করোনা মোকাবিলাঃ এটাই রাজনীতি করার প্রকৃত সময়

পার্থ প্রতীম বিশ্বাস ,রাজ্য সম্পাদক, পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি

গনতান্ত্রিক সরকার হোক বা একনায়কতন্ত্র, সরকারের কাজ তার নাগরিক অর্থাৎ যাদের ওপর সরকার তার শাসন ক্ষমতা দেখায়, যারা না থাকলে সরকারের একপয়সাও দাম নেই, সেই নাগরিকদের বাঁচিয়ে রাখা।

মুরগী, পাঁঠা, শুয়োরের খামারে, মাছের জন্য পুকুর বা ভেড়িতে কচি বাচ্চাগুলোকে, চাষের ক্ষেতে শাকসবজি ধান গম সহ বিভিন্ন ফল ইত্যাদি শস্যের চারাগুলোকে প্রথমে নানান খাবার, ওষুধ ও নিয়মিত পরিচর্যার মাধ্যমে বড় করে তোলা হয়।

তারপর একদিন সেগুলোকেই কেটে ছেঁটে মানুষের খাবারে পরিনত করা হয়। ঠিক তেমনই দেশের প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা দিয়ে নাগরিকদের বাঁচিয়ে বাড়িয়ে রাখা হয় শাসন এবং শোষণ করার জন্য। সরকারের কাজ বলতে এটুকুই। আর এই কাজ করতে গিয়ে হাজারও কৌশল, বুদ্ধি আর পদ্ধতির জন্ম ও তার কার্যকারিতা তৈরী হয়।

আমাদের দেশে গণতান্ত্রিক সরকার আছে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য স্তরে সেই সরকার কাজ করে। দেশের নাগরিকদের জন্য এসবই তাদের কাজ। এই নাগরিকরা যদি বেঁচে না থাকে, যদি অসহায় হয়ে পড়ে, যদি তাদের উন্নতি না হয় তাহলে বাইরের দুনিয়ায় যেমন সরকারের গ্রহণযোগ্যতা কমে যাবে, তেমনই শাসন বা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রগুলো নষ্ট হয়ে সরকারের প্রয়োজনীয়তাই শেষ হয়ে যাবে ।

আরও পড়ুনঃ “আমিও মোমবাতি জ্বালাবো…”

ভারতে করোনা ভাইরাস আক্রমণ (৩০ জানুয়ারি ২০২০) শুরু হওয়ার অনেক আগেই বিশ্বের অন্য অনেক দেশ এই জীবাণুর করালগ্রাসে আক্রান্ত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বারবার সচেতন করেছে, অথচ এ দেশের সরকার সেসবে কান দেয়নি।

সংকটের বার্তাকে উপেক্ষা করেই ভারতে করোনার কোনও প্রভাব নেই বলেও তারা প্রচার বা বিবৃতি দিয়েছে। ফলাফলও হাতেনাতে পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু তাতেও কি সরকারের টনক নড়লো?

এই অতিমারীর সময়ে সবচাইতে বেশি প্রয়োজন স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের। একজন নেতা আক্রান্ত হলে বা মারা গেলে বড়জোর তার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কিন্তু একজন চিকিৎসক বাঁচলে দশ, কুড়ি, পঞ্চাশ, একশ বা হাজার মানুষের প্রাণ রক্ষা করা সম্ভব।

এর অর্থ এই রোগে একজন চিকিৎসক মারা গেলে সমাজ সহস্রগুন বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর এটাই সার সত্যি। অথচ অবাক কান্ড। দেশের চিকিৎসামহল যখন করোনার প্রাদুর্ভাব থেকে দেশ তথা তার নাগরিকদের বাঁচাতে আপ্রাণ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, তখন তাদের নিরাপত্তা দেওয়া ও নিরাপদে রাখার মতো জিনিসপত্র পাওয়া যাচ্ছে না।

এমনটা নয় যে, সরকারের হাতে টাকা নেই, এমনটাও নয় যে, সেসব জিনিসপত্র আনতে মঙ্গলগ্রহে যেতে হবে। দেশের ভেতরেই আছে তার ভান্ডার। তবুও করোনার বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত লড়াই করা সৈন্যদল দেশের চিকিৎসামহল আজও তাদের প্রয়োজনীয় অস্ত্রের অভাবে রয়েছেন। ফলে মার খাচ্ছে চিকিৎসা, অবরুদ্ধ হচ্ছে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই। মার খাচ্ছে গবেষণা ও ওষুধ তৈরীর যাবতীয় প্রক্রিয়াও।

এসব জেনেও সরকার ব্যস্ত তার বাহাদুরির বিজ্ঞাপন দেখাতে। কে প্রথম চেয়ে দেখেছি, কে প্রথম ভালোবেসেছি।

আরও পড়ুনঃ ছাগল দিয়ে লাঙল চাষ হয় না, থালা বাজাও মোমবাতি জ্বালাও

লকডাউনের নিস্তব্ধতা আর ভেঙে পড়া অর্থনীতির খুঁটিনাটি জেনেও সরকার আজও কোটিকোটি টাকা খরচ করছে বিজ্ঞাপনে,আর বাজে কাজে। ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়তই চেষ্টা চলছে নিজ দায়িত্বের বোঝা অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে মজা দেখার, আর প্রচারের আলোয় আসার।

কারণ তাদের ক্ষমতায় থাকতে হবে আর সেজন্য দেশের নাগরিকদের বোকা বানিয়ে রাখতে হবে। এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই বলা হচ্ছে, এটা রাজনীতি করার সময় নয়।

আসলে, এটাই রাজনীতি করার আসল সময়। রাজনৈতিক আলোচনা ও হিসাবনিকাশের মাহেন্দ্রক্ষণ। রাজ সিংহাসনে বসা লোকগুলো আজ ধরা পড়ে গিয়েছে, উলঙ্গ হয়ে গিয়েছে।

লোহা গরম থাকতেই হাতুড়ি মারতে হয়। করোনার রোগের বিরুদ্ধে, লকডাউনে অভুক্ত থাকা মানুষের স্বার্থে লড়াই যেমন চলছে চলুক, সেই সঙ্গে আগামীর হিসাবটাও করা হোক। বিপদেই বন্ধু চেনা যায়। এই সুযোগটাকে অবহেলা করবেন না।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ প্রতিবেদনের উল্লখিত মতামত লেখকের একান্ত ব্যক্তিগত। কোনোভাবেই #TheQuiry দায়ী নয়।

সম্পর্কিত পোস্ট