করোনা আতঙ্ক, নিরুপায় শাখের করাত দেশের দরিদ্র মানুষ
দিলীপ রায়
কাজ না করলে পেট চলবে না। আবার কাজে গেলে করোনা ভাইরাসের থাবায় যেতে পারে প্রাণ। ভারতের প্রান্তিক দরিদ্র জীবন যেন শাখের করাত। শাখের করাত নিয়ে চলতি বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, ‘আইতেও কাটে যাইতেও কাটে’।
সাধারণ দরিদ্র মানুষের জীবন এখন ঠিক সেই পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা, সরকারের হাজার সতর্কতা তাই আতঙ্ক বাড়াতে পারে সাধারণের জীবনে। কিন্তু সাধারণ শ্রমজীবীকে তার জন্য থেমে গেলে চলে না। ছুটে যেতে হয় কর্মক্ষেত্রে। আর তাঁর ঘরের মানুষ আতঙ্কের মধ্যেই দিন কাটায়। দিনভর ঈশ্বর বা আল্লাকে ডাকে। সে ডাক কেউ শুনছে কিনা জানার উপায় না থাকলেও ‘তিনি দেখবেন’ ভরসায় পথে নেমে পড়ে গরীব মানুষ।
কারণ, আয় করতেই হবে। ঘর সংসার সামলাতে হবে। অনিশ্চিত আয় নিয়ে বরাবরই উদ্বেগ ছিল, এখন অনিশ্চিত জীবনকেই বাজি রেখে কাজের খোঁজে পথে নামে বা নামতে বাধ্য হয় গরীব মানুষ। এইসব মানুষের পক্ষে নিত্যদিনের ট্রেন-বাসের ভিড় এড়িয়ে যাওয়া অসম্ভব। ফলে কোনও সাবধান বানীরই মূল্য গরীব মানুষের কাছে নেই। আর বাড়ি বসে কাজ বা ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-এর সুযোগও নেই গরীবের।
আরও পড়ুনঃ করোনা আতঙ্ক, সাধারণের বিপন্নতার মধ্যেই ক্ষমতা দখলের লড়াই রাজনীতিকদের
ফলে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে নিষিদ্ধ হতে পারে সভা-সমাবেশ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিনের ছুটি ঘোষিত হতে পারে। বাতিল হতে পারে সিনেমা সিরিয়ালের শ্যুটিং। সরকারি ও বাণিজ্যিক বেসরকারি বড় সংস্থা, শপিং মল, সিনেমা হল, মেট্রো ও বাস-দূরপাল্লার ট্রেনে দেওয়া হতে পারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, কিন্তু তাতে গরীব মানুষের কিছু যায় আসে না।
করোনা আতঙ্কে সমাজের উচ্চ শ্রেণির মানুষ বাড়ি বসে কাজ করার সুযোগ পেলেও তাদের গৃহপরিচারিকা, নিরাপত্তা কর্মী, সাফাই কর্মী, জল ও গ্যাস ডেলিভারিম্যান সহ অসংখ্য অসংগঠিত শ্রমিকের কি বাড়ি বসে কাজের সুযোগ আছে?
যে মানুষটা গ্রামের হাট থেকে সবজি বা মাছের আড়ত থেকে মাছ নিয়ে ভিড় ট্রেনে শহরে আসেন বিক্রি করতে, তাঁকে সাবধান হওয়ার দাওয়াই দিলেও তা মানা কিভাবে সম্ভব?
অন্যদিকে, এদের পক্ষে ওয়ার্ক ফ্রম হোম কি সম্ভব? ফলে ভিড়ে থাকা বা ভিড়ে যাওয়া ছাড়া যাদের জীবন চলে না, তাদের কাছে স্বাভাবিক ভাবেই করোনা সতর্কবানী গুরুত্বহীন। যদিও করোনা ভাইরাস এরা বহন করে নিয়ে আসে না। করোনা বহন করে নিয়ে আসে উচ্চ শ্রেণির মানুষ। এই ভাইরাসের আঁতুড়ঘর চিনের উহান। এরপর এই ভাইরাস সংক্রামিত হয় বিভিন্ন দেশে।
আরও পড়ুনঃ, করোনা,বুজরুকিতে নয়, আস্থা রাখুন চিকিৎসায়
এখনও পর্যন্ত সারা বিশ্বে দেড় লক্ষ মানুষের শরীরে করোনা ভাইরাস মিলেছে। আর এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন ন’হাজার মানুষ। এদেশেও করোনা ভাইরাস বহন করে নিয়ে এসেছেন কোনও ধনী মানুষ। আর তার ফলে চরম বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে সাধারণ গরীব শ্রমজীবীরা।
অথচ, সরকার এই রোগের হাত থেকে বাঁচতে নানান পরামর্শ ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থার কথা বললেও তা গরীবের জন্য কিছু বলেনি। সাধারণ গরীব শ্রমজীবীদের এই বিপদ নিয়ে কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার এখনও উদাসীন।
এই উদাসীনতাই এদেশে ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে মনে করছেন চিকিৎসক মহলের একাংশ। যদিও সেই বিপদকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে জীবন বাজি রেখে কাজ করে চলেছেন শ্রমজীবীরা । কারণ, কাজ না করলে পেট চলবে না।