বাম চাপে বিদায় বিপ্লবের? বিধানসভায় সিপিএমই প্রধান চিন্তা বিজেপির
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ ১৯৮৮ সালের ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচন নানান কারণে বেশ আলোচিত। বামেদের পরাস্ত করে সেবার ক্ষমতায় এসেছিল কংগ্রেস। এই নির্বাচনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন অসমের কংগ্রেস নেতা সন্তোষমোহন দেব। বামেরা আজও তাঁকে ‘সন্ত্রাস’ মোহন বলে কটাক্ষ করে থাকে।
কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতায় থাকার সুযোগ নিয়ে সেবার কংগ্রেস ব্যাপক সন্ত্রাস করে ত্রিপুরায় ক্ষমতা দখল করেছিল এমনই অভিযোগ বাম শিবিরের। তবে ৫ বছর পর ১৯৯৩ এর বিধানসভা নির্বাচন হেরে যায় কংগ্রেস। ত্রিপুরার বাম শিবিরের আশা ২০২৩ এর বিধানসভা নির্বাচনে ফের সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে।
২০১৮ এর বিধানসভা নির্বাচনে সবাইকে চমকে দিয়ে বাম সরকারের পতন ঘটিয়ে ক্ষমতায় আসে বিজেপি। সেই সরকারের চার বছর অতিক্রান্ত। এরমধ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে রাজ্যজুড়ে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের অভিযোগ বারবার তুলেছে বামফ্রন্ট।
বেশ কয়েকবার রাজ্যে বড় আকারের বাম-বিজেপি সংঘর্ষ হয়েছে। তবে একটা পর্যায়ে মনে করা হচ্ছিল ভোটের লড়াইয়ে কিছুটা হলেও এগিয়ে শুরু করবে গেরুয়া শিবির। কিন্তু আমজনতার ক্ষোভ বাড়ছে দেখে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে বিপ্লব দেবকে সরিয়ে দিয়ে তারা আদপে নিজেদের পায়ে কুড়ুল মেরেছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত।
সদ্য প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিজেপির অন্দরেও ছিল প্রবল ক্ষোভ। কিন্তু তাঁকে নির্বাচনের ১০ মাস আগে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ায় কার্যত গত চার বছরে সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগকেই বিজেপি মান্যতা দিল বলে মনে করছে সে রাজ্যের সিপিএম নেতারা। এই নিয়ে তলায় তলায় প্রচার শুরু করে দিয়েছে বামেরা।
এদিকে মুখ্যমন্ত্রী পরিবর্তন ঘিরে বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। নতুন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা মোটেও জননেতা নন। দলের উপরেও তাঁর নিয়ন্ত্রণ কার্যত নেই। এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী হলেও তাঁকে বিপ্লব দেবের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা।
এ যেন ২০১৯ এর রিপিট টেলিকাস্ট! অর্জুনের ‘ঘরওয়াপসি’ নিয়ে জল্পনা আরও তীব্র
এর উল্টো দিকে ক্ষমতা হারানোর পরেও গত পাঁচ বছরে বাম শিবির মোটামুটি ঐক্যবদ্ধ হয়ে আছে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের নেতৃত্বেই তারা সংগঠন গুছিয়ে নেওয়ার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের সঙ্গে ত্রিপুরার জনজাতিদের একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। কিন্তু প্রাক্তন সাংসদ জিতেন্দ্র চৌধুরীকে রাজ্য সম্পাদক করে জনজাতি মন ফিরে পাওয়ার প্রক্রিয়াও বেশ ভালোভাবে এগিয়ে নিয়ে চলেছে বামেরা।
গ্রাউন্ড রিয়েলিটি বলছে বাংলার সংবাদমাধ্যমে তৃণমূল যতই দাবি করুক ত্রিপুরার ভোটে তারা এবার ফ্যাক্টর, কিন্তু আদতে ছবিটা তা নয়। জনজাতি তো দূর, রাজধানী আগরতলার বাইরের বাঙালি প্রধান অঞ্চলগুলোতে এখনও পৌঁছাতে পারেনি তৃণমূল। সেখানেও তাদের সংগঠন বিশেষ শক্তিশালী নয় বলেই রাজনৈতিক মহলের ধারণা।
অপরদিকে সুদীপ রায়বর্মন কংগ্রেসে ফিরে যাওয়ায় হাত শিবির বেশ কিছুটা উজ্জীবিত। কিন্তু তারাও এই নির্বাচনে খুব বিশাল ফ্যাক্টর হবে না। তবে আগরতলার পাঁচটি আসনে সুদীপ রায়বর্মনের ব্যক্তিগত ইমেজের উপর ভর করে কংগ্রেস চমক দিতেও পারে। কিন্তু ওইটুকুই।
রাজনৈতিক মহলের মতে প্রদ্যুৎ কিশোর মানিক্য দেববর্মার তিপ্রা মথাকে শেষ পর্যন্ত ‘ম্যানেজ’ করতে না পারলে ২৩ এর নির্বাচনে বাম চাপে বিজেপির ভরাডুবি একপ্রকার নিশ্চিত। তবে গত কয়েক দিনের দ্রুত পরিবর্তিত পটভূমির পর একটা বিষয় পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনে ত্রিপুরায় মোটামুটি দ্বিমুখী লড়াই হতে চলেছে, বিজেপি বনাম বামফ্রন্ট। বাকিদের ভোট কাটাকাটি খুব বেশি ফ্যাক্টর হবে বলে মনে হয় না। তবে জনজাতি প্রধান ১৫ টি আসনে বড় চমক দিতে তিপ্রা মথা।