কংগ্রেসে মন কষাকষি, অস্তিত্ব হারাতে বসেছে ভারতের ১৩০ বছরের পুরাতন দল

শুভজিত চক্রবর্তী

যার শিল যার নোড়া, তারই ভাঙি দাঁতের গোড়া। কথাটা কংগ্রেসের কী জন্য প্রযোজ্য?

হাইকম্যান্ডের তাবেদারি করতে গিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব হারাতে বসেছে ভারতের ১৩০ বছরের পুরাতন দল৷  এর আগে নরশিম্মা রাও এবং পরবর্তীকালে মনমোহন সিং৷ ফের নিশানায় সরকারী ক্ষমতায় থাকা দলীয় নেতৃত্ব।

কংগ্রেস ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার বড় কারণ কংগ্রেস নয়! দায়ী নাকি ইউপিএ সরকার! এটা হালে বলতে শুরু করেছেন কংগ্রেসের কিছু নেতৃত্ব।

কয়েকদিন আগেই দলের রাজ্যসভার সাংসদদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছিলেন সর্বভারতীয় কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধি। সেখানে উপস্থিত ছিলেন দলের একাধিক বর্ষীয়ান নেতা।

যেখানে শচীন পাইলটের বিষয়ে এবং দলের আশানুরুপ ফল না হওয়ার কারণ নিয়ে মুল্যায়ন করতে বসেন দলীয় নেতারা। সেখানে সর্বভারতীয় কংগ্রেস সভাপতির পদে রাহুলকে ফের আনার কথা প্রস্তাবে তোলেন অনেকে।

সূত্রের খবর সেই বৈঠকেই কংগ্রেসের অধপতনের কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের দিকে আঙুল তোলেন অনেকে।

কংগ্রেসের একাংশের মতে ইউপিএ টু জমানায় একাধিক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়তে হয়েছে সরকারকে। সেকারণেই ক্ষমতাচ্যুত হতে হয়েছে কংগ্রেসকে।

কিন্তু সবাই যে একেবারে হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলিয়েছেন এমনটা হয়নি৷ বরং বিরোধীতা করেছেন দলেরই একাংশ। সেই তালিকায় রয়েছেন শশী থারুর, আনন্দ শর্মা, মিলিন্দ দেওরা এবং মনীশ তিওয়ারির মতো নেতৃত্ব৷ যারা ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কথা বলেছেন। যদিও এই কথা হয়েছে টুইটারে।

টুইটারে কংগ্রেস বর্ষীয়ান নেতা মনীশ তিওয়ারি বলেন, ২০০৪ থেকে ২০১৪ অবধি বিজেপি সরকার ক্ষমতায় না থাকার জন্য বাজপেয়ীজিকে কখনোই দোষারোপ করেননি। কংগ্রেসের কিছু ব্যাক্তিত্ব এনডিএর বিরোধিতা না করে বরং মনমোহন সিংয়ের দিকে প্রশ্ন তুলছেন।

একসঙ্গে লড়াই করার পরিবর্তে কংগ্রেসের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করছেন৷ মনিশ তিওয়ারির টুইটকে সমর্থন জানিয়ে পাল্টা টুইট করেন মুম্বই কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি মিলিন্দ দেওরা এবং শশী থারুর। এই দুই নেতাই ইউপিএ জমানায় মন্ত্রীপদে নিযুক্ত ছিলেন।

কংগ্রেসের আরও এক বর্ষীয়ান নেতা আনন্দ শর্মা একের পর এক টুইটে ইউপিএ ওয়ান এবং ইউপিএ টু সরকারের কার্যকরীতার কথা তুলে ধরেন৷

সদ্য কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে গিয়েছেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। সরকার বদলেছে মধ্যপ্রদেশে। রাজস্থানের তরুণ নেতা শচীন পাইলটের অনুপস্থিতির কারণে সেখানেও সরকারের টলমল অবস্থা। এর জন্য দায়ী কে?

রাজনৈতিক মহলের মতে কংগ্রেসের পতনের কারণ নিজেই। কারণ কর্ণাটক এবং মধ্যপ্রদেশে সরকারে থাকা সত্ত্বেও যদি সরকারের পরিবর্তন হতে পারে তবে তার জন্য দায়ী কংগ্রেস ছাড়া অন্য কেউ নয়।

যদিও এই পুরানো দলের ভরাডুবিকে কাজে লাগাতে ছাড়েনি গেরুয়া শিবির। কংগ্রেসের একাংশের মতে দীর্ঘ সময় কংগ্রেসের মধ্যে কোনও বৈঠক, আলোচনা হয়নি। যেটা হওয়াটা জরুরি ছিল।

রাজনৈতিক মহলের মতে, করোনা সরকারের গাফিলতি এবং ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত ছিল। কিন্তু সেই জায়গাটিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেনি কংগ্রেস। বরং কুরশি রক্ষা করতে গিয়ে এখন তাদের পায়ের তলার মাটি সরে গিয়েছে।

শুধুমাত্র টুইটারে না বরং জনআন্দোলনের মাধ্যমে জায়গা পুনুরুদ্ধার করা সম্ভব বলে মনে করছেন অনেকেই। সেইসঙ্গে হার্দিক প্যাটেলের মত তরুণ নেতাদের সামনে এনে নতুন এবং পুরাতনের সংমিশ্রণে দলকে পুনুরুদ্ধার করতে হবে৷

সম্পর্কিত পোস্ট