১১ মাস বন্ধ, অষ্টম পর্যন্ত পড়ুয়ারা ভুলছে পড়া
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ স্কুল বন্ধ হওয়ার ১ বছর অতিক্রান্ত । ১১ মাস বন্ধ থাকার পর নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য স্কুলের দরজা খুললেও এখনও পর্যন্ত তা প্রাথমিক ও উচ্চপ্রাথমিকের পড়ুয়াদের জন্য বন্ধ।
আর এই এক বছর স্কুলে না গিয়ে বাড়িতে বদ্ধ থাকার ক্ষতিকারক প্রভাব হিসেবে দেখা দিয়েছে, পড়ালেখায় অনীহা, জানা পড়া ভুলে যাওয়ার মতো একাধিক সমস্যা । এমনই অভিযোগ তুলছে শিক্ষক ও অভিভাবকদের একাংশ।
শিক্ষকদের বক্তব্য, এই রকম চলতে থাকলে বাড়বে স্কুলছুট । ছাত্র-ছাত্রীদের ফের ক্লাসরুম শিক্ষায় অভ্যস্ত করা হয়ে উঠবে কঠিন। গত বছর ১৬ মার্চ থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল রাজ্যের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ।
চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি উচ্চ শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য খুলেছে স্কুল । চলছে সশরীরে ক্লাস ও পরীক্ষা । কিন্তু, প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়ারা ১ বছর ধরে ঘরেই বন্দি । অনলাইন মাধ্যমে বিভিন্ন পদ্ধতিতে চলছে তাঁদের পঠন-পাঠন । কিন্তু, তা সত্ত্বেও পড়াশোনা ভুলে যাচ্ছে তাঁরা । এমনই জানাচ্ছেন অভিভাবকরা ।
কলকাতার একটি সরকার পোষিত স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে সমিত চৌধুরির মেয়ে। তিনি বলেন, “আমার মেয়ে পড়া ভুলে যাচ্ছে । মেয়েকে রাস্তায় দেওয়ালে আঁকা পদ্মফুল দেখিয়ে এটা কী ফুল জিজ্ঞেস করলে সঠিক উত্তর দিচ্ছে । বলছে ‘এটা পদ্মফুল’ । কিন্তু, তারপরেই যখন জিজ্ঞেস করছি, ভারতের জাতীয় ফুলের নাম কী ? তখন আর উত্তর দিতে পারছে না । পদ্মফুল আর জাতীয় ফুলের মধ্যেই সংযোগটাই করতে পারছে না ।”
একুশের ভোটে উন্নয়নের ইস্তাহারে ১০ অঙ্গীকার মমতার
বাগবাজার মাল্টিপারপাস গার্লস স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে মাধুরী দত্তের মেয়ে । তিনি বলেন, “স্কুল থেকে পড়া হোয়াটসঅ্যাপে দেওয়া হচ্ছে । সেটা পড়ছেও । কিন্তু, স্কুলে গেলে পড়াশোনায় যে গতিটা দেখা যায় সেটা অনেকটাই কমে গেছে । স্কুলে গেলে খেলাধূলা, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়াটাও একটা আলাদা মজা ছিল । সেটাও এখন আর নেই ।
তিনি বলেন “পড়া দেওয়া হলেও যেহেতু স্কুল নেই তাই চাপটাও কমে গেছে । পড়তে বসাতে গেলে অনেকটাই কষ্ট করতে হচ্ছে আমাদের । ওদের মনের মধ্যে চলে এসেছে স্কুল তো হবে না । তাই আজকের পড়াটা কালকে করলেও হবে । সবমিলিয়ে পড়াশোনার প্রতি একটা অনীহা চলে এসেছে দেখছি ।”
দক্ষিণ 24 পরগনার একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে তরুণকান্তি দাসের ছেলে । তিনি বলেন, “দীর্ঘ একবছর হয়ে গেল । ছেলে বাড়িতে পড়াশোনা একদম করছে না । ডিসিপ্লিন মানছে না । স্কুলে একটা ডিসিপ্লিন, একটা চাপের মধ্যে থাকত । সেটা সম্পূর্ণ ব্যর্থ । এভাবে দীর্ঘদিন পড়াশোনার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন থাকলে ওদের ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়ে আমরা খুব চিন্তিত। বিদ্যালয়ে না গেলে পঠন-পাঠনের বাঁধন থাকছে না । বাড়িতে অভিভাবকদের কথা শুনছে না । বাড়িতে মোবাইল, আড্ডা, খেলাধূলা নিয়েই থাকছে । পড়াশোনা থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে ।”
অনলাইনে পঠন-পাঠন হলেও মোবাইল বা ইন্টারনেট পরিষেবার কারণে অনেকেই তাতে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না । বিশেষত, যে সকল বাড়িতে একাধিক স্কুল পড়ুয়া রয়েছে । এমনও অভিযোগ উঠছে অভিভাবকদের তরফে ।
প্রধান শিক্ষক, শিক্ষিকারাও এতদিন স্কুল বন্ধ থাকার নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত । তাই একাধিক শিক্ষক সংগঠনের তরফে ইতিমধ্যেই প্রাথমিক ও উচ্চপ্রাথমিক স্তরের পড়ুয়াদের জন্য স্কুল খোলার দাবি তোলা হয়েছে ।
বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হাণ্ডা বলেন, “আমরা যখন মিড-ডে মিল বিতরণের জন্য স্কুলে যাই অভিভাবকরা তখন অভিযোগ করেন, বাচ্চারা তো পড়া ভুলেই যাচ্ছে । কারণ, স্কুলে যে খেলাধূলা, বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা সেটা তো বন্ধ হয়ে গেছে । ফলে, তাদের স্বাভাবিক বিকাশটা বন্ধ হয়ে গেছে । বাড়ির লোকজন তাকে পড়ার কথা বলছে । এই পরিবেশটা তার কাছে অসহনীয় হয়ে উঠছে ।
তাঁর কথায়, চার দেওয়ালের মধ্যে এক বছরের বেশি সময় ধরে বদ্ধ হয়ে গেছে । তাই পড়াশোনাটা তার আর ভালো লাগছে না । শিক্ষা দফতরের উচিত সব অংশীদারদের সঙ্গে কীভাবে স্কুল খোলা যেতে পারে তা দেখা । কোনোভাবে স্কুল না চালু করলে শিশুরা মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত হয়ে উঠতে পারে ।
WB Assembly Elerction 2021: প্রার্থী তালিকা প্রকাশ বিজেপির-কৃষ্ণনগর উত্তরে মুকুল রায়, ভবানীপুরে রুদ্রনীল, বারাসাতে শঙ্কর চ্যাটার্জী
পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু বলেন, “বিচ্ছিন্ন ইতিমধ্যেই হয়ে গেছে । তাদের জীবন থেকে যা হারিয়ে যাওয়ার তা হারিয়ে গেল । তারা আর কোনোদিন স্বাভাবিক ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারবে না । খুব খারাপ কাজ হল । বাচ্চার স্কুল যাওয়াটা একটা অভ্যাস । সেটা নষ্ট হয়ে গেল । আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়াটা খুব কঠিন কাজ । স্কুল তো খুলতেই হবে । সেটা বিভিন্নভাবে করা যায় । সামাজিক দূরত্ব মেনে সপ্তাহে এক একদিন এক একটা ক্লাসকে আনা যেতে পারে । কিন্তু, স্কুল বলে যে একটা বস্তু আছে সেটা তো ভুলে গেছে । এরকম চলতে থাকলে এমন একটা সময় আসবে যখন বলা হবে, স্কুল রেখে লাভ কী? সবই তো অনলাইনে হয়ে যাচ্ছে ।”
তবে, শিক্ষক-শিক্ষিকারা স্কুল খোলা হোক চাইলেও, স্কুল খোলা উচিত কিনা তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশায় অভিভাবকরা । তাঁদের কেউ কেউ চাইছেন স্কুল খুলুক । চালু হোক ক্লাস । আবার বর্তমানে করোনা মহামারির পরিস্থিতি দেখে কেউ কেউ মনে করছেন আর একটা বছর স্কুল বন্ধ থাকলে থাক । কিন্তু, বাচ্চা সুস্থ থাকুক ।