করোনা মোকাবিলায় ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে চুক্তি মার্কিন ফার্মা জায়েন্টের
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় আগামী ১৮ তারিখ থেকে শুরু হচ্ছে লকডাউনের চতুর্থ পর্যায়। ১৭ তারিখ শেষ হচ্ছে লকডাউনের তৃতীয় পর্যায়। বিশ্বজুড়ে ত্রাস সৃষ্টিকারী ভাইরাস প্রতিরোধে ভ্যাকসিন তৈরীর জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
এরই মাঝে আশার আলো দেখাচ্ছে পরীক্ষামূলক ওষুধ রেমডেসিভির। করোনাভাইরাসের প্রতিরোধী ওষুধ ‘রেমডেসিভির’ সফল বলে দাবি করেছেন গবেষক-বিজ্ঞানীরা। পরীক্ষামূলক প্রয়োগে সাফল্যের পর ওই ওষুধ প্রয়োগের অনুমোদনও দিয়ে দিয়েছে হোয়াইট হাউস।
হোয়াইট হাউসে শীর্ষ স্তরের মার্কিন এপিডেমিওলজিস্ট অ্যান্টনি ফাওসি দাবি করেন, আমেরিকা, এশিয়া ও ইউরোপের ৬৮টি জায়গায় এক হাজারেরও বেশি করোনা রোগীর উপর রেমডেসিভির প্রয়োগ করে দেখা গেছে, কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ রুখে দিতে পারে ভাইরাস প্রতিরোধী এই ওষুধ।
ভারত- পাক যৌথ উদ্যোগে উৎপাদিত হবে রেমডেসিভিরঃ
রেমডেসিভির তৈরিতে এবার অনুমতি দিল মার্কিন ফার্মাসিউটিক্যাল জায়ান্ট গিলেড (Gilead) সায়েন্স। এই ওষুধ নির্মাণে ভারতের তিন সংস্থা সিপলা, হেটেরো ল্যাব ও জুবিল্যান্ট লাইফসায়েন্সেসের সঙ্গে চুক্তি করেছে গিলেড (Gilead) সায়েন্সেস।
শুধুমাত্র ভারতই না, পাকিস্তানের ওষুধ নির্মাতা সংস্থা ফিরোজসন্স ল্যাবোরেটরিস (Ferozsons Laboratories) ও পেনসিলভানিয়ার ফার্মা কোম্পানি মাইল্যান (Mylan) এর সঙ্গেও চুক্তি করা হয়েছে।
আরও পাঁচটি সংস্থাকে নিজেদের চাহিদা ও সুবিধা মতো ওষুধের দাম নির্ধারণ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এই পাঁচটি কোম্পানিতে তৈরী ওষুধ পৌঁছে দেওয়া হবে বিশ্বের ১২৭ টি দেশের কাছে।
কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (ICIR)-এর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল টেকনোলজি ল্যাবে রেমডেসিভির ওষুধ তৈরির মূল উপকরণ বানানো শুরু হয়ে গিয়েছে।
এবার গিলেড সায়েন্সের সঙ্গে জরুরিকালীন চুক্তির ভিত্তিতে ভারতের তিন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে রেমডেসিভির ওষুধ তৈরি শুরু হবে।
অনেকেই অবশ্য দাবি করেন, ২০১৪ সালে আফ্রিকাতে মহামারী আকার নেওয়া ইবোলা ভাইরাস রুখে দিয়েছিল ২০১০ সালে গিলেড সায়েন্স প্রস্তুতকারী রেমডেসিভির। তবে অনেক চিকিৎসক- বিজ্ঞানীরা অবশ্য সেই দাবি নস্যাৎ করে দিয়েছিলেন।
স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে রেমডিসিভির নিয়ে গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ভারতীয় বংশোদ্ভুত অরুণা সুব্রহ্মণ্যমের কথায়, এখনও স্ট্যানফোর্ড আক্রান্তদের ওপর রেমডেসিভিরের ট্রায়াল পরীক্ষা করা হচ্ছে। ট্রায়ালের পর আক্রান্তরা সেরে উঠলে তবেই বাকিদের উপরে এর পরীক্ষা করা শুরু হবে।
উল্লেখ্য জাপানও গত ৭ মে ওষুধটি করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের উপর রেমডেসিভির ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। তবে এই ওষুধ সে দেশে কবে তৈরি হবে, তা জানায় নি জাপান।
লকডাউন কি উঠবে? টেস্টের রিপোর্টই ঠিক করবে ভবিষ্যৎ বলছেন বিশেষজ্ঞরা
এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের দাবিঃ
প্রসঙ্গত, আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FDA) করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় রেমডেসিভির ওষুধটি পরীক্ষামূলক জরুরি ব্যবহারের অনুমতি দেয় ২৯ এপ্রিল।
ঘোষণার ১০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশের ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা ম করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর এই ওষুধ তৈরি করে ফেলার দাবি করে।
সংস্থার কর্তা সিমিন হোসেন জানিয়েছিলেন উৎপাদনের সব প্রক্রিয়া শেষ। এখন চলছে সেই ওষুধ সরবরাহের প্রস্তুতি। এসকেএফ-এর তরফে জানানো হয়, “করোনা পরিস্থিতি নিয়ে দেশের এই কঠিন সময়ে আমরা দেশবাসীকে এই সুখবর দিতে চাই যে, বিশ্বে করোনার একমাত্র কার্যকর ওষুধ বলে স্বীকৃত জেনেরিক রেমডেসিভির উৎপাদনের সব ধাপ আমরা সম্পন্ন করেছি।”
এ অবস্থায় এসকেএফ-ই বিশ্বে প্রথম ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, যারা জেনেরিক (মূল বা গোত্র) রেমডেসিভির উৎপাদন করতে সক্ষম হলো। এসকেএফের উৎপাদন করা রেমডেসিভিরের বাণিজ্যিক নাম ‘রেমিভির’।
এসকেএফ জানিয়েছে, বিধি অনুযায়ী রেমডিসিভির নমুনা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অধীনস্থ ন্যাশনাল কন্ট্রোল ল্যাবোরেটরিতে জমা দেওয়া হবে এবং ছাড়পত্র ও বাজার জাতের অনুমতি পাওয়ার পর কিছু দিনের মধ্যেই ওষুধটি বিতরণ শুরু করবে এসকেএফ।
রেমডিসিভির কী?
রেমডেসিভির নিউক্লিওটাইড অ্যানালগ (Nucleotide Analog)।
RNA ভাইরাসের প্রতিলিপি তৈরির ক্ষমতাকে নষ্ট করে দিতে পারে এই অ্যান্টি-ভাইরাল ড্রাগ।
রেমডিসিভির করোনাভাইরাস আক্রান্ত মানুষের শিরায় ইনজেকশন হিসেবে দিতে হয়। রোগের ওপর এর ডোজ নির্ভর করে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গুরুতর অসুস্থের জন্য ৫ অথবা ১০ দিনের ডোজ প্রয়োজন হতে পারে।
প্রতি ডোজ পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকার মতো দাম হবে। ওষুধটির প্রয়োগের দুই ধরনের ডোজ রয়েছে– ৫ ও ১০ দিনের। ১০ দিনে ৫৫ হাজার টাকার মতো এবং ৫ দিনের ডোজে ৩০ হাজার টাকা (বাংলাদেশী মুদ্রায়ো) দাম হতে পারে।