লক্ষ্য ২০২৪, পেগাসাস ইস্যুতে কংগ্রেস- তৃণমূল কাছাকাছি
নয়ন রায়
২০২১এর নির্বাচনে এরাজ্যে কংগ্রেসের ভরাডুবির পর চরম শিক্ষা হয়েছে। রাজ্য কংগ্রেসের প্রদেশ নেতৃত্ব হাড়ে হাড়ে তা টের পেয়েছেন। তাই ভুল থেকেই শিক্ষা নিয়ে কংগ্রেস এরাজ্য নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচাবার তাগিদে পেগাসাস ইস্যুতে তৃণমূলের হাত ধরতে বাধ্য হচ্ছে। বলছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
ওয়াকিবহল মহল বলছে ২০২৪ এর আগে সাম্প্রতিক বাদল অধিবেশনে ফোন টাপিং নিয়ে সরব অবিজেপি দলগুলি। কংগ্রেস টুইটার হ্যান্ডেলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দিয়ে প্রমাণ করে দিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে ৪২ টা আসনে কিছুটা হলেও আসন সমঝোতার পথে যেতে পারে তারা। যদিও তা এখনো অনেক দূরে। তাই এখন থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে সমানুপাতিক সমীকরণের রাস্তায় যেতে চাইছে সর্বভারতীয় কংগ্রেসে।
হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তে আদৌ খুশি নয় পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যের কংগ্রেস নেতৃত্ব। কারণ ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার সময় কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের সমঝোতা হলেও সেই স্মৃতি আজও অম্লমধুর। যদিও পুরনো স্মৃতিকে ভুলে নতুনভাবে কংগ্রেস তৃণমূলের সঙ্গে ফ্লোর পলিটিক্সে হাত ধরতে চাইছে।
কারণ দিল্লি সফরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেসের একাধিক নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা মঙ্গলবার।মঙ্গলবার তৃণমূল সুপ্রিমোর প্রথম বৈঠক রয়েছে মধ্য প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথের সঙ্গে। এই বৈঠক হবে দুপুর ২ টোয়। এরপর দুপুর ৩ টে নাগাদ কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মার সঙ্গেও তাঁর বৈঠক রয়েছে।
পাশাপাশি অবিজেপি দলগুলির সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক বাজার বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। কিন্তু প্রশ্ন সর্বভারতীয় স্তরে পেগাসাস ইস্যুতে কংগ্রেস ও তৃণমূল চার হাত এক হলেও ২০২৪এ এক হবে কিনা।
কারণ ২১এর বিধানসভা নির্বাচনে বাম কংগ্রেসের জোটেbএকটি আসনও তারা পাননি। তার জন্য দায়ী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একথা কংগ্রেস নেতৃত্বের মুখ থেকে শোনা গেছে। বিজেপি লকে হারাতে গিয়ে বাম ও কংগ্রেসের মেরুকরণের ভোট মমতার ঝুলিতে গেছে। সেক্ষেত্রে ২০১১সালের মতো আবার সেই ভুল কংগ্রেস করবে কিনা ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে সেটাই এখন থেকে ভাবাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস নেতৃত্বকে।
প্রতিদিন কংগ্রেস ও বাম থেকে তৃণমূলে যোগ দিচ্ছে বহু কর্মী সমর্থক। আবার এটাও ঠিক সর্বভারতীয় স্তরে নরেন্দ্র মোদীকে ঠেকাতে গেলে কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে কিছু করা যাবে না। আপাতত পেগাসাস ইস্যুতে কংগ্রেসের হাত ধরেই বাদল অধিবেশন বৈতরণী পার করতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস।
কিন্তু ভবিষ্যতে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের সমঝোতা আদৌ কতটা মধুর হবে তা বলা মুশকিল। রাজ্য কংগ্রেসের অভিযোগ, প্রতিদিন শাসকদলের হাতে আক্রমণ শিকার হয় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তরে থাকা কংগ্রেস কর্মীরা। সেক্ষেত্রে সর্বভারতীয় কংগ্রেস কিসের তাগিদে তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতায় যেতে চাইছে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন গুনছে এরাজ্যের দীর্ঘদিনের কংগ্রেস কর্মীরা।
পাশাপাশি বামেদের সমর্থন মমতা আদৌ পাবে কিনা সেটা সময় বলে দেবে। কারণ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র দিনকয়েক আগে জানিয়েছেন এরাজ্যে তৃণমূলের সঙ্গে কোনভাবেই সমঝোতার পথে যেতে চাইছে না তারা।
একদিকে ২০২৪ এর সলতে পাকানো শুরু হলেও অন্যদিকে কংগ্রেস তার সঙ্গী খুঁজে বেড়ানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে ট্রাক্টরে চেপে কৃষি বিলের প্রতিবাদ করে সংসদ ভবনে যে বিক্ষোভ দেখালেন, নতুন করে কংগ্রেস কর্মীদেরকে কতটা উদ্ভাসিত করবে সেটা বলার সময় এখনও আসেনি। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংয়ের সঙ্গে কংগ্রেস সভাপতি নভজত সিং সিধুর সম্পর্ক একেবারেই মধুর নয়।
তার মাঝে মমতার দিল্লি সফর অবশ্যই রাজনৈতিক পাটিগণিতে ভরপুর। এরাজ্যে উপনির্বাচনের ক্ষেত্রে বিজেপির মনোভাব এখনো পরিষ্কার হয়নি। তাই সুকৌশলে কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে এ রাজ্যের উপনির্বাচনের ইস্যুতে সরব হতে পারে তৃণমূল বলে মনে করছেন অনেকেই।
উপনির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী যদি জিতে না আসতে পারেন বা ভোট যদি না হয় তাহলে মুখ্যমন্ত্রীর পদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আইনানুগ ভাবে থাকতে পারেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।
একদিকে বিধান পরিষদ নিয়ে বিধানসভায় বিল পাস করানোর পর রাজ্যপালের থেকে পাশের পর লোকসভা ও রাজ্যসভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর খুব জরুরী। সেটা কতটা সহজ হবে তা বলা মুশকিল। তাই রাজনৈতিক মহল মনে করছেন দিল্লি সফরের ফাঁকেই প্রধানমন্ত্রীকে হয়তো এ রাজ্যের উপনির্বাচন নিয়ে কিছু কথা বলতেই পারেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
যদিও দলীয় সূত্রে বলা হচ্ছে রাজ্যের দাবি-দাওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি কথা বলতে পারেন । কিন্তু অন্য শিবির থেকে জানা যাচ্ছে এ রাজ্যের উপনির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী দ্বারস্থ হতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সব মিলিয়ে পেগাসাস বিতর্ক আর মমতার দিল্লি সফর রাজনৈতিকভাবে কি বার্তা বয়ে নিয়ে আসে তার জন্য কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতেই হবে।