্বারা আমি আক্রান্ত হচ্ছি তাদের সঙ্গেই যদি আপোষ করে চলতে হয় তবে কংগ্রেসে থাকব কেন! সরাসরি সেই দলে যোগ দেওয়াই ভালো। সম্ভবত এই ভাবনাতে প্রভাবিত হয়েই মানস ভুঁইয়া, শঙ্কর সিং, রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, মৌসম বেনজির নূররা কংগ্রেস ( Congress ) ছেড়ে তৃণমূলে গিয়েছেন।
আসলে শুধু বাংলা নয়, যে রাজ্যেই আঞ্চলিক দল ক্ষমতায় এসেছে সেখানেই কংগ্রেসের ( Congress )এইরকম হাঁড়ির হাল অবস্থা হয়েছে। জাতীয় রাজনীতির বাধ্যবাধকতার জায়গা থেকে বিজেপি বিরোধী দলগুলোর প্রতি অতিরিক্ত নরম হতে গিয়ে রাজ্যে রাজ্যে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে কংগ্রেসের ( Congress )ঘর। ত্রিপুরা, ওড়িশা, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা সর্বত্র এক অবস্থা।
কংগ্রেস যেন ক্ষমতার দুষ্ট চক্রের শিকার! জাতীয় স্তরে নিজের প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখতে গিয়ে রাজ্যে রাজ্যে দুর্বল হচ্ছে তারা। আর রাজ্যে দল দুর্বল হলে জাতীয় স্তরেও যে দুর্বল হবে সে তো জানা কথা! এর থেকে বাঁচতে হলে অধীর চৌধুরীদের পথটাই শতাব্দীপ্রাচীন এই দলের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ।
অভিষেক মনু সিংভি, কপিল সিব্বলরা আসলে সুখী ‘তত্ত্বকথা’ আউড়ে চলা রাজনীতিবিদ। তাঁরা কোনদিনই অধীর, আব্দুল মান্নানদের মতো মাঠে-ময়দানে নেমে রাজনীতি করেননি, করবেনও না। কিন্তু এরপরও তৃণমূলের সঙ্গে আপোষের পথে হাঁটলেন অধীর চৌধুরীদের হারাতে হতে পারে।