শিব ঠাকুরের আপন দেশে সবাই যেন পর….

নয়ন রায়

“শিব ঠাকুরের আপন দেশে আইনকানুন সর্বনেশে।” এই আক্রমণের মূল টার্গেট বরাবরই দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাই প্যারোডি গান হোক বা সুকুমার রায়ের কবিতা হোক, এই পন্থায় শাসক আক্রমণের নজিরবিহীন প্রেরণা আমরা স্বাধীনতার আগে থেকেই পেয়েছি। আমাদের রক্তে রয়েছে প্রতিবাদ করার ভাষা। তাই আমরা যেমন দেশ বিভাজন সমর্থন করিনি। তেমনি ঘটে চলা বর্তমান ঘটনাপ্রবাহকেও আমরা সমর্থন করিনি।

কোভিড মোকাবেলা আমরা করে চলেছি। প্রশ্ন উঠছে হাওয়াই চটি পড়া বছর ৬৫-র মহিলাকে নিয়ে। আবার কখনো দাড়িওয়ালা ব্যক্তির বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে।

রাজনৈতিকভাবে আমাদের সমাজ জীবনকে বিভিন্ন সময়ে রাজ নেতারা প্রভাবিত করেন, এটা সত্যি। কবে নরেন্দ্র মোদী বললেন সবাইকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে! আমরা তো বুঝতেই পারলাম না। হঠাৎ করেই প্যারোডি গানই বা কেন? সেই গান কিসের বার্তা বহন করে?

একদিকে একগাল দাড়ি আর অন্যদিকে হাওয়াই চটি। এই চিহ্ন দুটি যেন ভারতবর্ষের পলিটিক্যাল ব্র্যান্ডিং। যেমন হাওয়াই চটি পড়ে কেউ যদি রাজ্যপাট চালায় তাতে দোষ কোথায়? আসলে আমরা বড় বেশি অধৈর্য ও ও আসহিষ্ণু। আমরা বরাবরই নিজেদের মতো করে ভারতবর্ষকে দেখতে শিখেছি। এর নামই তো গণতন্ত্র।

এই দেশটা এখনও ফিলিস্তিনি বা ইজরাইল হয়ে যায়নি। বা জঙ্গিদের হাতে চলে যায়নি। ক্ষমতায় থাকলে শাসককে চাবুক হাতে নিতেই হয়। কারণ ভেঙেপড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে গেলে চাবুকের দরকার হয়। মোদির দাড়ি আর মমতার হাওয়াই চটি আলোচনা বিষয়বস্তু কখনোই হতেই পারে না।

এমনিতেই দুই শাসক সবথেকে এই মুহূর্তে বড় বেসামাল। আচ্ছা বলুন তো হাওয়াই চটি পড়ে মমতা যদি কোভিড দূরত্বের মাপ চক দিয়ে চিহ্নিত করে দেয়, কেন এত সমালোচনা? হাওয়াই চটি পড়া মমতার ক্যা ক্যা ছি ছি বা থালা বাজানোর দৃশ্যপট অথবা ডরিনা ক্রসিং যদি দেখেই থাকি তাহলে দোষ কোথায়?

ছোটছোট ছেলেমেয়ে গুলোকেও বলতে শোনা গিয়েছে “দেখো দেখে কেমন করে ক্যা ক্যা ছি ছি গান গাইছে ।” রেশনের দোকানে আমজনতার দুয়ারে হাজির হবে। করোনার মৃতদেহ আর প্লাস্টিকে মুড়ে পড়ানো হবে না। তার জন্য আছে অন্য পদ্ধতি। গঙ্গায় মৃতদেহ ভাসছে।

কেউ কেউ অবশ্য বলছেন গঙ্গায় যাই পড়ুক, সব শুদ্ধ হয়ে যায়। আজব সব কথা শিব ঠাকুরের দেশে। আবার অনেকে বলছেন শুধু হরি নাম বলুন এতেই চলবে। তাতে ক্ষতি কিসের। টিকার লাইন আর রেশনের দোকানে লাইন দিয়ে লোক দাঁড়িয়ে গেলেন। সৌজন্যে ওই হাওয়াই চটি ও একগাল দাড়ি।

বেশ তো ভালই আছি। শুকনো লঙ্কা আর আলু দিয়ে চোখ বন্ধ করে ভাত খাব আমরা। স্বাধীনতার এতদিন পর এর থেকে আর ভালো কিই বা হতে পারে! আসলে সিস্টেম অফ পলিটিক্স দাড়ি বা হাওয়াই চটি। যা দেখে মনে হয় আমরা সত্যিই শিব ঠাকুরের আপন দেশে থেকেও যেন পর….

সম্পর্কিত পোস্ট