দিল্লি দাঙ্গা : বিজেপির তিন নেতার বিরুদ্ধে এফআইআর-এর সিদ্ধান্ত কালই নিতে হবে পুলিশকে, নির্দেশ দিল্লি হাইকোর্টের
বুধবার এমন নির্দেশই দিল দিল্লি হাইকোর্ট।দিল্লিতে দাঙ্গা হওয়ার পিছনে বিজেপি নেতাদের বিদ্বেষমূলক বক্তৃতা কাজ করেছে বলে অভিযোগ।
দ্য কোয়ারি ডেস্ক : বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর, বিজেপি সাংসদ প্রবেশ বার্মা সহ বিদ্বেষমূলক বক্তৃতা যারা দিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর করার সিদ্ধান্ত পুলিশকে আগামীকালের মধ্যেই নিতে হবে।
বুধবার এমন নির্দেশই দিল দিল্লি হাইকোর্ট।দিল্লিতে দাঙ্গা হও্য়ার পিছনে বিজেপি নেতাদের বিদ্বেষমূলক বক্তৃতা কাজ করেছে বলে অভিযোগ।
এর বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন জানান নাগরিক অধিকার কর্মী হর্ষ মান্দার ও ফারহা নাকভি।
তাঁরা তাঁদের আবেদনে বলেন, বিজেপির ওই তিন নেতার বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের ফলে দাঙ্গা হয়েছে এবং ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এই তিন নেতার বিরুদ্ধে এফআইআর করার দাবি জানান তাঁরা। পাশাপাশি, দাঙ্গার তদন্তে স্পেশাল ইনভেস্টিগেটিং টিম গঠন এবং দাঙ্গায় নিহত ও আহতদের জন্যও তাঁরা আবেদন জানান।
লক্ষ্যণীয়, এদিন আদালতে দিল্লির এক পুলিশ অফিসারের সমালোচনা করেন বিচারপতি এস মুরলিধর।
কারণ, ওই অফিসার বলেছিলেন যে, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করছেন তাঁদের কপিল মিশ্র হুমকি দিচ্ছেন এমন ভিডিও তিনি দেখেননি।
আদালত কক্ষে সেই ভিডিও দেখানোও হয়। এছাড়াও এদিন অনুরাগ ঠাকুর, প্রবেশ ভার্মা এবং বিধায়ক অভয় বার্মার বক্তব্যের ভিডিও ফুটেজও দেখানো হয় আদালতে।
ওই ফুটেজে দেখা যায়, ‘গোলি মারো গদ্দারকো’ শ্লোগানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন অনুরাগ ঠাকুর ও অভয় ভার্মা।
অন্যদিকে, শাহিনবাগের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদীদের ‘ধর্ষক ও খুনি’ বলে মন্তব্য করছেন প্রবেশ বার্মা।
সূত্রের খবর, এদিন শুনানি চলাকালীন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা এবং বিচারপতি মুরলিধরের মধ্যে তীব্র বিতর্ক হয়।
মেহতা জানান, তখন পুলিশ কিছু করতে পারেনি, কারণ পরিস্থিতি খুব খারাপ ছিল। যথোপযুক্ত সময়ে এফআইআর করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বিচারপতি মুরলিধর তখন প্রশ্ন করেন, যথোপযুক্ত সময়টা কখন? শহর পুড়ে গেলে তারপর? পাল্টা উত্তর দেন মেহতাও।
তিনি দাবি করেন, শহর পুড়ছে না। শহরের কিছুটা এলাকা পুড়ছে। আর কত জীবন হারাবে, আর কত সম্পত্তি নষ্ট হবে, প্রশ্ন করেন বিচারপতি মুরলিধর।
মেহতা তাঁকে রাগ না করার জন্য অনুরোধ করেন। এটা রাগ নয়, এটা যন্ত্রণা বলে উল্লেখ করেন বিচারপতি।
আদালত এদিন পুলিশের কাছে জানতে চায়, এফআইআর নথিভুক্ত করতে দেরি কেন করা হচ্ছে।
আদালত বলে, এর ফলে ভুল বার্তা যাবে এবং বিদ্বেষমূলক উত্তেজক ভাষা যারা ব্যবহার করছে, তাঁরা থামবে না।
আদালত এও জানায় যে, কেবলঅমাত্র বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে এফআইআর করার নির্দেশই নয়, অন্য যেকোনও নেতা বিদ্বেষমূলক বক্তব্য রাখলে তার ক্ষেত্রেও এই নির্দেশ কার্যকর হবে।
তুষার মেহতা দাবি করেন, আবেদনকারীরা তিনজনের বক্তব্য নিয়ে অভিযোগ জানালেও এমন আরও অনেক বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের ভিডিও আছে। সেগুলিও দেখা হোক। তখন বিচারপতি মুরলিধর বলেন, এই তিনজনই নয়, আরও আছে! তার মানে পুলিশ শুধু এদের ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়নি, আপনার বক্তব্য অনুযায়ী আরও ভিডিও ফুটেজ আছে, সেক্ষেত্রেও ব্যর্থ হয়েছে!
অন্যদিকে, আবেদনকারীদের আইনজীবী গঞ্জালভেস বলেন, ভিডিও ফুটেজে থাকা তাঁদের বক্তব্যের কথা ওই তিন বিজেপি নেতা অস্বীকার করেননি।
উলটে তাঁরা বিদ্বেষমূলক ভাষণ দিয়ে গর্বিত বলেও জানিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ হল, ওই তিন নেতাকে গ্রেফতার।
দাঙ্গায় আক্রমণকারীরা বিজেপির লোকজন এবং তাদের আক্রমণের সময়ে পুলিশ নীরব দর্শক ছিল বলেও অভিযোগ করেন গঞ্জালভেস।
আদালত এদিন পুলিশকে নির্দেশ দেয়, বৃহস্পতিবারের মধ্যে অনুরাগ ঠাকুর, প্রবেশ বার্মা এবং কপিল শর্মার বিরুদ্ধে এফআইআর করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।