দলবেঁধে বিজেপিতে যোগ, শুভেন্দু পদ পেলেও অনুগামীরা পাবেন তো?
সহেলী চক্রবর্তী
২১ বছরের সম্পর্ক দাড়ি। একের পর এক পদক্ষেপ। গোপন বৈঠক। অন্তরালে থেকে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য। আর সামনে ঢাল কিছু অনুগামী। এতক্ষণে সবাই বুঝে গেছেন কার কথা বলছি। অবশ্য বুঝে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। তিনি জঙ্গলমহলের বেতাজ বাদশা শুভেন্দু অধিকারী।
শান্তিকুঞ্জে তিনি কতটা শান্ত তা না জানা থাকলেও তাঁর রাজনৈতিক রঙবদলে গোটা রাজ্যে অশান্তির বাতাবরণ তৈরী হয়েছে।
সুনীল মন্ডল, শীলভদ্র দত্ত, জিতেন্দ্র তিওয়ারী, শ্যাম মুখার্জী, কর্ণেল দীপ্তাংশু চৌধুরী সহ আরও অনেকেই সরব সম্মান পাচ্ছেন না বলে। কেউ কেউ তো সম্মান পেলেও অন্ধ ভক্তের মত দাদার পথের পথিক হতে পা বাড়িয়ে রেথেছেন।
এককথায় বড়সড় ধাক্কার মুখে শাসকদল তৃণমূল তা বলার অবকাশ নেই। সম্প্রতি রাজনীতির রঙ্গমঞ্চের অভিনয় বেশ কয়েকটি প্রশ্ন তৈরী করেছে জনমানসে।
http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/tmc-babu-mastar-kabirul-islam-joins-bjp-with-shuvendu-adhikari/
প্রথমত, সম্মান যদি না তারা এতদিন দলে না পেয়ে থাকেন তাহলে আগে সেটা নিয়ে সরব হননি কেন?
দ্বিতীয়ত, ভোটের মুখে সম্মানহানির প্রসঙ্গ তুলে দলত্যাগের মাধ্যমে কী বার্তা দিতে চাইছেন তারা?
তৃতীয়ত, এতদিন যাদের নীতি-আদর্শ-কার্যকলাপ নিয়ে কড়া বিরোধীতা করেছেন আজ তাদের সঙ্গেই মানিয়ে নিতে পারবেন তো?
চতুর্থত, শুভেন্দু অধিকারীর রাজনৈতিক ক্যারিশ্মা প্রশ্নাতীত। দাদার অনুগামী হয়ে বর্তমানে অনেকেই এতদিন যে দলে ছিলেন সেখান থেকে বেরিয়ে পড়ছেন। গেরুয়া শিবিরে যোগ দেবেন। তারপরের ভবিষ্যৎ টা ভেবেছেন তো?
পঞ্চমত, আগে ছিল দিদি। এখন হয়েছে দাদা। শুভেন্দুর ডাকে আপনারা আসছেন। আপনাদের ডাকে কারা আসবে?
ষষ্ঠত, ২০২১ এর নির্বাচনে প্রার্থীপদ অনেক দূরের কথা। আপনারা ভারতীয় জনতা পার্টির সদস্য হয়ে যোগ্য সম্মান পাবেন তো?
সপ্তম, গেরুয়া শিবির শুভেন্দুকে রেড কার্পেটে বরণ করে নেবে তার রাজনৈতিক দক্ষতায়। কিন্ত আপনাদের দক্ষতা বা জনভিত্তির মার্কশিটের নম্বর কত?
অষ্টমত, যদি শুভেন্দু নতুন করে দল তৈরী করতেন সেখানে আপনারা পদ পেতেন। তাই বলে এতদিনের বিরোধীদের হঠাৎ আত্মীয় ভেবে ফেললেই মিটবে তো সমস্যা?
নবম, হয়ত ভোটের প্রাকমুহুর্তে অনুগামীরা ঠাঁই পেলেও ভোট মিটলেই তাদের ছেঁটে ফেলবে না তো বিজেপি?
দশম, যদি তা হয়, তাহলে আবার পুরোনো গড়ে ফিরতে পারবেন তো? ফিরলেও সম্মানটা আর থাকবে তো?
http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/central-govt-provides-z-category-security-to-suvendu-adhikari/
এমনিতেই অনুগামী শিবির দ্বিধাবিভক্ত হতে শুরু করেছে। অনেকেই জল মেপে নিতে চাইছেন। কেউ কেউ বলছেন, এখন তো পদে আছি, তখন যদি পদ না পাই! সত্যিই কী এমন রাজনীতির সাক্ষী হতে চেয়েছিল আমজনতা?
ইতিমধ্যে কালনার বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুন্ডু শুভেন্দুর সঙ্গে যাচ্ছে না তা জানিয়ে দিয়েছেন। শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক ও অভিষেকের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি মত বদলে ফেলেন।
রাজনৈতিক মহলের একাংশ যে প্রশ্নগুলি তুলেছেন, নিঃসন্দেহে সেগুলি যুক্তিসঙ্গত। কারণ বিজেপি দলটি পরিচালনা করে আরএসএস। এটা বোধহয় ভুলে গেছেন দাদার অনুগামীরা। আর সর্বভারতীয় একটি দলে ঠাঁই পেয়ে সেখানে জায়গা তৈরী করে নেওয়া এতটাও সহজ নয়।
সবথেকে বড় উদাহরণ তৃণমূলের বর্ষীয়ান বিধায়ক তুষারকান্তি ভট্টাচার্য। বিজেপিতে গিয়েও তিনি ফিরে আসেন ফের তৃণমূলে।
তৃণমূলের একাংশ ইতিমধ্যেই দাদার অনুগামীদের মীরজাফর বলে তকমা দিয়ে দিয়েছেন। লোকসভা নির্বাচনের পর অনেকেই ঘর ওয়াপসি হয়েছেন তৃণমূলে। তাতে কেউ আপত্তি না জানালেও ভোটের মুখে এই পালাবদলের নাটক আজীবন মনে রাখবেন দলের প্রত্যেকটি নেতা-কর্মী-সদস্যরা। যারা দলটিকে প্রাণ দিয়ে ভালবাসেন।
http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/shilvodro-dutta-resignnation-from-trinomul-cogress/
তবে উল্লেখযোগ্য বিষয়, শুভেন্দু অধিকারীর এই রাজনৈতিক কার্যক্রম নিয়ে মুখ খোলেননি শুভেন্দুর বাবা ও তৃণমূলের বর্ষীয়ান সাংসদ শিশির অধিকারী এবং ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী। বংশগত ভাবে এতদিন অধিকারী পরিবার যে যে পদে আসীন থেকে ক্ষমতা ভোগ করছিলেন তাতে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন দলেরই একাংশ।
ওয়াকিবহল মহলের মতে, শুভেন্দুকে নিয়ে প্রশ্ন করবেন আমজনতাই। কারণ ভোটের আগে শুভেন্দুর এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠছেই। সৌগত রায়ের বক্তব্যেই স্পষ্ট শুভেন্দু উপমুখ্যমন্ত্রী পদটি চেয়েছিলেন। হয়ত বা ২০২৬ এ মুখ্যমন্ত্রীর পদটিও।
দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়ত সেখানেই। আর এই সবকিছুর বহিঃপ্রকাশ না ঘটিয়ে শিখন্ডী খাড়া করলেন প্রশান্ত কিশোরকে। সব প্রশ্নের উত্তর ক্রমশ প্রকাশ্য…..