দিল্লি হিংসা : এখনই বিতর্ক এড়ালো সরকার, বুধবার পর্যন্ত মুলতুবি সংসদ

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ দিল্লি হিংসা নিয়ে বিতর্ক এড়িয়ে গেল সরকার। দিল্লির উত্তরপূর্বে সাম্প্রদায়িক হিংসা্য় এখনও পর্যন্ত ৫৩ জনের মৃত্যু এবং ২০০-র বেশি মানুষ গুরুতর জখম হয়।

হিংসার এই ঘটনা নিয়ে বিতর্কের দাবিতে গত সোমবার অধিবেশন শুরুর সময় থেকেই উত্তাল হয় সংসদ। এরপর প্রতিদিনই মুলতুবি হয়ে যায় সংসদের উভয় কক্ষ। তবুও এখনই এনিয়ে বিতর্কে যেতে রাজি নয় সরকার। 

সরকার জানায়, হোলির পর দিল্লি হিংসা নিয়ে বিতর্ক হবে। অন্যদিকে, এখনই বিতর্কের দাবিতে অনড় বিরোধীরা লাগাতার বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। দিল্লি হিংসার প্রতিবাদে প্ল্যাকার্ড, পোস্টার নিয়ে লোকসভায় বিরোধী সাংসদরা শ্লোগানও তোলে।

আরও পড়ুনঃ দেশের অর্থনীতিতে ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলতে চলেছে করোনাঃ মনমোহন সিং

এনিয়ে তীব্র আপত্তি জানান লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা। শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে চলতি অধিবেশন থেকে বরখাস্ত করা হয় কংগ্রেসের সাত সাংসদকে। ওই সাংসদরা অধ্যক্ষের টেবিল থেকে কাগজ ছিনিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ।

অন্যদিকে,  কংগ্রেসের অভিযোগ, দিল্লি দাঙ্গা নিয়ে বিতর্কের ক্ষেত্রে বিরোধী কন্ঠস্বরকে দূর্বল করাই লক্ষ্য। তাই ওই সাত সাংসদকে সরিয়ে দেওয়ার স্বৈরতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যদিও তাতেও দমেনি বিরোধীদের বিক্ষোভ।

শুক্রবারও বিরোধীদের প্রবল হট্টগোলের পর মুলতুবি হয়ে যায় সংসদ। আগামী বুধবার পর্যন্ত সংসদের দুই কক্ষ রাজ্যসভা ও লোকসভার অধিবেশন মুলতুবি করা হয়।

বিজেপির দাবি, লোকসভার চলতি অধিবেশন থেকে বরখাস্তই যথেষ্ট নয়, সাত কংগ্রেস সাংসদকে সম্পূর্ণ মেয়াদ থেকেই বরখাস্ত করতে হবে।

দলের বক্তব্য, ৭০ বছরের ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটেনি। অভিযুক্ত কংগ্রেস সাংসদরা সংসদের সম্মানহানি করেছেন। তাদের পুরো মেয়াদেই বরখাস্ত করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ ২০ মার্চ নির্ভয়া দোষীদের সাজা ঘোষণা করল আদালত

অন্যদিকে, কংগ্রেসের দাবি, দিল্লি হিংসা নিয়ে বিতর্কে বিরোধী কন্ঠস্বরকে দূর্বল করার লক্ষ্যে সরকার এই স্বৈরতান্ত্রিক পদক্ষেপ নিয়েছে। এদিন সংসদ ভবনের বাইরে বিক্ষোভ দেখায় কংগ্রেস। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পদত্যাগের দাবিতে  বিক্ষোভ দেখান রাহুল গান্ধি সহ অন্যান্য কংগ্রেস নেতারা।

কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, দিল্লি হিংসার ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বরখাস্ত কংগ্রেস সাংসদরা। দিল্লি হিংসা নিয়ে আলোচনার দাবি জানিয়েছিলেন।

দিল্লি হিংসার ঘটনা ৫৩ জনের জীবন কেড়ে নেওয়ার পাশাপাশি গুরুতর জখম করেছে কয়েক’শ মানুষকে। মূলত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ই আক্রমণের লক্ষ্য ছিল। বহু মানুষের বাড়িঘর, সম্পদ নষ্ট হয়েছে। সর্বস্বান্ত হয়েছেন তাঁরা।

দিল্লির উত্তরপূর্বে সাম্প্রদায়িক হিংসায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। বিজেপি নেতাদের ঘৃণ্য বক্তব্যকে দায়ি  করেছেন বহু মানুষ। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ওই নেতাদের বক্তব্যের ফুটেজ দেখা গেলেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি দিল্লি পুলিশ। অভিযুক্ত নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে আদালতের দ্বারস্থ হন বেশ কিছু মানুষ।

দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি মুরলিধর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এফআইআর-এর নির্দেশ দিলে রাতারাতি তাঁকে বদলি করা হয়। পরবর্তী বিচারপতি একমাসের বেশি সময় এই মামলার উপর স্থগিতাদেশ জারি করেন। তখন দেশের সর্বোচ্চ আদালতে আবেদন করেন আবেদনকারীরা।

আরও পড়ুনঃ দিল্লি হিংসা মামলায় দীর্ঘদিনের স্থগিতাদেশ ন্যায়বিচারহীন, পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের

ফের শুনানির জন্য দিল্লি হাইকোর্টকে অনুরোধ জানায় সুপ্রিম কোর্ট। এদিন সেই মামলার শুনানি ছিল দিল্লি হাইকোর্টে। দু’পক্ষের মতামত শোনার পর পরবর্তী শুনানির দিন ১২ মার্চ ঘোষণা করে আদালত। ফলে আদালত বা সংসদ কোথাও জরুরি ভিত্তিতে দিল্লি হিংসার প্রসঙ্গ উঠল না।

অভিযোগ, শান্তি স্থাপনের দিকে জোর দিয়ে হিংসার ঘটনা্র প্রকৃত তথ্যকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। যে কারণে অভিযুক্তদের আড়াল করতে আদালতেও সময় চাইছে, আবার সংসদেও চাইছে। মানুষ মরুক, অচল হোক সংসদ, তবুও দিল্লি হিংসা নিয়ে বিতর্কে গেল না সরকার। এড়িয়ে গেল বিতর্ক। 

সম্পর্কিত পোস্ট