হাউজ ফর অল প্রকল্পে শাসকদলের দুর্নীতি, উঠে এল ১৩ জন নেতা-নেত্রীর নাম

সেই ঘর প্রাপকের তালিকায় রয়েছেন খোদ বিদায়ী ভাইস চেয়ারম্যান বেবি বর্মন এর মা পদবী বর্মন, স্বামী সৌভিক দাস সহ  ১৪ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের মোট ৬ জন তৃণমূল নেতা নেত্রী। 

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্ক : হাউস ফর অল বা সকলের জন্য গৃহ। এই প্রকল্পে ঘর পাওয়ার তালিকায় ফের উঠে এল সম্ভ্রান্ত তৃণমূল নেতা নেত্রীর নাম।

বালুরঘাট পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের এই ঘটনায় প্রতিবাদে  সরব বিজেপি।

সম্প্রতি প্রকাশিত হওয়া তালিকায় এই ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর ওরফে প্রাক্তন  ভাইস চেয়ারম্যানের মা, স্বামী সহ ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েকজন স্থানীয় তৃণমূল নেতা নেত্রীর নাম ওঠে এসেছে।

দুঃস্থদের বঞ্চিত রেখে ওয়ার্ডের তৃণমূল নেতা নেত্রীদের সরকারি আবাস যোজনার ঘর পাইয়ে দিয়ে পুর ভোটের আগে ফাঁপড়ে শাসকদল। গতবার ১৪-১১ ব্যবধানে  ক্ষমতায় এসেছিল তৃণমূল। সেই পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেই ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে সেখানে বসে প্রশাসক।

আরও পড়ুন:পুরভোটের আগে প্রকাশ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, রাস্তায় ফেলে মার বিদায়ী কাউন্সিলরকে

বর্তমানে সেই পুরসভা চলছে বোর্ড অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর দিয়ে। অভিযোগ তৎকালীন তৃণমূলের বোর্ড ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজেদের লোকেদের গৃহ প্রকল্পে ঘর পাইয়ে দেয়।

সেই উপভোক্তার তালিকায় নাম রয়েছে প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান বেবি বর্মনের মা, স্বামীর। এছাড়া ওই ওয়ার্ডেরই আরও ছয়জন  তৃণমূল নেতা নেত্রীর নাম উঠে এসেছিল আগেই।

সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে বিজেপি সরব হতেই শোরগোল পরে যায় জেলার রাজনৈতিক মহলে। এবার  সেই তালিকাতেই ফের নাম উঠে এল ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের আরো সাতজন তৃণমূল নেতা নেত্রীর।

এই নিয়ে ফের মহকুমা শাসকের কাছে  লিখিত অভিযোগ জমা করল বিজেপি টাউন মন্ডল কমিটি। দুঃস্থ বা যোগ্যদের বঞ্চিত করে সম্ভ্রান্ত তৃণমূল নেতা নেত্রীদের সরকারি আবাস যোজনার ঘর পাইয়ে দেওয়া হয়েছে বলেই দাবি করে বিজেপি।

বিজেপি টাউন মন্ডল কমিটির সভাপতি সুমন বর্মন বলেন, সকলের জন্য গৃহ বা পিএমএওয়াই  প্রকল্পতে ১৪ এবং ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ব্যাপক দুর্নীতি এবং স্বজন পোষণ হয়েছে তৃণমূলের পুরবোর্ডের সময়ে।

আগেরবার যে তালিকা তারা সামনে এনেছিল সেখানে ভাইস চেয়ারম্যান বেবি বর্মন এর পরিবার সহ ৬ জন তৃণমূল নেতা নেত্রীর নাম ছিল।

এবারের যে তালিকা সেখানেও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ৭ জন তৃণমূল নেতানেত্রীর নাম আছে। অথচ এই উপভোক্তাদের রয়েছে দ্বিতল বাড়ি। বাড়ির নামে একেকজন পাওয়া সেই প্রকল্পের  ৩ লক্ষ ৩৮ হাজার টাকা  ভাগ করে নিয়েছেন এলাকার তৃণমূল নেতারা।

অভিযোগ চরম স্বজনপোষণ  ও দূর্নীতি হয়েছে এই ঘর নিয়ে। আগেই বিষয়টি তারা মহকুমা শাসক ও জেলা শাসকের কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন। তারা ঘর পাওয়ায় যোগ্য কিনা এবং  তাদের জমির তথ্য  কি রয়েছে তা জানাতে বলা হয়েছিল।

সেবার ধামাচাপ দেওয়া হলেও পুনরায় ঘটনার বিষয় এবারও তারা লিখিত দিলেন মহকুমা শাসকের কাছে।
এবার প্রশাসনের ভূমিকা কি হবে তা দেখছি আমরা। সাংসদকে পাশে নিয়ে এব্যাপারে আন্দোলনে নামার হুশিয়ারী দিয়েছে বিজেপি ।

বালুরঘাট তৃণমূল সভাপতি সুভাষ চাকি বলেন, যারা ঘর পাওয়ার যোগ্য তারাই পেয়েছে। তবে সবটাই সকলের জন্য গৃহ প্রকল্পর ঘর নয়। অনেকে গীতাঞ্জলি প্রকল্পর ঘর পেয়েছেন। এই প্রকল্পতে দ্বিতল ঘর করা যায়। বিজেপি না  জেনে ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে।

বালুরঘাট সদর মহকুমা শাসক বিশ্বরঞ্জন মুখোপাধ্যায় বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে বলা যাবে।

প্রসঙ্গত, তৃণমূল পরিচালিত   বালুরঘাট পুরসভার বিদায়ী বোর্ডের সময় এই প্রকল্পর ঘর বন্টন নিয়ে স্বজন পোষণ এবং সুবিধা নেওয়ার প্রথম অভিযোগ ওঠে চলতি বছরের  ১৮ ফেব্রুয়ারী। সেই ঘর প্রাপকের তালিকায় রয়েছেন খোদ বিদায়ী ভাইস চেয়ারম্যান বেবি বর্মন এর মা পদবী বর্মন, স্বামী সৌভিক দাস সহ  ১৪ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের মোট ৬ জন তৃণমূল নেতা নেত্রী।

আরও পড়ুন: বাইক আরোহীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত বালুরঘাটের বাদামাই এলাকা

অন্যায়ভাবে এরা ঘর নিয়েছে বলে ওইদিন  বালুরঘাট সদর মহকুমা শাসক তথা বালুরঘাট পুরসভার বোর্ড অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটারের চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিল বিজেপি টাউন মন্ডল কমিটি। ওই ছয়জনের জমি এবং সরকারি প্রকল্পর ঘর পাওয়ার তথ্য সামনে আনতে এসডিওকে ৪৮ ঘন্টা সময় বেঁধে দেয় টাউন বিজেপি নেতৃত্ব।

কিন্তু তারপরেই সেই ব্যপারে সদর মহকুমা শাসক কোনো ভূমিকা গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ।

সদর মহকুমা শাসকের বিরুদ্ধে নিস্ক্রিয়তার অভিযোগের পাশাপাশি  ভাইস চেয়ারম্যানের পরিবার ও তৃণমূল নেতারা সেই ঘর কিভাবে পায় তা নিয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২০ তারিখে জেলা শাসকের দারস্থ হয় বিজেপি টাউন মন্ডল কমিটি।

এবার একই ঘটনা সামনে এল। ভাইস চেয়ারম্যান সহ ছয়জন বটেই, নতূন ভাবে নাম জড়ালো আরো ৭ জনের।স্বভাবতই পুরভোটের আগে  এই ধরণের ঘটনা শাসকদল কে বেশ ফাঁপড়ে ফেলবে তা স্পষ্ট।

সম্পর্কিত পোস্ট