ইয়েচুরির ব্যাখ্যাতেও মিটল না ক্ষোভ, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে আড়াআড়ি বিভাজন সিপিএমে

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী জোটের প্রার্থী হিসেবে যশবন্ত সিনহাকে সমর্থন করেছে সিপিএম‌ও। কিন্তু বাজপেয়ি মন্ত্রিসভার এই প্রাক্তন সদস্যকে নিয়ে কার্যত আড়াআড়ি বিভক্ত হয়ে গিয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ কমিউনিস্ট দলটি। কঠোর দলীয় অনুশাসন অমান্য করেই সদস্যরা সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক ক্ষোভ উগরে দিতে শুরু করেছেন।

এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার সিপিএমের রাজ্য মুখপত্র ‘গণশক্তিতে’ সীতারাম ইয়েচুরির একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে সেই ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সাক্ষাৎকারের বক্তব্য ঘিরে বিতর্ক কমার বদলে আরও বেড়ে গিয়েছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী নির্বাচন সংক্রান্ত বিতর্কে সিপিএমের নিচুতলায় কার্যত ভিলেনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি।

দলের সমর্থকদের পাশাপাশি সদস্যরাও প্রকাশ্যেই ইয়েচুরিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ কমিউনিস্ট রাষ্ট্রপতি মিখাইল গর্বাচেভের সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেছেন! কেউ কেউ আবার সামাজিক মাধ্যমে দলের সাধারণ সম্পাদকেই বহিষ্কারের দাবি তুলেছেন। অনেকেই অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক শ্রীপাদ অমৃত ডাঙ্গের উদাহরণ মনে করিয়ে দিয়ে বলছেন, কমিউনিস্ট আদর্শ ভুলে আচরণ করলে দলের সাধারণ সম্পাদককেও শাস্তি দেওয়া উচিৎ।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদপ্রার্থী হিসেবে যশবন্ত সিনহার নাম ঘোষণার পরই বিপদ টের পায় সিপিএম। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ফেসবুক পেজে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে কমেন্ট করার জায়গাটি তারা বন্ধ করে দেয়। এই বিষয়টি বিতর্কে ঘৃতাহুতি দেয়। যদিও দলের সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরিকে মূল নিশানা করা হলেও সিপিএমের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত বিষয়টিকে কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখানো হচ্ছে। অর্থাৎ ইয়েচুরি একা নয়, বিজেপির প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সদ্য-প্রাক্তন তৃণমূল নেতা যশবন্ত সিনহাকে সমর্থন করার বিষয়টি দলগত সিদ্ধান্ত।

অতৃপ্ত আত্মাদের দিকে ওত পেতে বসে, বিজেপি যেন ভারতীয় রাজনীতির ‘রক্তপিশাচ’!

কিন্তু বাংলার সিপিএম নেতাদের প্রশ্ন, যিনি বিজেপির প্রাক্তন মন্ত্রী, যিনি অতীতে ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র করার দাবি তুলেছেন তিনি কী করে আরএসএসের মতাদর্শকে ঠেকাবেন? এই পক্ষের দাবি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন বর্তমান বিজেপি বনাম প্রাক্তন বিজেপির মধ্যে হচ্ছে!

এর ফলে সিপিএম কার্যত তৃণমূলের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছে বলে বামপন্থী দলের কর্মী-সমর্থকদের একাংশের অভিযোগ। তাঁদের মতে এরপর মানুষের কাছে গিয়ে নৈতিকতার প্রশ্নে ভোট চাওয়ার অধিকার হারিয়ে ফেলল দল। পাল্টা সিপিএমের ইয়েচুরি ঘনিষ্ঠরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিরোধী শিবিরের প্রার্থীকে সমর্থন না করলে জাতীয় রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়ত সিপিএম।

তবে দলের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা এখনও পর্যন্ত ভোট বয়কটের দাবিতে অনড়। বিষয়টি নিয়ে কেরল, তামিলনাড়ু, ত্রিপুরার থেকেও বেশি সরব বাংলার সিপিএম কর্মীরা। এই রাজ্য থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সিপিএমের ভোটার বলতে রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। ইতিমধ্যেই তাঁর উপর দলীয় কর্মী সমর্থকরা চাপ দিতে শুরু করেছেন যাতে তিনি ভোটদানে বিরত থাকেন।

তবে পরিস্থিতি যে দিকে গড়াচ্ছে তাতে দলে ভাঙন না ধরলেও বঙ্গ সিপিএমের প্রিয় পাত্র সীতারাম ইয়েচুরি যে রাতারাতি খলনায়ক হয়ে উঠেছেন সেটা স্পষ্ট। আশ্চর্যজনকভাবে সিপিএমের অভ্যন্তরীণ সমীকরণের চাকা সম্পূর্ণ উল্টো পথে ঘুরে যারা এতদিন প্রকাশ কারাত শিবিরের সমালোচনা করতেন তারাই এখন কারাতকে ধন্য ধন্য করছেন। এই অবস্থায় দিল্লির একে গোপালন ভবনের ওপর চাপ বাড়িয়েছে আলিমুদ্দিন। সূত্রের খবর, রাজ্য পার্টির সম্পাদক মণ্ডলীর পক্ষ থেকে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে নিজেদের অবস্থানের শুধু ব্যাখ্যা দিলেই হবে না, যাতে কর্মীরা সেটা গ্রহণ করতে পারে তেমনই যুক্তি তুলে ধরতে হবে।

কিন্তু প্রথম সাক্ষাৎকারের নিরিখে একটা বিষয় স্পষ্ট বলা যায়, এখনও পর্যন্ত যুক্তি তৈরি করতে গিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছেন ইয়েচুরিরা। অন্তত সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের ক্ষোভ সেই বিষয়টাই স্পষ্ট করে দিচ্ছে।

সম্পর্কিত পোস্ট