যত কাণ্ড উত্তরে, ‘শূন্য’ সিপিএমের জেলা সম্মেলনে প্রবল উত্তেজনা, তৈরি হল নজিরবিহীন ইতিহাস

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ সারা বিশ্বে একমাত্র কমিউনিস্ট পার্টিতেই আন্তঃদলীয় সংগ্রাম স্বীকৃত। ১৯৬৪ সালে তৎকালীন সিপিআইয়ের পার্টি কংগ্রেসের পাল্টা সম্মেলন করেন জ্যোতি বসু, হরকিষেন সিং সুরজিৎ, ইএমএস নাম্বুদিরিপাদরা। যার রেশ ধরে তৈরি হয় সিপিএম।

এরপর নিয়ম করে তিন বছর অন্তর দলীয় সম্মেলন করে আসছে সিপিএম। কোনও কোনও ক্ষেত্রে জেলা সম্মেলনে ভোটাভুটিও হয়। তবে দলীয় নেতৃত্বের মধ্যে বিরোধের জেরে জেলা সম্মেলন মুলতবি করে দিতে হয়নি অতীতে। কিন্তু বুধবার সেটাই হল উত্তর ২৪ পরগনায়। শেষ পর্যন্ত নতুন জেলা কমিটি গঠন প্রক্রিয়া মুলতবি করে দিতে বাধ্য হল আলিমুদ্দিন।

চলতি মাসের ১৬, ১৭ ও ১৮ তারিখ কলকাতায় সিপিএমের রাজ্য সম্মেলন হবে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির সম্মেলন নিয়ে গোড়া থেকেই টেনশনের চাপা স্রোত ব‌ইছিল আলিমুদ্দিনে। সম্ভবত সেই কারণেই সবার শেষে এই জেলায় সম্মেলন করার দিন ঠিক হয়।

Punjab AAP : আপের ঝাড়ুর মুখে পাঞ্জাবে ধুয়ে-মুছে সাফ কংগ্রেসের যাবতীয় আশা

সিপিএমের অন্দরমহলে পরিচিত কথাই হল, উত্তর ২৪ পরগনায় যত নেতা তত গোষ্ঠী! এমনকি দল ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পরেও সেই পরিস্থিতির কোনও বদল হয়নি। এবারের জেলা সম্মেলন শুরু থেকেই বিতর্কে বিদ্ধ হয়ে পড়ে।

প্রবীণ বামপন্থী সঙ্গীত শিল্পী শুভেন্দু মাইতি মঙ্গলবার রাতে ফেসবুক পোস্ট করে জানান, সম্মেলন মঞ্চে গিয়ে তীব্র অপমানিত হয়েছেন। এই ঘটনায় সিটুর রাজ্য সভাপতি সুভাষ মুখার্জির দিকে অভিযোগের আঙুল ওঠে।

জানা গিয়েছে গোটা বিষয়টি ভালোভাবে নেননি সম্মেলনে আগত প্রতিনিধিরা। তাঁরা সম্মেলনস্থলেই সুভাষ মুখার্জির তীব্র সমালোচনা করেন। শেষে বাধ্য হয়ে প্রকাশ্যে ক্ষমা চান সিটুর রাজ্য সভাপতি।

বুধবার ছিল উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমের সম্মেলনের শেষ দিন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হচ্ছে বুঝতে পেরেই প্রবল শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও সম্মেলনে এসেছিলেন গৌতম দেব। বিদায়ী জেলা কমিটির সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্যদের নিয়ে তিনি একাধিকবার বৈঠকেও বসেন বলে খবর। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি বদলায়নি।

সম্মেলনে আগত প্রতিনিধিরা প্রায় প্রত্যেকেই জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে চোখা চোখা বাক্যবাণ ব্যবহার করেন। সম্মেলনস্থলে উপস্থিত সূর্যকান্ত মিশ্ররা বুঝতে পারেন দলের নিচতলায় ক্ষোভ চূড়ান্ত আকার ধারণ করেছে। অনেক আলাপ আলোচনা করে শেষ পর্যন্ত বিদায়ী জেলা সম্পাদক মৃনাল চক্রবর্তী নতুন জেলা কমিটির জন্য অফিশিয়াল প্যানেল পেশ করেন।

শোনা যাচ্ছে, অফিশিয়াল প্যানেলের তালিকা নিচু তলার ক্ষোভের আগুনে ঘৃতাহুতির কাজ করেছে। একাধিক হেভিওয়েট নেতার বিরোধীতা করে পাল্টা নির্বাচনের দাবি জানান প্রতিনিধিরা। প্রায় ৩২ জন সদস্য ভোটাভুটির নাম জমা দেন। শেষ পর্যন্ত ১১ জন প্রতিদ্বন্দিতা থেকে সরে দাঁড়ালেও ২১ জন তখনও ভোটাভুটির দাবিতে অনড় ছিলেন।

পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে নজিরবিহীনভাবে জেলা কমিটি নির্বাচনের সিদ্ধান্ত মুলতবি রেখে দিয়ে সম্মেলন শেষ করে দেয় আলিমুদ্দিনের কর্তারা। স্বাভাবিকভাবেই নিচুতলায় প্রশ্ন উঠছে এরপর কি হবে?

নিশ্চিত কিছু জানা না গেলেও আলিমুদ্দিনের একাংশের বক্তব্য, দলের রাজ্য সম্মেলন শেষ হ‌ওয়ার পর নতুন জেলা কমিটি গঠন করা হতে পারে। কিন্তু জেলার নিচুতলার কর্মীদের যা মনোভাব তাতে তাঁরা আলিমুদ্দিনের চাপিয়ে দেওয়া জেলা কমিটি কতটা মেনে নেবেন তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

সম্পর্কিত পোস্ট