মানুষ কী সচেতন হবে না? ফের বেলাগাম করোনায় উঠছে প্রশ্ন
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ করোনার চতুর্থ ঢেউ, সংক্রমণ বৃদ্ধির ভয়াবহ হার এইসব নিয়ে জুন মাসের শেষের দিক থেকেই আলোচনা হচ্ছে সংবাদমাধ্যমে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় ট্রেনে-বাসে, রাস্তাঘাটে কোথাও কাউকে মাস্ক পরতে দেখা যাচ্ছে না। এই নিয়ে প্রশ্ন করলে এক দলের উত্তর করোনা বলে কিছু নেই, সব মিডিয়ার অপপ্রচার!
আবার অনেকেই করোনার মধ্যে পুঁজিপতিদের ষড়যন্ত্র খুঁজে পাচ্ছেন। এই অংশটি আবার তথাকথিত শিক্ষিত মানুষজন। আবার কারোর দাবি, ভ্যাকসিন নেওয়া আছে তাই কিছু হবে না! কিন্তু পরিস্থিতি সম্পূর্ণ অন্য কথা বলছে। দৈনিক সংক্রমণ প্রায় তিন হাজার ছুঁই ছুঁই। বলতে গেলে নিয়ম করে রোজ ৩-৪ জন মারা যাচ্ছেন করোনা আক্রান্ত হয়ে। অর্থাৎ কম হলেও মৃত্যু হচ্ছেই।
তবে সবচেয়ে বেশি ভয়ের ব্যাপার হল পজিটিভিটি রেট। অর্থাৎ যারা করোনা পরীক্ষা করাচ্ছেন সেইরকম প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ১৬-১৮ জনেরই রিপোর্ট পজেটিভ আসছে। অথচ এর আগের তিনটে ঢেউয়ে পজিটিভিটি রেট কখনও এত বেশি হয়নি। তা বড়জোর ১০ এর আশেপাশে ছিল।
চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বললে, চারিপাশে চোখ-কান খোলা রাখলে একটা বিষয়ে পরিষ্কার, এই মুহূর্তে তৃতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণের মতো প্রতি ঘরে ঘরে মানুষের জ্বর-সর্দি হচ্ছে, ডায়রিয়ায় ভুগছে। যা বই এবারের সংক্রমণের লক্ষ্মণ বা সিম্পটম। বরং শ্বাসকষ্ট কম হচ্ছে।
GTA বোর্ডের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ৪ মাস পর ৪ দিনের দার্জিলিং সফরে মুখ্যমন্ত্রী
সরকারি তরফে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে, বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করে বারবার মানুষকে মাস্ক পরার অনুরোধ করা হচ্ছে। চিকিৎসকরা বারবার বলছেন টিকা নেওয়া যেমন জরুরি, তেমনই মাস্ক পরে বাইরে বের হওয়াটা আবশ্যক। নাহলে অজান্তেই অন্যকে যেমন সংক্রমিত করে ফেলবে মানুষ, তেমন নিজেও সংক্রমিত হয়ে পড়বে।
অর্থনীতিকে সচল রাখার জন্য এখনও পর্যন্ত সরকার কোনরকম কড়াকড়ির পথে হাঁটেনি। কিন্তু পরিস্থিতি যা তাতে সরকারের এই উদারতা আদৌ কাজে দেবে কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে। বরং মানুষের বেপরোয়া মনোভাবের কারণে হয়তো আবারও আংশিক লকডাউনের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
কড়াকড়ি হলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে খেটে খাওয়া গরিব মানুষ। যাঁরা সরকারি চাকরি করেন বা বড় কর্পোরেট সংস্থার কর্তা, তাঁদের হয়তো ততটা অসুবিধা হবে না। তাঁদের অনেকেরই ওয়ার্ক ফ্রম হোম মোডে কাজের সুযোগ আছে।
কিন্তু আংশিক লকডাউনের মতো পরিস্থিতির তৈরি হলে গণপরিবহনের উপর কোপ পড়তে বাধ্য। তাতে খেটে খাওয়া, দিন আনি দিন খাই মানুষগুলো না পারবে কর্মক্ষেত্রে কম খরচে পৌঁছতে, না পারবে পরিস্থিতির সঙ্গে যুঝে নিতে।
তাছাড়া আংশিক লকডাউনের মতো পরিস্থিতি মানে হোটেল-রেস্তোরাঁ, জিমনাসিয়াম, বাজার, শপিং মল সেলুন, ক্লাব সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ জারি হতে পারে। এই সব জায়গায় যাঁরা যান অর্থাৎ গ্রাহকরা হয়ত আর্থিকভাবে সচ্ছল, কিন্তু এখানে অনেক নিম্নবিত্ত মানুষ কাজ করে রোজগার করেন। তাই এই জায়গাগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ জারির অর্থ তাদের সেই কর্মসংস্থানে কোপ পড়া।
তাছাড়া নিয়ন্ত্রণ জারি মানে মুটে-মজুর, ভ্যানচালক, রিক্সাচালক, ফেরিওয়ালা, চা দোকানদার, হকারদের আয় শূন্য হয়ে পড়া। তাছাড়া আর আড়াই মাস পরেই দুর্গাপুজো, কিছুদিনের মধ্যেই বাজার শুরু হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু প্রশাসন কড়াকড়ি করতে বাধ্য হলে আবারও দুর্গাপুজোর বাজার মার খাবে। এতে সামগ্রিকভাবে বাংলার অর্থনীতি যে ক্ষতিগ্রস্থ হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এখনও সময় আছে, মানুষ বুঝবে কী না তা তাকেই ঠিক করতে হবে।