সংস্কৃতির জেলা দক্ষিণদিনাজপুরে মাত্রা ছাড়া দুর্নীতি, গৌতম পারবেন তো হাল ধরতে?
আকাশ চৌধুরী
দক্ষিণ দিনাজপুরের মাটি সংস্কৃতির দিক থেকে বেশ উর্বর। এখানকার আদব-কায়দা, আচার আচরণ একটু ব্যাতিক্রমী বাংলার অন্যান্য জেলার থেকে।
বাংলাদেশ লাগোয়া এই জেলায় কয়েকদশক ধরে বামফ্রন্ট রাজত্ব করেছিল। উন্নয়নে স্থবিরতা ছিল। ছিল রাজনৈতিক অস্থিরতা। এর থেকে মুক্তির পথ খুঁজছিল জেলার মানুষ বহুদিন ধরে।
বামেদের শক্ত ঘাঁটি ছিল দক্ষিণ দিনাজপুর। আর প্রাণকেন্দ্র ছিল বালুরঘাট। বাম আমলে উন্নয়ন হয়নি বলেই মানুষ বিকল্প হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বেছে নিয়েছিল।
এই জেলার গঙ্গারামপুরের নয়াবাজারের মিষ্টি দই আর বোল্লা কালী বাড়ি এই দুইয়ের সংমিশ্রনে জেলার মানুষ গর্ব অনুভব করেন।
হয়ত ভাবছেন রাজনীতির সঙ্গে দইয়ের কী সম্পর্ক। অবশ্যই সম্পর্ক আছে। যতবার মমতা এই জেলায় এসেছেন নয়াবাজারের দই তাঁকে আকৃষ্ট করেছে। আর বোল্লা কালীর আশির্বাদ তাঁর সঙ্গে ছিল বলেই ২০১১ এবং ২০১৬ তে বেশ কয়েকটি আসন পেয়েছেন।
এই জেলায় প্রায় ১২ লক্ষ ভোটারের বাস। ক্ষমতায় আসার পর রাস্তাঘাট, বিদ্যুত, হাসপাতাল সহ বিভিন্ন পরিষেবায় মানুষকে ভরিয়ে দিয়েছেন। তা সত্ত্বেও ১৯ এ মমতাকে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। তার কারণ বিপ্লব মিত্র বিজেপিতে।
বিপ্লব মিত্র ও শংকর চক্রবর্তীর লড়াইয়ে পাশে পড়ে থাকে বাচ্চু হাঁসদা ও প্রাক্তন জেলা সভাপতি অর্পিতা ঘোষ। লড়াই ক্রমশ তীব্রতর হয়েছে।
অতি সম্প্রতি জেল পরিষদের মেন্টর শুভাশিষ পালের দুর্নীতির খবর বালুরঘাট, গঙ্গারামপুর, তপন, কুমারগঞ্জ, কুশমন্ডি, হরিরামপুরের মানুষ ভালচোখে নেয়নি।
নবীন-প্রবীণের মেলবন্ধনে রোডম্যাপ মমতার
এই দুর্নীতির পাশাপাশি আরও একটি অভিযোগ শোনা যায়, তা হল পুলিশ দিয়ে দল পরিচালনা। এতেই সংস্কৃতির শহর দক্ষিণ দিনাজপুর ভাল চোখে নেয়নি। এই জেলার মানুষের একটাই বক্তব্য উন্নয়ন হোক না হোক, একটু ভাল ব্যবহার।
এই প্রচলিত আপ্ত বাক্যটি জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়ে প্রতিদিন দিন গুজরান করেন। তাই সংস্কৃতির শহরে বর্তমান সভাপতি গৌতম দাসের ভাগ্নের তপন দিঘীর জমি কেনার অভিযোগে সরব হয়েছে বিজেপি।
দুর্নীতি এখানেই থেমে থাকেনি। বর্তমান মন্ত্রী বাচ্চু হাঁসদা, তার প্রাসাদসম বাড়ির ছবি দেথে চমকে উঠেছিলেন খোদ নেত্রী।
শুধু তাই নয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যখন তিনি স্কুল বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন তখন লক্ষ লক্ষ টাকা দুর্নীতির তথ্য খোদ কালীঘাটে পৌঁছে যায়।
শাসকদলের বিরুদ্ধে আরও একটি গুরুতর অভিযোগ হিলি বর্ডারে ট্রাক পিছু কাটমানি তৃণমূলের নেতৃত্বের হাতে পৌঁছয় বলে অভিযোগ খোদ নেত্রীর।
এই সমস্ত তথ্যকে সম্বল করে পিকের টিম পৌঁছয় জেলায়। সঙ্গে প্রাক্তন পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।
একদিকে পিকে, অন্যদিকে রাজীব। মমতার দুই অস্ত্র মাঠে নামে। মিলিয়ে দেখে যে তথ্য কালীঘাটে পৌঁছেছিল তা কতটা বাস্তব সম্মত।
তথ্য মেলাতে মেলাতে প্রাক্তন পর্যবেক্ষক রাজীবের চোখ কপালে ওঠে। এই লাগামহীন দুর্নীতির কারণে দক্ষিণ দিনাজপুরে বিজেপি জয়লাভ করে।
এথানে বিজেপি ও তৃণমূলের সমান শক্তি। এনআরসি ইস্যুতে অনেকটা ব্যাকফুটে ছিল বিজেপি। যার কৃতিত্ব অনেকটা পিকে এবং রাজীবের। কিন্ত করোনায় নেতাদের বনবাসে যাওয়ায় বিজেপির বাড়তি সুবিধা হয়েছে।
মোস্ট ওয়ান্টেড থেকে মূলস্রোতে, ছত্রধরের হাত ধরে বৈতরণী পার করার ভাবনা মমতার…
আরও একটি অভিযোগ প্রাক্তন মন্ত্রী শংকর চক্রবর্তীর ব্যবহার অত্যন্ত খারাপ। যেকারণে জেলার মানুষ বিতশ্রদ্ধ। সেক্ষেত্রে অর্পিতা ঘোষকে সরিয়ে গৌতম দাসকে জেলা সভাপতি দল করল বটে তাতে ফল ভাল হবে না। একথা দক্ষিণ দিনাজপুরের তৃণমূল কর্মীরাই বলছেন।
গৌতম দাস যতই হাল ধরুন না কেন গঙ্গারামপুর ও তপন বিধানসভা তৃণমূলের সেফ জোন হলেও বাকি চারটি বিধানসভা আনসেফ। যত নির্বাচন এগিয়ে আসবে দুর্নীতি-সিন্ডিকেট-কাটমানি ইস্যু ভোটারদের ভাবাবে। তাই ভোটের আগে গৌতম সফল কতটা হবে সেটা নিশ্চিতভাবে বলা খুব মুশকিল।
তাই গঙ্গারামপুর নয়া বাজারের মিষ্টি দই ২১ এর ভোট বাজারে টোকে না যায়, আশঙ্কা থেকেই গেল।