কাকে ভোট দেবেন শুভেন্দুর বাবা-ভাই? রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে দিব্যেন্দুর কথায় জল্পনা তুঙ্গে
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ পূর্ব মেদিনীপুরে দুটি লোকসভা কেন্দ্র আছে। কাঁথি ও তমলুক। ২০১৯ এর ভোটে দুটিতেই জয়ী হয় তৃণমূল কংগ্রেস। আরও ভালো করে বললে দুটো কেন্দ্রই অধিকারী পরিবারের দখলে যায়। কিন্তু শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যাওয়ার পর অধিকারী পরিবারের সঙ্গে বাংলার শাসক দলের দূরত্ব চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।
শুভেন্দুর বাবা তথা কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারী বেশ কয়েকবার সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বকে চূড়ান্ত আক্রমণ করেন। তুলনায় তমলুকের সংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী অনেকটাই নরম ছিলেন। তিনি প্রকাশ্যে দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ার কথা স্বীকার করে নিলেও সরাসরি তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কোনও মন্তব্য করেননি।
তবে বিধানসভা নির্বাচনের আগে অমিত শাহর মঞ্চে উঠে বক্তব্য রাখার অভিযোগে শিশিরের সাংসদ পথ খারিজের জন্য লোকসভার অধ্যক্ষের কাছে দরবার করেছে তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অধিকারী পরিবারের এই দুই সদস্য কাকে ভোট দেবেন তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অধিকারী পরিবারের তিন সদস্য ভোট দিতে পারবেন। তার মধ্যে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা হওয়ার সুবাদে ধরেই নেওয়া যায় শুভেন্দু অধিকারী বিজেপির ঘোষিত প্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মুকে ভোট দেবেন। তবে তাঁর বাবা ও ভাইয়ের অবস্থান নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। উল্লেখ্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিধায়ক বা সাংসদদের উপর হুইপ জারি করা চলে না। তাছাড়া গোপন ব্যালটে ভোট হবে। তাই কে কাকে ভোট দেবেন তা নিশ্চিত ভাবে জানতে পারার সুযোগ নেই।
মমতা দিদির পাশেই থাকলেন কেজরিওয়াল, যশবন্তকে সমর্থন আপের
এই অবস্থায় তৃণমূল কংগ্রেস ঠিক করেছে তাদের বিধায়কদের পাশাপাশি লোকসভা ও রাজ্যসভার সাংসদরা পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভাতেই ভোট দেবে। বিষয়টি ইতিমধ্যেই সংসদের সচিবালয় জানিয়েও দেওয়া হয়েছে। তবে তমলুকের সংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী জানিয়েছেন তিনি দিল্লিতে গিয়ে ভোট দেবেন।
এটি যদি তৃণমূলের দলীয় অবস্থানের উল্টো সিদ্ধান্ত হয়, তবে তাঁর পরের মন্তব্যটি তাৎপর্যপূর্ণ। সাংসদ থেকেও তৃণমূলের কাছে অপাংতেও দিব্যেন্দু জানিয়েছেন তিনি বিরোধী শিবিরের প্রার্থী যশবন্ত সিনাকে ভোট দেবেন!
শিশির অধিকারীর ভালোই বয়স হয়েছে। বর্তমানে খুব একটা বাড়ির বাইরে বের হন না। তাই চিকিৎসকরা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য তাঁকে কলকাতা বা দিল্লি যাওয়ার অনুমতি দেবেন কিনা সেটা একটা বিষয়। তবে দিব্যেন্দু জানিয়েছেন চিকিৎসকরা অনুমতি দিলে তিনি বাবাকে দিল্লি নিয়ে যাবেন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্য এবং শিশিরও যশবন্ত সিনাকে ভোট দেবেন বলে দাবি করেন দিব্যেন্দু। যদিও তিনি কাকে সমর্থন করবেন এই প্রশ্নে শিশির অধিকারী নিজে নির্দিষ্ট কোনও উত্তর দেননি।
দিব্যেন্দু অধিকারীর এই মন্তব্যের পর জল্পনা শুরু হয়েছে পরিস্থিতি বুঝে তবে কী তৃণমূলের সঙ্গে সমস্যা মিটিয়ে ফেলতে চাইছে অধিকারী পরিবারের একাংশ! দিব্যেন্দু কী বুঝতে পেরেছেন দাদার পথে চললে ২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে তাঁর জেতার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম? এসব প্রশ্নই এখন ঘোরাফেরা করছে রাজনৈতিক মহলে। যদিও এর উত্তর এত সহজে জানা সম্ভব নয়।
তবে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, ওরা যদি সত্যিই আমাদের পক্ষে থাকেন তবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিধানসভায় এসে ভোট দিন। পাল্টা দিব্যেন্দুর দাবি, তৃণমূলের পক্ষ থেকে তাঁদেরকে চিঠি লিখে বা সংসদীয় দলের পক্ষ থেকে বিধানসভায় ভোট দেওয়ার জন্য কোনও নির্দেশ বা অনুরোধ জানানো হয়নি।
এই সংক্রান্ত আলোচনায় একটা বিষয় স্পষ্ট, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর পথে চলার বিষয়ে কিছুটা হলেও দ্বিধাবোধ কাজ করছে শান্তিকুঞ্জের বাকি বাসিন্দাদের মধ্যে। তবে কেউ কেউ বলছেন এসবই দলত্যাগ বিরোধী আইন বাঁচিয়ে সাংসদ পদ টিকিয়ে রাখার চেষ্টা!