বিতর্ক পিছু ছাড়েনি, ২১-র যুদ্ধে বঙ্গ বিজেপির ‘ তারকা ‘ দিলীপ ঘোষ
।। শুভজিৎ চক্রবর্তী ।।
বিতর্কিত বক্তব্যে তিনি রয়েছেন। তাঁর বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এমনকি তাঁর কথাবার্তার সঙ্গে ‘ফ্যাসিবাদের’ দুরত্ব কতটা সেটাও মেপেছেন অনেকে। কিন্তু গতি হারিয়ে পিছিয়ে পড়েননি তিনি। পুরদোস্তুর আরএসএসের ছাঁচে গড়ে ওঠা একজন ব্যক্তিত্ব এখন রাজ্য বিজেপির দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। দিলীপ ঘোষকে নিয়ে জল্পনা তৈরি হলেও রাজনৈতিক জীবনে ব্যাপক জনমত তৈরি করেছেন তিনি।
তাঁরই দলীয় কর্মীদের কথায়, দিলীপবাবু আদ্যপ্রান্ত একজন মাটির মানুষ। বাংলায় বিজেপির ভীত তো তিনিই গড়েছেন। কোথাও ১০০ জন কর্মীকে নিয়ে খোলা আকাশের নীচে মিটিং করেছেন। আবার কোথাও হাজারো মানুষের সমাগম তাঁর জনসমাবেশকে ভরিয়ে তুলেছে। গ্রাউন্ড জিরোর রাজনীতিতে বিশ্বাসী বলেই গোপিবল্লভবপুরের দিলীপ ঘোষ এখন রাজ্য রাজনীতির অন্যতম মুখ।
২০১৫ সালে রাজ্যের গেরুয়া শিবিরের দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি। তাঁর আগে দীর্ঘ সময় আন্দামান নিকোবর দীপপুঞ্জে থেকে সংগ্রাম করেছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে মানুষের পাশে থেকেছেন সর্বদা। ২০০৭ অবধি আরএসএস প্রধান কেএস সুদর্শনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন।
২০১৬ সালের প্রথম নির্বাচনী ময়দানে লড়াই। একসময়ের এনডিএ শিবিরের শরীক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলই তাঁর মূল প্রতিপক্ষ। সেবার খড়্গপুর কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করেছিলেন তিনি। তাঁর সঙ্গী ছিলেন মাদারিহাটের বিধায়ক মনোজ টিগ্গা। তখন থেকেই শাসক শিবিরের বিরুদ্ধে বিধানসভার ভিতরে এবং বিধানসভার বাইরে আক্রমণ শানাতে শুরু করলেন দিলীপ ঘোষ। এরপর ১৯ এর নির্বাচনে রাজ্য থেকে ১৮ টি আসন পায় দল।
আরও পড়ুনঃ বিপদের সময় দায় এড়াচ্ছে কেন্দ্র,প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে কেন্দ্রীয় ভ্যাকসিন নীতির সমালোচনা মমতার
অনেকেই বলেন, বিজেপির পুর্ববর্তী দায়িত্বে যারা ছিলেন অর্থাৎ তপন শিকদার, বিষ্ণুকান্ত শাস্ত্রী, সত্যব্রত মুখার্জী এমনকি তথাগত রায়ের থেকে আলাদা ঘরানার লোক দিলীপ ঘোষ। প্রচন্ড মুখচোরা হওয়ার জন্য একাধিকবার শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে সাবধানতা এসেছে বারবার। তবুও দলের লাইন বজায় রেখেই লড়াই জারি রেখেছেন।
২১ এর নির্বাচনে বিগত দশ বছরের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের গাফিলতির কথা প্রচার করে চলেছেন। শিক্ষা, সংস্কৃতি, রোজগারের চাহিদা, শিল্প, এমনকি আইনশৃঙ্খলা নিয়েও রাজ্য সরকারকে কটাক্ষ করতে বিন্দুমাত্র পিছপা হননি। এই রাজ্যে পিদিমের মতো জ্বলা বিজেপির দাপট ক্রমশ বাড়তে শুরু করেছে। তাই একাধিকবার হামলার শিকার হতে হয়েছে তাঁকে। রাজনৈতিক সংঘাতের জেরে কর্মীরা প্রাণ হারিয়েছেন। কিন্তু জায়গা ছাড়তে নারাজ দিলীপ ঘোষ।
একুশের ভোটপর্বে দাঁড়িয়ে বিজেপির নেতাদের কথায় রাজ্যে সরকার গঠনে তাঁদের সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীর সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে তাঁকেই ভেবেছিল সাধারণ মানুষ। কিন্তু এবারের নির্বাচনে ভোটের প্রার্থী হননি দিলীপ ঘোষ। বরং এখনও জোর দিচ্ছেন সংগঠনে। তাঁর কথায়, দল যা নির্দেশ দেবে সেই কাজ করতে রাজি আছি।
নিজেকে অমিত শাহ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অনুজ সৈনিক মনে করছেন দিলীপ ঘোষ। কিন্তু আন্দোলনের মাটি ছাড়েননি এখনও। গত বছরের আমফানে কাটারি হাতে বেরিয়ে গাছ কেটে সরিয়েছেন। আমফানের বরাদ্দ টাকা গরীব মানুষের হাতে তুলে দিতে ধর্নাতেও বসতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। আবার কর্মীদের চাঙ্গা করতে একের পর দাওয়াই দিয়েছেন। তবে বিতর্ক থেকে বের হতে অনেকটা সময় লেগে যাচ্ছে।
২ রা মে নির্বাচনী ফলাফলে রাজ্যের মানুষের প্রত্যাশা দিলীপ ঘোষের হাতে ধরে কতটা পূরণ হবে সেটা অবশ্যই দেখার থাকবে। তবে বিশেষভাবে নজর থাকবে বিজেপির দিকে। যে পরিস্থিতি এবং প্রেক্ষাপটে এবারে বিজেপির লড়াই করেছে বিশেষভাবে অন্যদল থেকে আসা বিজেপির সদস্য এবং পুরাতন সদস্যের সেতুবন্ধনে কি সফল দিলীপ ঘোষ? সেটাও প্রমাণ হয়ে যাবে এই ফলাফলেই।