ময়দানে নেমেই আপকে নিশানা, গুজরাটে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা কংগ্রেসের
দ্য় কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ গোটা কংগ্রেস দলটা যখন দিল্লি দখলের স্বপ্ন দেখছে তখনই এক রাজ্যে দিল্লির পরিণতি আটকাতে উঠে পড়ে লেগেছে তারা! কী, অদ্ভুত লাগছে তো? গুজরাটের পরিস্থিতি কংগ্রেসের কাছে বেশ অদ্ভুতই বটে।
গত বিধানসভা নির্বাচনে যে রাজ্যে তারা ক্ষমতা দখলের প্রায় দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিল, সেখানে এবার দ্বিতীয় স্থান ধরে রাখতে পারবে কিনা এই নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক মহলের একাংশের মধ্যে।
গত কয়েক দশক যাবত গুজরাটের রাজনীতি পুরোপুরিভাবে বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে সীমাবদ্ধ। দেশের মধ্যে এই রাজ্যটিতেই একটানা আড়াই দশক ক্ষমতায় আছে বিজেপি, যা রেকর্ড। তবে গত বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস একেবারে ক্ষমতা দখলের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। একটুর জন্য নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহর রাজ্যে ক্ষমতা ধরে রাখতে পারে বিজেপি।
এরই মাঝে গত সাড়ে চার বছরে গুজরাটে তারা বারবার মুখ্যমন্ত্রী বদল করেছে। আসলে ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী পদ ছেড়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে রাজ্যে তাঁর উপযুক্ত বিকল্প মুখ খুঁজে পায়নি গেরুয়া শিবির। কারণ গুজরাটে মোদির পর যিনি মুখ ছিলেন সেই অমিত শাহ প্রথমে সর্বভারতীয় বিজেপির সভাপতি ও পরে সরকারের দ্বিতীয় ব্যক্তিতে পরিণত হন। ফলে গোটা রাজ্যেই কার্যত নেতৃত্ব হীনতায় ভুগছে তারা।
এদিকে বিজেপি যতই দেশজুড়ে উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুজরাট মডেলের কথা প্রচার করুক না কেন, তা যে আদতে অনেকটাই ফাঁপা তা কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন তথ্য থেকে পরিষ্কার। গুজরাটে দারিদ্রতা ভয়াবহ। সেখানকার শিশু ও মহিলাদের অপুষ্টি হার দেখলে মনে হতে পারে এ স্বাধীন ভারত নয়, ব্রিটিশ শাসনাধীন কোন রাজ্যের তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে।
কংগ্রেস সভাপতি পদে নির্বাচন হবে? দলে চ্যালেঞ্জের মুখে গান্ধি পরিবারের কর্তৃত্ব
সেই সঙ্গে রাজ্যে বসবাসকারী স্বল্প সংখ্যক সংখ্যালঘুরা যে ব্যাপকভাবে কোণঠাসা তা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। তাছাড়া হিন্দু ওবিসি সম্প্রদায়ও বিজেপির ওপর নানা কারণে চরম অসন্তুষ্ট। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হওয়াও গুজরাটে তুঙ্গে। এই অবস্থায় প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কংগ্রেস সহজেই বাজিমাত করতে পারবে, এই সম্ভাবনাই সবচেয়ে উজ্জ্বল হওয়ার কথা।
কিন্তু মুশকিল হল গত বছর থেকে হঠাৎই গুজরাটে নজর পড়েছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টির। এর মধ্যে তারা যে খুব কিছু করতে পেরেছে তা নয়। কিন্তু গুজরাটের পুরসভা নির্বাচনে বেশ কিছু জায়গায় কংগ্রেসকে ছাপিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে আপ।
এই বিষয়টিকে হাতিয়ার করে কেজরিওয়ালরা বলতে শুরু করেছেন, এই মুহূর্তে তাঁরাই হলেন গুজরাটের প্রধান বিরোধী পক্ষ। কংগ্রেস কোনমতেই বিজেপিকে হারাতে পারবে না। রাজ্যবাসীর কাছে আপের আহ্বান, বিজেপিকে হারাতে তাদের ভোট দিক।
তবে গুজরাটে গ্রামীন এলাকা এখনও সবচেয়ে বেশি। আর সে পঞ্চায়েত ভোটে আপ মোটেও সুবিধা করতে পারেনি। বরং সেখানে বিজেপির সঙ্গে কয়েক জায়গায় ভালই টক্কর দিয়েছে কংগ্রেস। তাছাড়া মনেই করা হয় গুজরাটের শহরাঞ্চলে বিজেপির যেমন একচেটিয়া আধিপত্য, তেমনই গ্রামাঞ্চল হল কংগ্রেসের এলাকা। এই পরিস্থিতিতে আপের লম্পঝম্ফ কংগ্রেসের মাথাব্যথা বাড়িয়েছে।
কারণ বিরোধী ভোট ভাগ হলে তা বিজেপির সুবিধা করে দেবে। এই পরিস্থিতিতে চলতি বছরেই হয়ে যাওয়া গোয়া বিধানসভা নির্বাচনের ফল তুলে ধরে কংগ্রেস বলছে, আপ বিজেপিকে হারাতে নয়,বরং কংগ্রেসের ভোট কেটে গেরুয়া শিবিরকে ফের ক্ষমতায় আনার জন্য গুজরাটের নির্বাচনের লড়ছে।
ঘটনা হল, দিল্লিতে দীর্ঘদিন কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। আর কারোর তেমন এঊ অস্তিত্ব ছিল না রাজধানীর রাজনীতিতে। কিন্তু ক্ষমতায় থাকা কংগ্রেসকে পিছনে ঠেলে দিয়ে আপ প্রথম স্থানে উঠে এসেছে। আর দ্বিতীয় স্থানের দখল নিয়েছে বিজেপি।
বর্তমানে রাজধানীর দিল্লির রাজনীতিতে কংগ্রেস অনেকটাই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। গুজরাটেও যাতে সেই অবস্থার পুনরাবৃত্তি না হয় তার জন্য বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটকে। এই অবস্থায় গুজরাটের প্রভাবশালী প্যাটেল সম্প্রদায়ের কোন শীর্ষ নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী মুখ ঘোষনা করে নির্বাচনের ময়দানে ঝাঁপাতে পারে কংগ্রেস।