রাজধানীতে বাড়ছে মৃত্যু মিছিল, জারি করা হোক কার্ফু, শাহকে চিঠি কেজরিওয়ালের

দিল্লির হিংসার ঘটনায় ক্রমবর্ধমান বাড়তে থাকা হিংসার ঘটনায় বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ দিল্লি পুলিশ। এই মর্মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি দিয়ে সেনা নামানোর পক্ষে সওয়াল করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ রাজধানীতে হিংসার ঘটনায় ক্রমশ বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। মঙ্গলবার যেখানে মৃতের সংখ্যা ছিল ১৩, বুধবার সকালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ তে। একমাসের জন্য দিল্লিতে বেশ কিছু জায়গায় জারি করা হল ১৪৪ ধারা। জায়গায় জায়গায় চলছে সিআরপিএফের ফ্ল্যাগমার্চ।

মৃত্যুসংখ্যা লাফিয়ে বাড়তে থাকলেও, এখনও দিল্লিতে হিংসা অব্যাহত। এ দিন ভোর সাড়ে ৪টে থেকে নাগাদ নতুন করে পাথর ছোড়াছুড়ি শুরু হয় উত্তর-পূর্বের ব্রহ্মপুরী-মুস্তাফাবাদ এলাকায়। গোকুলপুরীতে একটি পুরনো জিনিসপত্রের দোকানেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। দমকলের একটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

দিল্লির হিংসার ঘটনায় ক্রমবর্ধমান বাড়তে থাকা হিংসার ঘটনায় বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ দিল্লি পুলিশ। এই মর্মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি দিয়ে সেনা নামানোর পক্ষে সওয়াল করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।

আরও পড়ুনঃ দেশের প্রতিটি প্রান্তে প্রাকৃতিক গ্যাস পৌঁছে দেবে মার্কিন সংস্থা

বুধবার সকালে এই বিষয়ে টুইট করে তিনি জানিয়েছেন পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। আমজনতার আত্মবিশ্বাস ফেরানো সম্ভব হচ্ছে না। অবিলম্বে উচিৎ ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা গুলিতে কার্ফু জারি করা।

ক্রমশ মৃত্যুপুরীতে পরিণত হচ্ছে দিল্লি। অথচ কার্যত নিরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছে প্রশাসন। নেওয়া হচ্ছে না উপযুক্ত কোনো ব্যবস্থা। এই অভিযোগে মঙ্গলবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বাসভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান আমজনতা।

বিক্ষোভ থেকেই দাবি ওঠে উত্তর-পূর্ব দিল্লির যে যে এলাকায় হিংসা ছড়িয়েছে, অবিলম্বে সেখানে যেতে হবে কেজরিওয়ালকে। স্থানীয় বিধায়কদের শান্তি মিছিল বার করার নির্দেশ দিতে হবে, যাতে যে দাঙ্গা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে রাশ টানা যায়।

জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র সংগঠন এবং জামিয়া কো-অর্ডিনেশনের তরফে এই ঘেরাও কর্মসূচীর ডাক দেওয়া হয়। ভোররাত পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর  বাড়ির সামনে এই বিক্ষোভ চলে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশাল পুলিশ বাহিনী নামানো হয়। কথা বলে বিক্ষোভকারীদের হঠানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন পুলিশকর্মীরা। অবশেষে জলকামান ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনা হয়।

অন্যদিকে মঙ্গলবার রাতেই দিল্লির ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাগুলি পরিদর্শনে যান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। রাজধানীর আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে মঙ্গলবার রাতেই তৃতীয়বার দিল্লি পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন অমিত শাহ। তার পরেই পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে প্রথমে সীলামপুরে যান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। পরে জাফরাবাদ, মৌজপুর-সহ উত্তর-পূর্ব দিল্লির একাধিক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যান তিনি। সূত্রের খবর বুধবার দুপুরে মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা কমিটিকে সবিস্তার রিপোর্ট দেবেন তিনি।

এদিকে মঙ্গলবার রাত পৌনে দুটো পর্যন্ত দিল্লির হিংসা মামলার শুনানি হয় হাইকোর্টে। বিচারপতি এস মুরলিধরের বাড়িতেই চলে শুনানি। দিল্লি পুলিশকে বিচারপতি এস মুরলিধর ও বিচারপতি এ জে ভমম্বানী বেঞ্চের নির্দেশ দেন, অবিলম্বে মুস্তাফাবাদের ছোট হাসপাতাল থেকে দিল্লি হিংসায় জখমদের বড় হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ হাউজ ফর অল প্রকল্পে শাসকদলের দুর্নীতি, উঠে এল ১৩ জন নেতা-নেত্রীর নাম

শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন দিল্লি পুলিশের একাধিক পদস্থ আধিকারিক। উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকদের একটি ফোরাম।তাদের দাবি ছিল, মুস্তাফাবাদে আহতদের চিকিৎসার জন্য যেতে ইচ্ছুক মেডিক্যাল টিম ও আহতদের নিয়ে যাওয়া অ্যাম্বুল্যান্সকে যেন পুলিশি নিরাপত্ত দেওয়া হয়।

আদালতের নির্দেশের উপর ভরসা না করে পুলিশকে পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট। বিজেপি নেতা অনুরাগ ঠাকুর, পারভেশ সিং, কপিল মিশ্র সহ রাজধানীতে হিংসার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কি পদক্ষেপ করা হয়েছে? তা জানাতে এদিন ১২.৩০ পর্যন্ত দিল্লি পুলিশকে সময় দিয়েছে আদালত।হাইকোর্টে রিপোর্ট দিতে হবে দিল্লি পুলিশকে।

প্রসঙ্গত, রাজধানীতে উত্তেজনাময় পরিস্থিতিতে উত্তর-পূর্ব দিল্লির কিছু এলাকায় জারি করা হয় শুট অ্যাট সাইট’-এর নির্দেশ। পরিস্থিতি বুঝে ওই এলাকায় বুধবার দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণীর বোর্ড পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন। বন্ধ থাকবে এলাকার সরকারি এবং বেসরকারি স্কুলও।

সম্পর্কিত পোস্ট