পুরনো তে অনাস্থা ? বিপুল সাফল্য সত্বেও তৃণমূলের দল ভাঙানো নিয়ে একগুচ্ছ প্রশ্ন
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ দীর্ঘ বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিরোধী দল ভাঙিয়ে চলেছে তৃণমূল। মাঝেমধ্যেই দলের শীর্ষ নেতৃত্ব দরজা বন্ধ করার কথা বললেও বাস্তবে তা হয়নি। বরং একুশের বিধানসভা নির্বাচনে অভাবনীয় সাফল্যের পরেও একই ধারা বজায় রেখেছে তারা। তবে কী পুরনো কর্মীদের ওপর ঠিক ভরসা করতে পারছে না তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব?
২০১১ সালে বামফ্রন্টকে হারিয়ে প্রথম ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। সেই সময় অন্যদলকে ভাঙানোর পিছনে তাও একটা যুক্তি ছিল। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলে থাকেন ১১ সালে তৃণমূলের পক্ষে নয়, দীর্ঘ বাম জামানার বিপক্ষে ভোট দিয়েছে মানুষ। সেই সময় রাজ্যের সর্বত্র তৃণমূলের সংগঠন শক্তিশালী ছিল না। অনেক জায়গাতেই তারা ভোটে জিতে গেলেও নেতৃত্ব দেওয়ার মতো নেতা ছিল না।
এই অবস্থায় শাসক দল হিসেবে সংগঠন গড়ে তোলার পাশাপাশি অভিজ্ঞতা সঞ্চারের উদ্দেশ্যে মূলত কংগ্রেস, কখনও কখনও বাম দলগুলো থেকেও বিধায়ক, প্রাক্তন বিধায়ক, প্রাক্তন সাংসদদের নিজেদের দিকে নিয়ে এসেছে তারা। পরে তাঁরা অনেকেই তৃণমূলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা হয়ে উঠেছেন।
এছাড়া সেই সময় বিরোধীদের দুর্বল করাটাও দল ভাঙানোর একটা কৌশল হয়ে থাকতে পারে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে। যদিও ১৯ এর লোকসভা ভোটের পর তৃণমূল নিজেই দল ভাঙানোর সম্মুখীন হয়। তাদের দল থেকে একে একে নেতা মন্ত্রী বিধায়করা বিজেপিতে যোগ দিতে শুরু করে।
বিনিয়োগ করতে চলেছে আদানি গোষ্ঠী, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলছে সিলিকন ভ্যালি তৈরির কাজ
শুভেন্দু অধিকারীর দলবদলের পর অনেকেই মনে করেছিলেন তৃণমূলের পতন অনিবার্য। সেই সময় মাঝেমধ্যেই বিজেপি নেতা মুকুল রায় বলতেন, চাইলেই তাঁরা সরকার ফেলে দিতে পারেন। কারণ বিপুল সংখ্যক তৃণমূল বিধায়ক যোগাযোগ রেখে চলেছেন। যদিও তা শেষ পর্যন্ত হয়নি। বরং একুশের বিধানসভা নির্বাচনে রেকর্ড আসন জিতে টানা তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতা ফিরল তৃণমূল।
গতবছরের বিধানসভা নির্বাচনেই প্রমাণ হয়ে যায় একেবারে গ্রাম স্তর থেকে উপর তলা পর্যন্ত তৃণমূলের সংগঠন ঠিক কতটা মজবুত। সেখানে ব্যক্তির ভূমিকা থাকলেও সেটা সব নয়। কিন্তু যে নেতা কর্মীরা বিজেপির ব্যাপক প্রচারের মুখেও দলের সঙ্গে থেকে এই জয় এনে দিল কোথাও যেন তাদেরকে ততটা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। বদলে বিজেপিতে চলে যাওয়া নেতাদের আবার ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। অথচ এরাই দল ছেড়ে শুধু তৃণমূলের বিরুদ্ধে নয়, খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে তখন কিনা বলেছে।
সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার বিধানসভা নির্বাচনের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার বলেছেন বিজেপিতে চলে যাওয়া নেতাদের মধ্যে বাছবিচার করে বড়জোর দু-চারজনকে দলে ফিরিয়ে নেবেন।
বাকিদের জন্য তৃণমূলের দরজা বরাবরের মতো বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে কোনও বাছবিচার নয়, যে নেতা দুদিন আগেও তৃণমূল কর্মীদের ওপর হামলা করার অভিযোগে অভিযুক্ত তাকেও দলে নিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
এতে তৃণমূলের পুরনো কর্মীরা অনেকেই মনঃক্ষুণ্ণ। কেউ আবার কোণঠাসা হয়ে পড়ার আতঙ্কে ভুগছেন। এখানেই প্রশ্ন, পুরনো কর্মীদের গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হলেও কেন তাদেরকে পিছনে ঠেলে দিয়ে বিজেপিতে চলে যাওয়া নেতাদের ফিরিয়ে এনেয় মাথায় বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে?
সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তখন যদি পুরনো কর্মীরা অবহেলিত বোধ করে, যদি দলীয় কাজ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেয় তবে তা তৃণমূলের জন্য মোটেও ভাল হবে না ২১ পঞ্চায়েত ও ১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের পুরনো কর্মীদের একটা বড় অংশ বাড়িতে বসে গিয়েছিলেন। তার ফল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে। এবার ফের সেই একই অবস্থার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে তৃণমূলেরই একাংশের মধ্যে।