২৪ ঘন্টার বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত কোচবিহার, প্রকাশ্যে নিকাশি ব্যবস্থার বেহাল চিত্র
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ বুধবার রাত থেকে শুরু হওয়া প্রবল বৃষ্টিতে কোচবিহার পৌর এলাকার নিকাশি ব্যবস্থার বেহাল ছবি আরো একবার প্রত্যক্ষ করলেন এই রাজার শহরের নাগরিকরা।
পৌর কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত অপদার্থতায় জলমগ্ন এই শহরের প্রায় প্রত্যেকটি ওয়ার্ড চরম ভোগান্তির শিকার হতে হল এই শহরের নাগরিকদের।
বুধবার রাত থেকে শুরু করে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত একটানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত কোচবিহার জেলা। বৃষ্টিপাতের কারণেই আবারও জলমগ্ন গোটা কোচবিহার শহর।
২০১৭ সালের পর থেকে সামান্য বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়েছে কোচবিহার। প্রতিবারই শহরের জল নিকাশি ব্যবস্থার বেহাল অবস্থা উদাহরণ হিসেবে সামনে উঠে এসেছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হল না।
কোচবিহার শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে জল জমেছে। জল জমেছে কোচবিহার রাজবাড়ী চত্বর, মিনি বাসট্যান্ড সংলগ্ন কেশব রোড, সুনীতি রোড সহ ভবানীগঞ্জ বাজার এলাকায়।
একই সঙ্গে কোচবিহারের মহকুমা গুলিতেও বৃষ্টিপাতের কারণে জল জমেছে বিভিন্ন এলাকায়। চাষের জমি থেকে পার্শ্ববর্তী ঘরবাড়ি গুলিতে জল উঠছে বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। বুধবার রাত থেকে বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টিপাত শুরু হয়। যার ফলেই এই দুর্গতি।
কোচবিহার শহরের বেহাল নিকাশি ব্যবস্থার সবচাইতে করুন ছবি দেখা গেছে শহরের তিন নম্বর ওয়ার্ড এর বিভিন্ন এলাকায় এই পৌরসভার প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা মহানন্দ সাহা বাড়িতেও জমেছে হাঁটু জল।
তবে এ প্রসঙ্গে কোচবিহার পৌরসভার প্রাক্তন তৃণমূল পৌর প্রধান তথা বর্তমান প্রশাসনিক আধিকারিক ভূষণ সিং জানান, জল নিকাশি ব্যবস্থা ঠিকঠাকই রয়েছে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণে এলাকায় জল জমেছে । জল নেমে যাবে।
অন্যদিকে প্রবল বর্ষণে বন্যার ভ্রূকুটি কোচবিহারে। ইতিমধ্যেই জেলার প্রায় সমস্ত নদী বিপদ সীমার উপর দিয়ে বইছে। বেশ কয়েক জায়গায় নদী বাঁধ ধস নেমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে জেলার সমস্ত বিডিও, এসডিও, সেচ দপ্তর, স্বাস্থ্য বিভাগ, কৃষি বিভাগ, সিভিল ডিফেন্সের ভোলেন্টিয়ার ও ডিজাস্টার ম্যনেজমেন্টের আধিকারিকদের।
কোচবিহারের জেলা শাসক পবন কাদিয়ান জানিয়েছেন, বন্যা পরিস্তিতির সম্ভাবনা রয়েছে। সেই কারনে সংশ্লিষ্ট সমস্ত দপ্তরের আধিকারিকদের সতর্ক করা হয়েছে। প্রয়োজন মত ফ্লাড সেল্টার ও ত্রান মজুত রয়েছে।
দুর্নীতির সঙ্গে আপোস নয়, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থার নির্দেশ তৃণমূলের
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় কোচবিহারে ২৬২.২০ থেকে ১২২৩.৬০ মাথাভাঙ্গায় ১৬৬.৮০ থেকে ১০৮৪.৮০ তুফানগঞ্জে ২৩৫.৬০ থেকে ১৯০১.২০ দিনহাটায় ৮৩.৮ হলদিবাড়িতে ১২৫.৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
এর আগেই রাজ্যে সরকারের তরফ থেকে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, কালিংপং, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা প্রশাসনকে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের সম্ভবনা নিয়ে সতর্ক করা হয়েছিল।
প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, টানা বৃষ্টিতে বলরামপুরের কালজানি নদীর বাঁধ একাধিক জায়গায় ধস নেমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ জানিয়েছেন, সকালে ওই বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা জেলা প্রশাসন ও সেচ দপ্তরকে জানানো হয়েছে। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নিচ্ছে।
কোচবিহার জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া রায়ডাক ১ ও ২, কালজানি, তোর্সা, মানসাই ও তিস্তা নদীতে ব্যাপকভাবে জল বৃদ্ধি পেয়েছে।
বেড়েছে স্রোতের তীব্রতাও। নদী সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের প্রয়োজনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনার প্রস্তুতি নিয়েও রেখেছে প্রশাসনের আধিকারিকরা।