CPIM Westbengal : লড়লে সুফল পাওয়া যায়, প্রমাণ পেয়েই মীনাক্ষীদের মুখ করার দাবি জোরালো সিপিএমে
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ সর্বত্র সবুজ ঝড়ের মাঝে পুরভোটে বামেদের তাহেরপুর (taherpur municipality) দখল ও মৃত আনিসের (Anish khan) ন্যায়বিচার চেয়ে মীনাক্ষী মুখার্জির (Minakhshi Mukherjee) জেল যাত্রার মাঝে অদ্ভুত মিল আছে।
দুটো ঘটনাই বামেদের ( CPIM Westbengal ) প্রতিরোধের গল্প। এই ঘটনাগুলো বুঝিয়ে দিচ্ছে মুখে প্রতিরোধের গল্প শুনিয়ে, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিপ্লব করে বা রাজ্য দফতরে বসে বিবৃতি দিয়ে কোনও লাভ হয়নি, আর হবেও না। ময়দানে নেমে পাল্টা প্রতিরোধ করলে সাফল্য আসতে বাধ্য। তাহেরপুর সেটা করে দেখিয়েছে। আর মীনাক্ষীর নেতৃত্বে আনিসের জন্য প্রবল আন্দোলন দেখে ভয় পেয়েছে তৃণমূল সরকার।
এদিকে সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বে ( CPIM Westbengal ) বয়স্কদের আধিপত্য কোথাও গিয়ে যেন এই মেঠো লড়াইয়ের পথে অন্তরায় তৈরি করছে। বিমান বসু (Biman Basu) মনে আজও লড়াইয়ের জোর রাখলেও বয়স জনিত কারণে মীনাক্ষী, দীপ্সিতা, সৃজন, প্রতিকুর, ময়ুখদের মতো রাস্তায় ঝাঁপিয়ে পড়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়।
একই কথা খাটে সূর্যকান্ত মিশ্র, মানব মুখার্জি, দীপক সরকারদের বেলায়। সুজন চক্রবর্তী, শমীক লাহিড়ীর মতো সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা তুলনায় মধ্য বয়স্ক হলেও তাঁদের লড়াইয়ের কতটা ‘দম’ আছে সেটা নিয়ে সমর্থকদের একাংশই সন্দিহান।
এই অবস্থায় ময়দানে নেমে চোখে চোখ রেখে লড়াইয়ের জন্য সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে একঝাঁক লড়াকু তাজা রক্তের প্রয়োজন বলে মনে করছেন নিচুতলার কর্মীরা। এমনিতেও ভারতীয় রাজনীতির ধারা হল, উপরের নেতা-নেত্রীরা যদি একেবারে মাঠে ময়দানে নেমে মেঠো লড়াইয়ের রাজনীতি করেন, তা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে নিচুতলার কর্মীরাও একই পথে পা বাড়ান। এখনও বহু নিচুতলার সিপিএম কর্মী পাল্টা লড়াইয়ের পথে হাঁটতে চান।
কিন্তু গত ১০ বছরে সূর্যকান্ত মিশ্ররা ময়দানে নেমে লড়াইয়ের একটিও নজির তৈরি করতে পারেননি। সুজন চক্রবর্তী পরিষদীয় দলনেতা থাকার সময় নানান ঘটনায় একাধিক জায়গায় ছুটে গিয়েছেন। কিন্তু লড়ে দাবি আদায়ের একটিও নজির তৈরি করতে পারেননি।
এয়ার টার্বুলেন্স সত্ত্বেও মমতার বিমান বিভ্রাট ঘিরে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠছে
CPIM Westbengal
মহম্মদ সেলিম প্রবল প্রতাপশালী পলিটব্যুরো সদস্য হিসেবে বারে বারে রক্ত গরম করা বক্তব্য রাখলেও ময়দানে নেমে একটিও দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেননি গত এক দশকে। অথচ নিচুতলার বাম কর্মী-সমর্থকরা বলেছেন, প্রতিমুহূর্তে অসংখ্য লড়াই আন্দোলনের সুযোগ এসেছিল দলের সামনে। দল সেই বিষয়গুলিকে চিহ্নিত করে বিবৃতিও জারি করেছে।
কিন্তু ওইটুকুই। মাঠে ময়দানে নেমে কিছু না হওয়ার ফলে একের পর এক সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। নিচুতলার বাম কর্মীরা মার খেতে খেতে একসময় প্রাণে বাঁচতে বিজেপির দিকে ঝুঁকে পড়ে। তার ফলেই লোকসভা ও বিধানসভায় শূন্য হয়েছে দল। কিন্তু বিজেপি ব্যর্থ হওয়ায় নিচুতলার সমর্থকরা ফের বামেদের দিকে ঝুঁকছে। তারা মীনাক্ষী,, সৃজনদের লড়াই দেখে কিছুটা হলেও আস্থা ফিরে পাচ্ছে। এই সুযোগ আর হাতছাড়া করা উচিৎ হবে না।
চলতি মাসের ১৬, ১৭ ও ১৮ তারিখ, এই তিন দিন জুড়ে কলকাতায় সিপিএমের রাজ্য ( CPIM Westbengal ) সম্মেলন। সেখানে দলের রাজ্য কমিটি এবং দল পরিচালক রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী নতুন করে গঠন করা হবে। সেখানে মীনাক্ষী, সৃজন, ময়ুখ, দীপ্সিতা, প্রতিকুরদের জায়গা করে দেওয়ার দাবি ক্রমশ জোরালো হচ্ছে।
সিপিএমের অন্দরে পক্বকেশী বলে পরিচিত সূর্য, বিমান, সেলিম, সুজনদের প্রতি আশাহত হলেও ক্ষোভ নেই দলীয় কর্মীদের। তাঁরা চান এই বয়স্ক নেতাদের একাংশ স্বেচ্ছায় নবীন প্রজন্মকে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে জায়গা ছেড়ে দিক। তবে এই অভিজ্ঞ নেতাদের নির্বাসনে দিতে চাইছেন না কর্মীরা।
বরং তাঁরা চান, অভিজ্ঞ নেতারা অন্তরালে গিয়ে লড়াইয়ের ব্লু প্রিন্ট তৈরি করুন। আর মীনাক্ষীর নেতৃত্বে কমিউনিস্ট সুলভ মনোভাব নিয়ে রাস্তায় ঝাঁপিয়ে পড়ুক দলের যুব বাহিনী। আজও বাম কর্মী-সমর্থকদের বিশ্বাস, মীনাক্ষীর নেতৃত্বে ময়দানের মেঠো লড়াই লড়লে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের ভিত নড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।
আলিমুদ্দিনের কর্তারা নিচুতলার এই ডাক শুনতে পাচ্ছেন তো? শুনতে পেলে ভালো। শুনতে না পেলেও ক্ষতি নেই। রাজ্য সম্মেলনে আগত জেলার প্রতিনিধিরা এবার লড়াইয়ের মনোভাব নিয়েই সম্মেলনস্থলে প্রবেশ করবেন।